লক্ষ্য পূরণ হওয়ায় আমি খুশি

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে সরাসরি খেলার সুযোগ মিলেছে, জেমি তাই খুশি
ছবি: সংগৃহীত

৮ ম্যাচে একটিও জয় নেই। ৬ হারের সঙ্গে ২ ড্র। তবু বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে প্রাপ্তি আছে বাংলাদেশের। ২০২৩ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে সরাসরি সুযোগ পাচ্ছেন জামাল ভূঁইয়ারা। কিন্তু বাংলাদেশের মাঠের পারফরম্যান্স কি খুশি হওয়ার মতো? লাল–সবুজের দল কেমন খেলল বাছাইপর্বে? গত রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে দোহা থেকে টেলিফোনে এসব প্রশ্নের উত্তর দিলেন বাংলাদেশ দলের ইংলিশ কোচ জেমি ডে—

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

জেমি ডে: খেলোয়াড়দের প্রচেষ্টা এবং লড়াকু মনোভাবে আমি সত্যিই খুশি। ওরা পরিশ্রম করেছে সাধ্য অনুযায়ী। নেপালের ফাইনালে আমি তরুণদের খেলিয়েছিলাম বলে অনেকে আমার সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু আমি ঠিকই ছিলাম। নইলে কাতারে তরুণদের নিয়ে ওমানের সঙ্গে শেষ ম্যাচটা পার করতে পারতাম না।

আমার লক্ষ্য ছিল এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে সরাসরি ঢোকা। ৩৫তম দল হিসেবে সেই লক্ষ্য পূরণ হওয়ায় আমি খুশি। এখন আমরা গ্রুপ স্তর নিয়ে ভাবতে পারি। সামনে আমরা অন্তত ছয়টি ম্যাচ পাব।
জেমি ডে, বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ
প্রশ্ন:

প্রশ্ন: কিন্তু বাংলাদেশের খেলা দেখে মনে হয়েছে, আন্তর্জাতিক স্তরে লড়াই করার মতো শক্তি নেই। অনেক পেছনে পড়ে আছে...

জেমি ডে: মানছি, টেকনিক্যালি আমরা অনেক পেছনে। তবে মনে রাখতে হবে, আমাদের নয়জন মূল খেলোয়াড় ছিল না। তা ছাড়া আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে পেরেছি বলে মনে করি না। পাশাপাশি এ–ও বলব, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) এবং আন্তর্জাতিক ফুটবলের মধ্যে ব্যবধান অনেক বেশি। বিপিএল থেকে উঠে এসে আসলে আন্তর্জাতিক স্তরে পারফর্ম করা কঠিন।

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: কাতার সফরের শেষ দিনে ভালো খবরই পাওয়া গেছে। ২০২৩ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে যেতে বাংলাদেশকে এবার আর প্লে–অফ খেলতে হবে না। সরাসরি গ্রুপ পর্বে সুযোগ মিলেছে। এটিকে কীভাবে দেখছেন?

জেমি ডে: আমার লক্ষ্য ছিল এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে সরাসরি ঢোকা। ৩৫তম দল হিসেবে সেই লক্ষ্য পূরণ হওয়ায় আমি খুশি। এখন আমরা গ্রুপ স্তর নিয়ে ভাবতে পারি। সামনে আমরা অন্তত ছয়টি ম্যাচ পাব।

পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে কাতার যাওয়া হয়নি বলেই মনে করেন জেমি
ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন:

প্রশ্ন: কিন্তু খেলায় তো উন্নতি নেই। কাতারে ৩টি ম্যাচে এত বাজে পাসিং! ৩ ম্যাচে বাংলাদেশের বল পায়ে রাখার হার ২৭, ২৬ এবং ওমানের সঙ্গে মাত্র ২০...। কী বলবেন?

জেমি ডে: এটা নিয়ে আমিও ভেবেছি। আমাদের আরও বেশি বল পায়ে রাখা উচিত ছিল। চূড়ান্ত পাসগুলোও আমাদের ভালো হয়নি। এই জায়গাগুলো নিয়ে অনেক কাজ করার আছে। আমার উপলব্ধি—ছোট থেকে ছেলেদের পাসিং না শেখালে হবে না। এই বয়সে খেলোয়াড়দের কাছে ভালো পাস আশা করতে পারবেন না, বিশেষ করে অনেক এগিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে।

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: ওমানের সঙ্গে শেষ ম্যাচেও দেখা গেল, বাংলাদেশ সারাক্ষণই চাপের মুখে। এই ম্যাচ নিয়ে কী বলবেন?

জেমি ডে: প্রথম লেগে ওদের সঙ্গে ৪-১ গোলে হেরেছি। এবার ৩-০। খারাপ নয়।

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: ভারত আর আফগানিস্তানের সঙ্গে জয়ের সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। কেন পারলেন না?

জেমি ডে: আমি শুধু পরিকল্পনাই করতে পারি, মাঠে খেলার দায়িত্ব ফুটবলারদের। ওরা ভুল করলে আমি কী করতে পারি। তা ছাড়া আমি যদি বলতাম, আফগানিস্তান ও ভারতের সঙ্গে আমাদের সুযোগ নেই, সেটা হতো নেতিবাচক। কোচ হিসেবে সেটা আমি কেন বলব? আমাকে আশা রাখতেই হবে।

জেমি এখনো মনে করেন ভারত আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দুটি দেশের মাটিতে খেলতে পারলে ফল অন্যরকম হতো।
ছবি: বাফুফে
প্রশ্ন:

প্রশ্ন: কিন্তু অনেকে বলছেন, এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে সরাসরি সুযোগ পেলেও বাংলাদেশ যে ফুটবল খেলেছে কাতারে, তাতে ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদী হওয়া যায় না। আপনি তাহলে কী নিয়ে কাজ করলেন এত দিন?

জেমি ডে: আমি আমার দিক থেকে সবই করেছি। তবে আমি বলব, আফগানিস্তান ও ভারতের সঙ্গে আমরা দেশের মাটিতে খেললে ফল অন্য রকম হতে পারত। এবারের বাছাইয়ে ৮ ম্যাচের ৭টিই আমরা দেশের বাইরে খেলেছি। শেষ ৩টি ছিল আমাদের হোম ম্যাচ। কিন্তু ঘরের মাঠে খেলার সুবিধা নিতে পারিনি আমরা।

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: কাতারের মাঠ অন্য দলগুলোরও নিজেদের ভেন্যু ছিল না। তারপরও পার্থক্যটা খুব ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। আপনার কৌশল নিয়েও কার কারও সমালোচনা আছে...

জেমি ডে: আমাদের রানিং, ফিটনেসে উন্নতি হয়েছে। তবে আগেই বলেছি, পাসিংটা ভালো হয়নি। তাই সামগ্রিকভাবে আমরা পিছিয়ে আছি, এটা মানতে দ্বিধা নেই। তবে এ জন্য খেলোয়াড়দের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাকে দোষারোপ করেও লাভ নেই। আমাদের ফুটবলীয় কাঠামোই এমন যে আমরা পিছিয়ে।

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ৬টি ম্যাচ পাচ্ছে বাংলাদেশ
ছবি: বাফুফে
প্রশ্ন:

প্রশ্ন: এই সফরের পর বাফুফের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?

জেমি ডে: বাংলাদেশের ফুটবলাররা আন্তর্জাতিক স্তরে গিয়ে বুঝতে পারে তাদের আসল অবস্থান। বাংলাদেশে নবীন ফুটবলার তুলে আনার প্রচলিত পদ্ধতির মধ্যেই তারা বেড়ে উঠেছে। এই পদ্ধতি সময়োপযোগী করতে হবে। খেলোয়াড়দের একেবারে ছোট থেকে কোচিং করানো দরকার। দিতে হবে সব সুযোগ–সুবিধা। একাডেমি করতে হবে। তবেই আন্তর্জাতিক স্তরে প্রত্যাশিত ফল আসবে।