‘ম্যাচ শেষ করে আসা উপভোগ করি’

Shamsul Haque Tanku
ছয় ইনিংসে ১৪২ রান, স্ট্রাইক রেট ১৬৯.০৪। পরিসংখ্যানই কথা বলছে প্রাইম দোলেশ্বরের ‘ফিনিশার’ শামীম হোসেনের হয়ে। এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে শতাধিক রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শামীমের স্ট্রাইক রেটই সর্বোচ্চ। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে সংস্করণে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এমন একজন ফিনিশারের খোঁজ যে বহুদিনের। ফিল্ডিংয়ের সময়ও শামীম থেকে চোখ সরানো কঠিন। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য শামীমের অফ স্পিনও বেশ কার্যকর। সবই সাদা বলের ক্রিকেটে দারুণ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত। মুঠোফোনে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেছেন শামীম হোসেন।

ক্রীড়া প্রতিবেদক :

আপনার আগ্রাসী ব্যাটিং নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। নিজের ব্যাটিংকে কীভাবে দেখেন আপনি?

ব্যাটিংয়ের সময় আমার চিন্তা থাকে ইতিবাচক থাকার। প্রথম বলে যদি মারার বল পাই, মেরে দিই। আর কিছু না। এর বাইরে কিছু ভাবি না। আমি যেই সময় ব্যাটিংয়ে নামি, তখন তেমন সময় থাকে না। আমাকে স্ট্রাইক রোটেট করে খেলতে হয়। চার-ছক্কার খোঁজে থাকতে হয়। স্ট্রাইক রেটও ঠিক রাখতে হয়। টি-টোয়েন্টিতে স্ট্রাইক রেট অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সবকিছুই বিবেচনা করতে হয়। ম্যাচের ওই অবস্থায় বেশির ভাগ সময় দ্রুত রান তোলাই থাকে আমার কাজ।

শামীম হোসেন।
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

প্রচুর ঝুঁকি নিতে দেখা যায় আপনাকে। কিন্তু বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে নিরাপদ ব্যাটিংই বেশি বাহবা পায়। আপনি এ ক্ষেত্রে উল্টো…

ঝুঁকি নিতে হয়। ঝুঁকি ছাড়া তো হয় না। বোলারদের চেষ্টা থাকে ভালো করার। ব্যাটসম্যানদের দমিয়ে রাখার। ব্যাটসম্যানদের কাজটা রান করা। আর আমার কাজটা থাকে দ্রুত রান করা। আমি ব্যর্থ হলে কিছুই চিন্তা করি না। খারাপ সময় তো আসবেই। খুব স্বাভাবিক। বাইরের মানুষ অনেক কিছুই বলে। আমি কানে দিই না। শট খেলতে গেলে ছক্কাও হবে, আউটও হব। এসব মাথায় নেই না। যে যা বলার বলুক। আমার নিজেরটা আমিই জানি।

প্রশ্ন :

ছোটবেলা থেকেই এমন ভয়ডরহীন ব্যাটিং করেন?

আমি ক্রিকেট খেলার শুরু থেকেই এভাবে খেলি। আমি কাউকে দেখে এমন ব্যাটিং শুরু করিনি। নিজে থেকেই এভাবে খেলি। আমি চাঁদপুরে প্রথম যখন একাডেমিতে ভর্তি হই, তখনই আমার খেলা দেখে কোচ পছন্দ করেন। এরপর থেকে নিজের ব্যাটিং আর বদলাইনি। আমি মেরে খেলতে পছন্দ করি। এটাই আমার জন্য ক্রিকেটের সবচেয়ে উপভোগ্য বিষয়।

শামীম হোসেন।
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

ক্রিকেটে আসা হলো কীভাবে?

ছোট থেকেই খেলাটা আমার মধ্যে ঢুকে যায়। কীভাবে শুরু হলো, তার কিছুই তেমন পরিষ্কার করে মনে নেই। তামিম ভাইদের খেলা দেখতাম। সেখান থেকে ধীরে ধীরে ক্রিকেটে আসা। চাঁদপুরে আমাদের একাডেমিতে ভর্তি হওয়া। সেখান থেকে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়া, এরপর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের গল্প তো সবার জানা।

প্রশ্ন :

আপনার হাতে অনেক শট। কিছু শট অনেকের চোখ কপালে তোলার মতো। এত শট কি অনুশীলন করে রপ্ত করেছেন?

আমার ব্যাটিং নিয়ে আমাকে কেউ কিছু বলে না। আমি যেভাবে খেলি, সবাই আমাকে সেভাবেই খেলতে দেয়। আমার হাতে এত শট শুরুতে ছিল না। অনুশীলন করতে করতে এসেছে।

আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করেন শামীম।
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

প্রিয় শট?

স্লগ সুইপ, কাট।

প্রশ্ন :

এমন কোনো শট আছে, যা খেলে নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছেন?

পেস বলে রিভার্স সুইপ। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। আমি যে ছক্কা মারব এভাবে, চিন্তাও করিনি। মারতে মারতে একপর্যায়ে এসে গেছে (হাসি)।

প্রশ্ন :

আপনার চোখ আর হাতের সমন্বয় বেশ ভালো…

হ্যান্ড-আই কো-অর্ডিনেশনটা আগে থেকে এমন ছিল না। অনুশীলন করতে করতে এসেছে।

প্রশ্ন :

আপনার অনুশীলন অন্য ব্যাটসম্যানদের অনুশীলন থেকে আলাদা…

আমি ম্যাচে যা খেলব, সেই অনুশীলনই করি। সব ধরনের অনুশীলন করি না। ডিফেন্সিভ অনুশীলন করি না। সব সময় অনুশীলনে শট খেলি। কারণ, ম্যাচে গিয়ে আমাকে শট খেলতে হবে। সেটিরই অনুশীলনই করি। আমি যেখানে খেলি, সেখানে লম্বা ইনিংস খেলার সুযোগ পাওয়া যায় না। আমি ম্যাচটা শেষ করে এলেই বরং দলের জন্য ভালো হয়। দলে একেকজনের একেক দায়িত্ব থাকে। আমার দায়িত্বটা আমার জায়গায় ভালো খেলা।

আমি বোলার বেছে বেছে মারি না। আমার ম্যাচ জিততে হবে।

প্রশ্ন :

চার-ছক্কা মারতে কোন ধরনের বোলার পছন্দ করেন?

যেকোনো বোলিংয়ের বিপক্ষেই মারার চেষ্টা করি। আমি বোলার বেছে বেছে মারি না। আমার ম্যাচ জিততে হবে। আমি সাধারণত পাঁচ, ছয়ে খেলি। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটেও এ জায়গায় খেলতাম। যে জায়গায় খেলি, সেই জায়গায় সেই বোলার বেছে বেছে খেলার সুযোগ তেমন থাকে না।

প্রশ্ন :

আপনাকে দেখে মনে হয়, আপনি ব্যাটিং খুব উপভোগ করেন…

ম্যাচ শেষ করে আসা খুব উপভোগ করি। ব্যাটিংয়ের এদিক আমার পছন্দ। ইনিংসের শেষের চাপটা নিতে পছন্দ করি। মুহূর্তটা জয় করতে পছন্দ করি। ম্যাচ শেষ করে আসার পুরো প্রক্রিয়াই আমার পছন্দ।

শামীম হোসেন।
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

ফিনিশার হিসেবে ব্যাটিংয়ের সময় বাড়তি চাপ থাকে। চাপ নেওয়াও নিশ্চয়ই উপভোগ করেন?

আপনি যত বেশি ম্যাচ খেলবেন, ততই অভ্যস্ত হবেন, ততই উন্নতি হবে। আমি শুরু থেকেই এই ফিনিশারের দায়িত্বে খেলছি। খেলতে খেলতেই হয়ে গেছে। কমবেশি চাপ তো থাকেই এ সময়। আপনার দ্রুত রান তাড়া করা, দ্রুত রান তোলার সঙ্গে চাপ থাকেই। সেটির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি।

প্রশ্ন :

ফিল্ডিং আপনাকে বাকিদের থেকে আলাদা করে। সঙ্গে বোলিং করতে পারায় কি নিজেকে বেশ কার্যকর ক্রিকেটার মনে হয়?

কার্যকর কি না, জানি না। তবে অনূর্ধ্ব-১৪ দলে যখন খেলি, তখন থেকেই ফিল্ডিং ভালো করতাম। পরে অনূর্ধ্ব-১৭ আর অনূর্ধ্ব-১৯ ক্যাম্পে স্কিল ডেভেলপমেন্টে আরও কাজের সুযোগ হয়েছে। কোচদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি তখন। আমি জন্টি রোডসকে অনুকরণ করি। অনুশীলনের পর সবাই যখন চলে যায়, তখন আমি ফিল্ডিং নিয়ে আরেকটু কাজ করার চেষ্টা করি। আর কিছু না। বলের পেছনে ছুটতে থাকাটাই আসল। আর আমার জন্য বোলিংটা শুধুই উপভোগের ব্যাপার।