মিষ্টি খাওয়া তো ছেড়েই দিয়েছি

আল আমিন।ছবি: প্রথম আলো
বয়স ৩৪ ছুঁয়েছে। তবু বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিব্যি খেলে চলেছেন নৌবাহিনীর লংজাম্পার আল আমিন। গত ১৫ বছরে সামার ও জাতীয় মিট মিলে জিতেছেন ২৫টি সোনা। এসএ গেমসে জিতেছেন দুটি ব্রোঞ্জ। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে এবারের ৪৪ তম জাতীয় অ্যাথলেটিকসে চোটগ্রস্ত অবস্থায় খেলেও সোনা জিতেছেন। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আল আমিন জানিয়েছেন এই বয়সেও ‘চ্যাম্পিয়ন’ হওয়ার রহস্য—

প্রশ্ন :

জাতীয় দলে আপনার একসময়ের সতীর্থরা খেলা ছেড়ে দিলেও আপনি এখনো শুধু খেলছেনই না, প্রতিবছরই সোনা জিতছেন। এর পেছনের রহস্য কী?

আমার রক্তে খেলাটা মিশে গেছে। চাইলেও খেলা ছাড়তে পারি না। অনেকে মনে করে, এই বয়সে আর খেলতে পারব না। কিন্তু আমার কখনোই তা মনে হয় না। সবাই বলে, ‘তোর বয়স হয়ে গেছে ৩৪ বছর। আর কত? এবার থাম।’ আমি বলি, যদি জাস্টিন গ্যাটলিন ৩৮ বছর বয়সেও খেলতে পারে, তাহলে আমি কেন পারব না?

প্রশ্ন :

২০১২ সাল বাদ দিলে ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রতিবছর আপনিই লংজাম্পে সোনা জিতেছেন। তবে কি দেশে নতুন প্রতিভা নেই?

২০০৬ সালে আমি সোনা জেতা শুরু করি। এ পর্যন্ত একবারই হেরেছি, ইসমাইল হোসেনের কাছে। এখনো যখন ট্র্যাকে থাকি, মনে করি, আমিই সেরা। আমি প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী। আল্লাহর মেহেরবানিতে মানসিকভাবে এত বেশি চাঙা থাকি যে খেলতে নামলে চিন্তা করি আমিই সেরা হব। গত এসএ গেমসের ক্যাম্পের কথাই ধরুন, যখন জুনিয়ররা এসেছে, আমার কোনো ভয় লাগেনি। মনে হয়েছে, ওরা ৮ মিটার দূরত্বে লাফালে আমিও ৮ মিটার লাফাতে পারব।

আল আমিন।
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

ফিটনেস ধরে রেখেছেন কীভাবে?

ফিট থাকতে অনেক কষ্ট করি। আমার স্ত্রী রানী আক্তার এ ক্ষেত্রে পুষ্টিবিদের মতো সাহায্য করে। সে একটা ডায়েট চার্ট করে দিয়েছে। রসনাকর খাবারগুলো দেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করি। মিষ্টি খাওয়া তো ছেড়েই দিয়েছি। গুরুপাক খাবার এড়িয়ে চলি।

প্রশ্ন :

আর কত দিন খেলে যেতে চান?

আগামী এসএ গেমসে খেলে অবসর নেব। সেখানে নিজের সেরাটা দিতে চাই। গেমসে পদক জিতে ক্যারিয়ার শেষ করতে চাই।

প্রশ্ন :

ক্যারিয়ার সেরা লাফিয়েছিলেন ৭.৬১ মিটার দূরত্বে। ২০০৯ সালে, জাতীয় রেকর্ড গড়ে। .১৭ সেন্টিমিটারের জন্য গত এসএ গেমসে রুপা জিততে পারেননি। নিজের রেকর্ড দূরত্ব তো আর টপকাতেই পারছেন না...

আমার কোনো কোচ নেই। নিজের অনুশীলন নিজেই করি। ২০০৮ সালে বৃত্তি নিয়ে মালয়েশিয়ায় হাই পারফরম্যান্স ট্রেনিং সেন্টারে গিয়েছিলাম। ওখান থেকে আসার পরই রেকর্ডটা গড়েছিলাম। এরপর গত এসএ গেমসে জুঁই (মাহফুজা হুদা) আপুর কাছে কিছুদিন অনুশীলন করি। এখন আমাদের দরকার দীর্ঘমেয়াদের অনুশীলন। অনুশীলন ছাড়া ভালো ফল সম্ভব নয়। সারা বছর একটা মাত্র গেমস। এভাবে ভালো করা কঠিন। ক্রিকেট, ফুটবল, হকির মতো আমাদেরও ক্যাম্প থাকতে হবে। এটা থাকলে এসএ গেমসে এমনিতেই ভালো ফল হবে।

আল আমিন।
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

প্রশ্ন :

চোট নিয়ে খেলেও ৭.০৪ মিটার লাফিয়ে সোনা জিতেছেন। কখনো কি মনে হয়েছিল এবার সোনা হাতছাড়া হতে পারে?

এমনটা কখনো মনে হয়নি। তবে এবার খুব সহজেই জিতেছি। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে খুব ভয় পেয়েছিলাম।

প্রশ্ন :

লংজাম্পে আসার গল্পটা বলবেন?

শুরুতে ক্রিকেট খেলতাম। স্বপ্ন দেখতাম বড় ক্রিকেটার হব। কিশোরগঞ্জে যখন স্কুলে পড়ি, তখন আমার ক্রীড়া শিক্ষক হাবিবুর রহমান লংজাম্পে আনেন। খেলার সুবাদে নৌবাহিনীতে চাকরি হয়। এখন খেলাই আমার নেশা।

প্রশ্ন :

এত বছরের ক্যারিয়ারে কোনো অতৃপ্তি?

আরেকবার যদি নিজের রেকর্ডটা ছুঁতে পারতাম। সামনের বাংলাদেশ গেমসেই এটা ছোঁয়ার চেষ্টা থাকবে।