আমাদের অধিকার রক্ষা করা হয়নি

নতুন ঘরোয়া ফুটবল মৌসুম শুরু নিয়ে জল্পনা কল্পনার অবসান হয়েছে গতকাল। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ফেডারেশন কাপ দিয়ে নতুন মৌসুম মাঠে গড়াবে। গত মৌসুমে ক্লাবের সঙ্গে খেলোয়াড়দের যে চুক্তি ছিল, নতুন মৌসুমে সেটির ২৫ শতাংশ পাবেন খেলোয়াড়েরা। তবে খেলোয়াড়েরা প্রস্তাব ছিল ৫০ শতাংশ টাকা। দাবি পূরণ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ ফুটবলাররা। এই নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় দল ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের নিয়মিত গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম—

প্রশ্ন :

নতুন মৌসুমের জন্য বাতিল হয়ে যাওয়া মৌসুমের ৫০ শতাংশ পারিশ্রমিকের প্রস্তাব দিয়েছিলেন আপনারা। শেষ পর্যন্ত ক্লাবগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পেশাদার লিগ কমিটি ২৫ শতাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কীভাবে দেখছেন এটাকে?

আশরাফুল ইসলাম: খেলোয়াড়দের জন্য সিদ্ধান্তটি ভালো হলো না। খুবই বাজে ও একপেশে সিদ্ধান্ত হয়েছে। একবার ভাবুন, যে খেলোয়াড়টির চুক্তি দুই লাখ টাকার, সে সারা বছর খেলে এখন কী পাবে? পারিশ্রমিকের বিষয়টি তো শুধু জাতীয় দলে খেলা বা বড় ক্লাবের খেলোয়াড়দের নয়। এখানে ১৩টি ক্লাবের খেলোয়াড়দের কথা ভাবতে হবে। ২৫ শতাংশের সিদ্ধান্তে খেলোয়াড়দের কথা ভাবা হয়েছে বলে মনে হয় না। আমাদের অধিকার রক্ষা করা হয়নি।

প্রশ্ন :

সর্ব নিম্ন কত শতাংশ হলে সন্তুষ্ট হতে পারতেন?

আশরাফুল: বর্তমান পরিস্থিতির কথা ভেবেই লিগ কমিটির মাধ্যমে আমরা ক্লাবগুলোকে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আমরা সব সময় বলে এসেছি সমঝোতার মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। যাতে ক্লাবও বাঁচে, আমরাও বাঁচি। সে হিসেবে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সেটা শেষ পর্যন্ত নেমে এল ২৫ শতাংশে। অন্তত ৪৫ শতাংশ হলেও সন্তুষ্ট হতে পারতাম।

সতীর্থ গোলরক্ষকদের সঙ্গে আশরাফুল ইসলাম
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

আগামী মৌসুমটা তাহলে হাসিমুখে শুরু করতে পারছেন না আপনারা...

আশরাফুল: কীভাবে! সবারই পরিবার আছে। আমরা খেলেই পরিবার চালাই। আর কিছুই করি না। পারিশ্রমিক কমে যাওয়ায় এর প্রভাব পরিবারের ওপর পড়বে। আমরা তো আহামরি কোনো কিছু চাইনি, যে তাঁরা দিতে পারবে না। সবকিছুই আমরা মেনে নিয়েছিলাম। ওনারা (ক্লাবগুলো) বলেছে দল বদল না হোক। আমরা বলেছি, ঠিক আছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের কথা ভাবা হলো না। সবকিছুই তো ক্লাবের স্বার্থে করা হয়েছে। তাহলে তো আমাদের সঙ্গে বসারই প্রয়োজন ছিল না!

জাতীয় দলের গোলবারে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন আশরাফুল
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

আপনারা কি আবার বাফুফের সঙ্গে বসবেন?

আশরাফুল: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমরা কী-ই বা বা করতে পারি! বললে কোনো কিছু হয়? আমাদের খেলা ছাড়া তো উপায় নেই। আমরা খেলার অপেক্ষায় আছি।

প্রশ্ন :

নতুন মৌসুম বিদেশি ফুটবলার ছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তো চার বিদেশি নিয়েই লিগ শুরু হচ্ছে—

আশরাফুল: এটা দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের লিগ। অবশ্যই বিদেশি খেলোয়াড়ের প্রয়োজন আছে। বিদেশি ছাড়া প্রিমিয়ার লিগ সম্ভব নয়, এটাই স্বাভাবিক। তবে স্থানীয় খেলোয়াড়েরা যাতে খেলার সুযোগ বেশি পায়, সে ক্ষেত্রে চারজন নিবন্ধনের সুযোগ রেখে তিনজন খেলার সুযোগ দিতে পারত। অবশ্য যা হয়েছে সেটাও খারাপ হয়নি।

প্রশ্ন :

ফেডারেশন কাপ দিয়ে ডিসেম্বর থেকে নতুন মৌসুম শুরু করতে চায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। ক্লাবগুলোর বর্তমান প্রস্তুতির ভিত্তিতে এটা কী সম্ভব?

আশরাফুল: সামনে ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচন। প্রায় সবাই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। নির্বাচন শেষ হওয়ার আগে খেলা শুরুর ব্যাপারে কিছু বলা যায় না। শেষ পর্যন্ত খেলার সূচি দেওয়ায় খেলোয়াড়দের জন্য ভালো হয়েছে। তবে খেলা আরও আগে শুরু হলে ভালো হতো।

প্রশ্ন :

বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব স্থগিত হয়ে যাওয়ায় জাতীয় দলের ক্যাম্প বন্ধ করে দেওয়া হলো। আন্তর্জাতিক প্রস্তুতি ম্যাচ খেলানোর জন্য ক্যাম্প চালানো উচিত ছিল কিনা?

আশরাফুল: প্রথমে শুনেছিলাম দুইটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলা হবে। এ জন্য সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে ক্যাম্প। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তো হলো না।