‘চার শিরোপার মধ্যে সর্বশেষটাই এগিয়ে’

বসুন্ধরা কিংস আর অস্কার ব্রুজোন—বাংলাদেশের ফুটবলে দুটি নামই যেন সাফল্যের সমার্থক। স্প্যানিশ কোচ ব্রুজোনের অধীনই পরশু ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে টানা চারটি শিরোপা জিতেছে বসুন্ধরা। ক্লাবের আবাসিক ক্যাম্পের ভবনে বসে কাল প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিজ্ঞ এই কোচ কথা বলেছেন তাঁর সাফল্য আর বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে—

প্রশ্ন:

কোচ হিসেবে টানা চারটি শিরোপা জিতলেন। কাল (পরশু) রাতে নিশ্চয় ঘুমটা খুব ভালো হয়েছে...

অস্কার ব্রুজোন: মোটেও না। ম্যাচের পর কোনো রাতেই আমার ভালো ঘুম হয় না। মাঠের বিষয়গুলো নোট করতে গিয়ে অনেক রাত হয়ে যায়। এ ছাড়া বুধবার (আগামীকাল) থেকেই আবার লিগ শুরু। আজ (গতকাল) দলের অনুশীলন আছে। নিশ্চিন্তে ঘুম দেওয়ার সুযোগ নেই। ফেডারেশন কাপ জেতায় পরবর্তী এএফসি কাপ নিশ্চিত হয়েছে। লিগের জন্য আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।

প্রশ্ন:

২০১৮ সালে বাংলাদেশে এসে প্রথম টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হন। এরপর টানা চারটি শিরোপা জিতলেন। আপনার কাছে এর কোনটির গুরুত্ব বেশি?

ব্রুজোন: অবশ্যই গতকালের (পরশু) ফেডারেশন কাপ শিরোপা। ২০১৮ সালে প্রথম টুর্নামেন্টে আমাদের প্রমাণ করার ছিল আমরা সেরা হতে এসেছি। কিন্তু রানার্সআপ হই। পরে লিগ ও দুটি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রমাণ করি আমরাই সেরা। এরপর সবাই দেখতে চেয়েছে আমরা শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে পারি কি না। দলে ভালো মানের স্থানীয় ও বিদেশি খেলোয়াড় আছে। প্রত্যাশার চাপ ছিল অনেক বেশি। প্রতিদ্বন্দ্বিতাও অনেক। এ ছাড়া সর্বশেষ বাতিল হওয়া লিগে আমরা ভালো করছিলাম না। সবকিছু বিচার করে এবারের শিরোপাটিকেই এগিয়ে রাখব।

প্রশ্ন:

স্থানীয় ও বিদেশি খেলোয়াড়ে সমৃদ্ধ বসুন্ধরার চ্যাম্পিয়ন না হওয়াটাই অস্বাভাবিক হতো। কোচ হিসেবে আপনার কৃতিত্ব কোথায়?

ব্রুজোন: উত্তরটা ভালো দিতে পারবেন আমার খেলোয়াড় ও ক্লাব কর্মকর্তারা। নিঃসন্দেহে সেরা দল আমাদের। প্রতিদিন তাঁদের অনুশীলন করানোটাই আমার প্রধান কাজ। দলের কম্বিনেশন তৈরি করা, খেলোয়াড়দের চাঙা রাখা, পারফরম্যান্সের উন্নতির রাস্তা খোঁজার চেষ্টা করা—এসবই আমার দায়িত্ব।

প্রশ্ন:

আপনার হাতে তো জাতীয় দলের লেফটব্যাকও ছিল। স্ট্রাইকার রিমন হোসেনকে লেফটব্যাক হিসেবে খেলানোর কারণ কী?

ব্রুজোন: আমার কাছে ফুলব্যাক মানে শুধু ডিফেন্ডার নয়, আক্রমণভাগেরও একজন খেলোয়াড়। সেন্টারব্যাক ও ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের পা থেকে সবচেয়ে বেশি বল যায় ফুলব্যাকের কাছে। সে জন্য আক্রমণ গড়তে লেফটব্যাক খুব গুরুত্বপূর্ণ। রিমনের গতি আছে, বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ ভালো। ওভারল্যাপ করে ভালো ক্রস করতে পারে। রক্ষণেও দারুণ। দক্ষিণ এশিয়ায় খেলা বিদেশিদের মধ্যে আবাহনীর কেভিন বেলফোর্ট সেরাদের একজন। সেও তো রিমনকে পরাস্ত করতে পারেনি! এই পজিশনে খেলার জন্য সুশান্ত, তারিক ও রিমনের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে।

প্রশ্ন:

একটি আত্মঘাতী গোল বাদ দিলে দলের ১০ গোলের ৯টিই তিন বিদেশির। স্থানীয় ফুটবলাররা গোল পাননি কেন?

ব্রুজোন: বিষয়টি আমার কাছেও গর্বের নয়। এ নিয়ে আমরা কাজ করছি। স্থানীয় ফুটবলারদের গোলের রাস্তায় ফেরাতে হবে। এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ।

প্রশ্ন:

করোনাকালে ঘরোয়া ফুটবলের প্রথম টুর্নামেন্টটা কেমন দেখলেন? কোনো খেলোয়াড়কে কি বিশেষভাবে চোখে পড়ল?

ব্রুজোন: এবার বেশ কয়েকটি দল আগের মৌসুমের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে ফিরেছে। ৫-৬টি দল তো পুরো টুর্নামেন্টেই ভালো খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। সামনে যেহেতু লিগ, বিশেষ কোনো খেলোয়াড়ের কথা বলতে চাই না।

প্রশ্ন:

ফেডারেশন কাপ শেষ করার ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই তো লিগের ম্যাচে নামতে হচ্ছে...

ব্রুজোন: অনেক দিন পর লিগ শুরু করতে পারাটাই গুরুত্বপূর্ণ। খেলোয়াড়দের লিগের জন্য তৈরি করার দিকেই আমার সব মনোযোগ। যদিও ঠাসা সূচিতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করাটা বড় চ্যালেঞ্জ।

প্রশ্ন:

ফেডারেশন কাপে চট্টগ্রাম আবাহনী, শেখ জামাল ধানমন্ডি, আবাহনী লিমিটেড ও সাইফ স্পোর্টিংয়ের সঙ্গে খেলেছেন। বসুন্ধরার সঙ্গে এই দলগুলোও লিগে শিরোপাপ্রত্যাশী। কাকে এগিয়ে রাখবেন?

ব্রুজোন: আমার দৃষ্টিতে শেখ জামালের আক্রমণভাগ অন্যতম সেরা। আবাহনীর বিপক্ষে আমাদের দুর্দান্ত লড়াই হয়েছে। পল পুটের অধীনে এই মৌসুমে সাইফও ভালো দল। তারুণ্যনির্ভর দলটিতে অনেক বৈচিত্র্য আছে। লিগ শিরোপা জয়ের পথে এরাই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। এবার লিগ খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। ছয়টি দল শিরোপার জন্য লড়াই করবে।

প্রশ্ন:

দুই বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের ফুটবলে আছেন। কী উন্নতি চোখে পড়েছে?

ব্রুজোন: প্রথম দিকে এলোমেলো ফুটবল দেখেছি। নিচ থেকে সরাসরি লম্বা বল মেরে আক্রমণে যাওয়ার প্রবণতা ছিল। সে জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে শুরু করেছে ক্লাবগুলো। এখন বলের দখল রেখে খেলার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। ক্লাবগুলো ভালো কোচ নিয়োগ দিচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ছে।