সাক্ষাৎকারে তামিম ইকবাল
টেস্টে আমার এমন ব্যাটিং নতুন নয়
শ্রীলঙ্কায় দুই ইনিংসে নব্বইয়ের ঘরে গিয়েও সেঞ্চুরি না পাওয়ায় আফসোস আছে। তবে ব্যাটিংয়ের এই ধরন তামিম বদলাবেন না
সব দলের ভাবনাতেই এখন ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ। ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশও। মুঠোফোনে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিশ্বকাপ পরিকল্পনাসহ আরও অনেক কিছু নিয়েই কথা বলেছেন বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল
প্রশ্ন :
শ্রীলঙ্কায় দুই টেস্টের সিরিজ খেলে এলেন। সব মিলিয়ে কেমন কেটেছে সফরটা?
তামিম ইকবাল: সফর ভালোই ছিল। দুটি টেস্টেই আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আমরা অনেকক্ষণ ব্যাটিং করেছি। অনেক সময় ধরে ফিল্ডিং করেছি। প্রথম টেস্টটা ভালো কেটেছে। দ্বিতীয় টেস্টে টস অনেক বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রথম ইনিংসে আমাদের আরও ১০০-১৫০ রান বেশি করা উচিত ছিল। আমাদের হারার সবচেয়ে বড় কারণই ছিল ওটা।
আমি, সাকিব, মুশফিক ভাই, রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ)—আমাদের তো কোনো না কোনো সময় কোনো না কোনো ফরম্যাট ছাড়তেই হবে। চাইলেও সব ফরম্যাটে খেলতে পারব না। তবে আমাদের চারজনের পক্ষ থেকে আমি এটুকু বলতে পারি, এখনো যে সংস্করণই খেলি না কেন, আমাদের নিবেদনে ঘাটতি থাকে না।
প্রশ্ন :
দুই টেস্টেই আপনি ভালো ব্যাটিং করেছেন। তবে দুটি ইনিংসে সেঞ্চুরির কাছে গিয়েও আউট হয়ে গেলেন…
তামিম: দুই ইনিংসে ৯০-এর ঘরে আউট হওয়াটা আমারই ভুলে। প্রথম টেস্টে যে ধরনের উইকেট ছিল, ভুল না করলে বড় রান করার সুযোগ ছিল আমার। সব সময় তো ব্যাটিং আপনার মনের মতো হবে না। যখন সেটা হয়, তখন বড় রান করা উচিত। এই সিরিজে দুই দলের সবচেয়ে বড় পার্থক্য ছিল, ওদের সেরা ব্যাটসম্যান প্রায় ৪২০-৪৩০ রান করেছে। আমাদের সেরা ব্যাটসম্যান (তামিম) করেছে ২৮০ রান। এখানেই তো প্রায় দেড় শ রানের মতো পার্থক্য। এগুলোই অনেক বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায় আসলে।
প্রশ্ন :
টেস্টে একটু আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করলেন মনে হয়। এটা কি পরিকল্পনা করেই, নাকি অন্য কিছু?
তামিম: টেস্টে আপনি যখন শট খেলবেন, বল যদি ভালোভাবে ব্যাটে লাগে, এমনিতেই রান তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। ফিল্ডাররা অনেক পেছনে থাকে। যখনই চ্যালেঞ্জিং উইকেট থাকে, আমি চেষ্টা করি আক্রমণাত্মক খেলতে। খুব দেখেশুনে খেলতে গেলে আউট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর এই দুই টেস্টে আমি যেভাবে ব্যাটিং করেছি, এটা কিন্তু নতুন কিছু নয়। আমি নিউজিল্যান্ডেও এভাবে ব্যাটিং করেছি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টেও এভাবেই খেলেছি। টেস্টে কীভাবে ব্যাটিং করব, সেটা আমার কাছে এখন খুব স্পষ্ট। এভাবে ব্যাটিং করে হতে পারে অনেক সময় আমি দ্রুত আউট হয়ে গেলাম। তারপরও মনে হয় না আমি ব্যাটিংয়ের ধরন বদলাব।
আমি এর মধ্যে ১৪-১৫ বছর ক্রিকেট খেলে ফেলেছি। খুব ভালোও যদি করি, আর হয়তো সর্বোচ্চ পাঁচ বছরই খেলতে পারব। একটা সময়ে গিয়ে তো একটা সংস্করণ ছাড়তেই হবে। বিশ্ব ক্রিকেটে দেখবেন, খুব কম ক্রিকেটারই একসঙ্গে তিন ফরম্যাট ছাড়ে। একটা একটা করে ছাড়ে।
প্রশ্ন :
সামনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ। ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে সিরিজটাকে কীভাবে দেখছেন?
তামিম: আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটা সিরিজ। আমাদের ৩০ পয়েন্ট পাওয়ার সুযোগ আছে, যেটা বিশ্বকাপ বাছাইয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বাছাইপর্বের খুব বেশি ম্যাচ কিন্তু দেশে খেলছি না। কাজেই দেশের ম্যাচগুলোতে সর্বোচ্চ পয়েন্ট নিশ্চিত করতে হবে। সিরিজটা খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। ওরা স্পিন ভালো খেলে, এ ধরনের উইকেটে অভ্যস্ত। তবে ওয়ানডে আমাদের শক্তির জায়গা এবং ঘরের মাঠে আমরা আরও বেশি শক্তিশালী।
প্রশ্ন :
শ্রীলঙ্কা অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল পাঠাবে বলে শোনা যাচ্ছে। আপনাদের কাজটা কি সহজ হয়ে যাবে?
তামিম: দলটা হয়তো নতুন হবে। ওরা হয়তো এই দলকেই ওদের বিশ্বকাপের দল হিসেবে ভাবছে। তবে টেস্টে ওদের নতুন স্পিনাররাও ভালো বোলিং করেছে। কে আসবে না আসবে সে চিন্তা বাদ দিয়ে আমাদের নিজেদের ভালো খেলতে হবে।
প্রশ্ন :
বিশ্বকাপের দল নিয়ে বাংলাদেশের পরিকল্পনা কী? এখন যে দল আছে সে দল নিয়েই এগোবেন, নাকি আরও কাউকে দেখবেন?
তামিম: দেখার সুযোগ তো অবশ্যই আছে। তবে মনে হয় না খুব বেশি ওলট–পালট হবে। হ্যাঁ, নতুন এক-দুজনের তো অবশ্যই সুযোগ হতে পারে। একজন তরুণ ক্রিকেটার যদি ঘরোয়া ক্রিকেটে খুব ভালো খেলে বা বিদেশি দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে, তাকে বিবেচনায় রাখতে হবে। শুধু নতুন নয়, যারা এর আগে জাতীয় দলে খেলেছে, ভালো খেললে তাদেরও সমানভাবে সুযোগ থাকবে। তাদের নিলে একটা সুবিধা, তাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা আছে। কোচ, নির্বাচকদের যদি মনে হয় জাতীয় দলে আগে পাঁচ-ছয় বছর খেলা কোনো ক্রিকেটারের নতুন করে ফেরার সুযোগ আছে, তাহলে কেন নয়?
প্রশ্ন :
২০২৩ বিশ্বকাপের আগে হয়তো সব মিলিয়ে ২৫-৩০টি ওয়ানডে খেলবেন আপনারা। এটা কি যথেষ্ট?
তামিম: আমার ধারণা, ম্যাচ আরও কম হবে। এটা আদর্শ নয়। ২০১৫ বা ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে দেশে-বিদেশে আমরা আরও বেশি ম্যাচ খেলেছি। সে তুলনায় আগামী দু-তিন বছরে খুব বেশি ওয়ানডে নেই। সুপার লিগের কারণে এখন দ্বিপক্ষীয় সিরিজ তেমন হচ্ছে না। বিশ্বকাপের আগে ৪০-৪৫টি ওয়ানডে থাকলে ভালো হতো। নতুনরা আরও অভিজ্ঞ হতো। তবে এটা তো আমাদের হাতে নেই। সর্বোচ্চ যেটা সম্ভব, সেটাই নিশ্চয় বিসিবি করেছে। আর যেহেতু ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন পয়েন্টের ব্যাপার আছে, এমনিতেও আমরা বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারব না। প্রতিটা ম্যাচেই পয়েন্ট পাওয়ার ব্যাপার আছে। আগে যেমন সিরিজ নিশ্চিত হয়ে গেলে শেষ ম্যাচে একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যেত, এখন সে সুযোগ কম।
প্রশ্ন :
কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, তাঁর কোচিংয়ের ধরনটা ঠিক বাংলাদেশ দলের উপযুক্ত নয়। আপনার মতামত কী?
তামিম: তিনি কোচ হিসেবে ভালো কি খারাপ, সে আলোচনায় যাব না। তবে একেকজন ব্যাটসম্যানের যেমন ব্যাটিংয়ের একেকটা ধরন থাকে, তেমনি প্রত্যেক কোচের কাজ করার আলাদা ধরন থাকে। কোনোটাকেই ভুল বলা যাবে না। রাসেল ডমিঙ্গো তাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী যথেষ্ট চেষ্টা করছেন।
প্রশ্ন :
মাঝে আভাস দিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে হয়তো আর তিন সংস্করণের ক্রিকেটে খেলবেন না। কোনো একটা সংস্করণ বেছে নেবেন বা বাদ দিয়ে দিবেন। এখনই এ চিন্তা কেন?
তামিম: দেখুন, আমি এর মধ্যে ১৪-১৫ বছর ক্রিকেট খেলে ফেলেছি। খুব ভালোও যদি করি, আর হয়তো সর্বোচ্চ পাঁচ বছরই খেলতে পারব। একটা সময়ে গিয়ে তো একটা সংস্করণ ছাড়তেই হবে। বিশ্ব ক্রিকেটে দেখবেন, খুব কম ক্রিকেটারই একসঙ্গে তিন ফরম্যাট ছাড়ে। একটা একটা করে ছাড়ে। আমিও সেটাই বোঝাতে চেয়েছি। অনেকে হয়তো মনে করেছেন, আমি এখনই ছেড়ে দেব। আসলে তা নয়।
প্রশ্ন :
টেস্টের প্রতি সাকিবেরও যেন আগ্রহ একটু কম। নতুনদের জন্য হয়তো এটা দায়িত্ব নেওয়ার একটা বার্তা। কিন্তু আপনাদের পরের প্রজন্মের যাঁরা দলে আছেন, তারা কি দায়িত্ব নেওয়ার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত?
তামিম: আমি, সাকিব, মুশফিক ভাই, রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ)—আমাদের তো কোনো না কোনো সময় কোনো না কোনো ফরম্যাট ছাড়তেই হবে। চাইলেও সব ফরম্যাটে খেলতে পারব না। তবে আমাদের চারজনের পক্ষ থেকে আমি এটুকু বলতে পারি, এখনো যে সংস্করণই খেলি না কেন, আমাদের নিবেদনে ঘাটতি থাকে না। সাকিবের কথাই যদি বলি, ওর সঙ্গে আমি সর্বশেষ যে টেস্ট খেলেছি, তখন এমন কিছু মনে হয়নি যে ও টেস্ট খেলতে চায় না। বরং আমার মনে হয়েছে, সে দলের জন্য কিছু করতে চায়। আমরা যখন টেস্টে হেরে যাচ্ছিলাম, ও তখন ওপর থেকে নেমে এসে অনেক বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়েছে। টেস্ট খেলার ইচ্ছা না থাকলে সাকিব তো এটা না করলেও পারত!