সাকিব ভাইকে দেখেই স্বপ্ন দেখি

মেহেদী হাসান মিরাজ
চট্টগ্রামে সেঞ্চুরির সঙ্গে দুই ইনিংসে নিয়েছেন ৮ উইকেট। মিরপুর টেস্টে তো বাংলাদেশ দলকে প্রায় জিতিয়েই দিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আর দু-তিনটি বাউন্ডারি, সঙ্গে কিছু এক-দুই রান হলেই জিতে যেত বাংলাদেশ। কিন্তু জয় থেকে মাত্র ১৮ রান দূরে থাকতে আউট হয়ে যান মিরাজ। কাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ আর নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে তিনি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে—

প্রশ্ন :

প্রশ্ন: হারের হতাশা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন?

মেহেদী হাসান মিরাজ: একটু খারাপ লেগেছে। তবে হতাশা এখন মোটামুটি কাটিয়ে উঠেছি।

প্রশ্ন :

স্লিপে রাকিম কর্নওয়াল ক্যাচটি নেওয়ার পর আপনাকে হতবিহ্বল মনে হচ্ছিল...

মিরাজ: একদম হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। ভাবছিলাম, এটা কী হলো! আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। উইকেটে থাকলে ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারব, এই আত্মবিশ্বাস ছিল। আর ১৮টা রান দরকার ছিল। কিন্তু হলো না। এই রানটা করতে না পারায় খারাপ লাগছিল।

প্রশ্ন :

শেষ ব্যাটসম্যান আবু জায়েদ উইকেটে আসার পর আপনার চিন্তাটা কী ছিল?

মিরাজ: ভাবছিলাম, আমার ঝুঁকি নিতে হবে। বাউন্ডারি বের করতে হবে। এরপর আর কোনো উইকেট ছিল না। আউট হলেই খেলা শেষ। ভাবছিলাম মারতে মারতে যদি হয়ে যায়, যদি লেগে যায়! হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অল্পের জন্য আটকে গেলাম।

প্রশ্ন :

কর্নওয়ালের অফ স্পিনেই কি শট খেলার জন্য কম ঝুঁকির মনে হচ্ছিল? আপনি চার-ছক্কাগুলো তাঁকেই মেরেছিলেন...

মিরাজ: হ্যাঁ, কর্নওয়ালকেই টার্গেট করছিলাম। ওয়ারিক্যানের বাঁহাতি স্পিনে আমি সামনে না খেলে সুইপ খেলার চিন্তা করছিলাম। যেই বলে আউট হই, সেই বলেও প্রথমে ভেবেছিলাম সুইপ শট খেলব এবং খেললে ভালোও হতো। কিন্তু পরে ভাবলাম, এই বলটা থামিয়ে পরের বলে সুইপ করব। কিন্তু সেই বলটিই বেশি ভালো হয়ে গেল।

প্রশ্ন :

প্রথম টেস্টে আপনার বোলিং দিয়ে ম্যাচ শেষ করার সুযোগ ছিল। দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাটিং…

মিরাজ: হার কার ভালো লাগে বলুন। আমি দুটি সুযোগের একটিও কাজে লাগাতে পারিনি। দুটি ম্যাচই আমার জন্য হতাশার। সুযোগ কাজে লাগালে হয়তো ফলও ভিন্ন হতে পারত। আশা করি, ভবিষ্যতে ভালো কিছু হবে। এখনো আমি টেস্ট ক্রিকেটের অনেক কিছু শিখছি।

প্রশ্ন :

ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের বিচারে সিরিজটি কি আপনার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট বলা যায়?

মিরাজ: আমি বলব, ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো মঞ্চ ছিল। আমি রান করতে পারছিলাম না। এই সিরিজে রান করায় আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। চেষ্টা করব এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার।

প্রশ্ন :

ব্যাটিংয়ে উন্নতির কারণ কী?

মিরাজ: ডিফেন্স খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর লম্বা সময় ব্যাটিং করা। সবচেয়ে বড় সাহায্য ছিল এটাই। আমি অনুশীলনে অনেক ব্যাটিং করেছি। আমাদের কোনো প্রথম শ্রেণির ম্যাচ ছিল না, কিন্তু আমি অনুশীলনটা কাজে লাগিয়েছি। চেষ্টা করেছি আউট না হয়ে অনুশীলন করার। এটাই কাজে দিয়েছে।

প্রশ্ন :

সাকিব আল হাসান ছাড়া বাংলাদেশ দলে ভালো মানের টেস্ট অলরাউন্ডার নেই। আপনি কি নিজেকে পরবর্তী সাকিব হিসেবে দেখেন?

মিরাজ: সাকিব ভাই শুধু দেশের সেরা নন, বিশ্বেরও সেরা। আমরা সবাই সাকিব ভাইকে দেখেই স্বপ্ন দেখি। সাকিব ভাই বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার, তাঁকে দেখে আমরাও স্বপ্ন দেখি। ভাবি যে আমরাও পারব। পরবর্তী প্রজন্ম তো এভাবেই স্বপ্ন দেখবে। চেষ্টা থাকবে ভালো কিছু করার। আর যেহেতু আমার সুযোগ আছে, চেষ্টা করলে হতেও পারি।

প্রশ্ন :

প্রশ্ন: আপনার উন্নতির পরের ধাপটা কী হবে?

মিরাজ: ব্যাটিংয়ে দলের প্রয়োজনে আরও অবদান রাখতে চাই। বোলিংয়ের পাশাপাশি আমি ভালো ব্যাটিং করলে দলের অনেক উপকার হবে। কৌশলগতভাবেও অনেক কিছু আছে উন্নতি করার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো করতে ভালো বলই বেশি খেলতে হয়। এখানেও আমার উন্নতি করার আছে। কীভাবে ভালো বলে রান করা যায়, ভালো বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে উইকেটে লম্বা সময় টিকে থাকা যায়। এসব জায়গায় উন্নতি করার সুযোগ আছে।