মেসির মতো ফ্রি–কিক নিতে চেষ্টা করি

বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলে অনেক প্রথমের সঙ্গেই জড়িয়ে সাবিনা খাতুনের নাম। ‘গোলমেশিন’ উপাধিও পেয়েছেন অনেক আগেই। সব ধরনের ফুটবল মিলিয়ে ৩৭১টি গোল করলেও মেয়েদের ফুটবল লিগে শততম গোলের মাইলফলক ছুঁয়েছেন গতকাল সদ্যপুষ্করনি যুব স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে। এমন কীর্তির পর বসুন্ধরা কিংসের স্ট্রাইকার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন তাঁর গোল করার নেশার কথা।

ঘরোয়া ফুটবলে ১০০ গোল করলেন সাবিনাতানভীর আহাম্মেদ
প্রশ্ন:

মেয়েদের ফুটবলে অনেক প্রথমের মতো লিগে শততম গোলের মাইলফলকও আপনার নামের পাশেই প্রথম লেখা হলো। কেমন লাগছে?

সাবিনা খাতুন: আমার এমন রেকর্ড বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলের জন্য একটা অনুপ্রেরণা। আমার পরে যেসব মেয়ে এসেছে বা আসবে, তারা এই রেকর্ড ভাঙার চেষ্টা করবে। এই মাইলফলক গড়তে পারাটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। যত দিন ফুটবলে আছি, ধারাবাহিকভাবে গোল করে যেতে চাই। গোলের রেকর্ডটা এমন এক জায়গায় নিয়ে যেতে চাই যেন অন্য কারও তা ভাঙতে কষ্ট হয়।

প্রশ্ন:

বসুন্ধরা কিংস তো আপনার জন্য বিশেষ জার্সি বানিয়ে মাঠে এনেছে। বিশেষ ক্রেস্ট উপহার দিয়েছে...

সাবিনা: বসুন্ধরা কিংসের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। ওরা যেভাবে খেলোয়াড়দের সঙ্গে পেশাদারি আচরণ করে, তা প্রশংসনীয়।

আমার গোল করার ক্ষমতাটা আল্লাহপ্রদত্ত। আমি যখন ফুটবল খেলতে শুরু করি, তখন তো মেয়েদের ফুটবলকাঠামো অত উন্নত ছিল না। তখনো গোল করতাম। এখনো গোল করছি। ধারাবাহিকতাটা আছে। আর অবশ্যই আমার গোলের চেষ্টা তো আছেই। এটা ধরে রাখতে চাই।
সাবিনা খাতুন
প্রশ্ন:

মাঠে নামলেই গোলের দেখা পান, এর পেছনের রহস্য কী?

সাবিনা: প্রথমেই বলব, আমার গোল করার ক্ষমতাটা আল্লাহপ্রদত্ত। আমি যখন ফুটবল খেলতে শুরু করি, তখন তো মেয়েদের ফুটবলকাঠামো অত উন্নত ছিল না। তখনো গোল করতাম। এখনো গোল করছি। ধারাবাহিকতাটা আছে। আর অবশ্যই আমার গোলের চেষ্টা তো আছেই। এটা ধরে রাখতে চাই।

প্রশ্ন:

স্ট্রাইকারদের কাজই গোল করা। কিন্তু সবাই তো সেটা পারে না। বক্সে ঢুকলে আপনার কী মনে হয়?

সাবিনা: আমার লক্ষ্যই থাকে গোল করা। যখনই বল পাই, চিন্তা করি যেন গোলের সুযোগ নষ্ট না হয়। আমি আত্মবিশ্বাসী থাকি, বল নিয়ে বক্সে ঢুকলে গোলরক্ষককে ফাঁকি দিতে পারব।

গোল করাতে সব সময়ই আত্মবিশ্বাসী সাবিনা
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ
প্রশ্ন:

কোনো ম্যাচে গোল না পেলে কেমন লাগে?

সাবিনা: নিজেকে দুর্ভাগা মনে হয়, এটুকুই।

প্রশ্ন:

মেয়েদের ফুটবলে কেন আরেকজন সাবিনা উঠে আসছে না?

সাবিনা: কেন আরেকজন উঠে আসছে না, সেটা বলতে পারব না। তবে ফুটবল ফেডারেশন কাজ শুরু করেছে। ফুটবলটা যেন মাঠে নিয়মিত থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে আমাদের। ফুটবলার বেরিয়ে আসার মাধ্যমই হচ্ছে খেলা।

মেসির মতো ফ্রিকিক থেকে গোল করতে চান সাবিনা।
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ
প্রশ্ন:

প্রায় এক যুগ ধরে তো খেলছেন। বাংলাদেশে মেয়েদের ফুটবল কতটুকু এগোল?

সাবিনা: ২০১০ সালের তুলনায় অবশ্যই এখন অবস্থা ভালো। আগে আমরা বলে লাথিই দিতে পারতাম না। এখন অনেক গোছানো ফুটবল খেলি।

প্রশ্ন:

ভারত ও মালদ্বীপের ঘরোয়া লিগেও খেলেছেন আপনি। অন্য কোথাও আর খেলার ইচ্ছা আছে?

সাবিনা: আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ইউরোপের লিগে খেলব।

বাংলাদেশের নারী ফুটবলের ‘গোলমেশিন’ সাবিনা
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ
প্রশ্ন:

বিশ্ব ফুটবলে কি কাউকে অনুসরণ করেন?

সাবিনা: মার্তার (ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার) খেলা ভালো লাগে। নিজেকে কারোর সঙ্গে তুলনা করতে চাই না। আমি চাই মানুষ আমাকে সাবিনা নামেই চিনুক। তবে মেসির মতো ফ্রি–কিক নিতে চেষ্টা করি। আসলে ওনার মতো হওয়া অসম্ভব। তবু চেষ্টা করি।

প্রশ্ন:

এখন তো ইউরো, কোপা একই সঙ্গে চলছে। নিশ্চয়ই খেলা দেখছেন...

সাবিনা: বেশির ভাগ দিনই সকালে অনুশীলন থাকে। তাই ইচ্ছা থাকলেও রাত জেগে খেলা দেখা হয়ে ওঠে না। তবে পরে হাইলাইটস দেখি।

প্রশ্ন:

ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ফুটবল মিলিয়ে ৩৭১টি গোল আপনার। কোন গোলটি সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিয়েছে?

সাবিনা: কক্সবাজারে ২০১০ সাফ ফুটবলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করা গোলটি। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে গোলটা দিয়েছিলাম।