'ফুটবলের টান ভোলা যায় না'

বাংলাদেশের সেরা গোলরক্ষকদের তালিকা করলে তাঁর নামটা ওপরের দিকেই থাকবে। খেলা ছেড়ে ১৯৯৭ সালে কানাডায় গিয়ে বসত গড়েন। মাঝেমধ্যে দেশে আসেন। এবার এসে পেয়ে গেলেন বাংলাদেশ-জাপান অনূর্ধ্ব-২১ দলের প্রীতি ম্যাচ। ম্যাচটা দেখতে দেখতে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে কথা বললেন মোহাম্মদ মহসীন

মোহাম্মদ মহসীন
মোহাম্মদ মহসীন

 হঠাৎ আপনি! দেশে এলেন কবে?
মোহাম্মদ মহসীন: কদিন আগে। মায়ের শরীরটা ভালো নয় তাই আসতে হলো। পাঁচ বছর পর এলাম এবার।
 অনেক দিন পর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দেখা গেল আপনাকে। নিশ্চয়ই অনেক স্মৃতি মনে পড়ছে?
মহসীন: ফুটবলের টান ভোলা যায় না। তাই চলে এলাম। আমরা যখন খেলতাম, তখন এই অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকটা ছিল না। এখন পরিবেশটা পাল্টে গেছে। চেয়ার বসেছে গ্যালারিতে। ঝকঝকে সবকিছু।
 আপনি তো জাপানের সঙ্গে ম্যাচ খেলেছেন। সেই ম্যাচের সঙ্গে আজকের ম্যাচটি তুলনা করলে কেমন লাগছে?
মোহাম্মদ মহসীন: আমরা খেলেছি জাপান জাতীয় দলের সঙ্গে। আজ জাপানের যুবদল খেলল। এরাও অনেক শক্তিশালী, গোটা ম্যাচটাই নিয়ন্ত্রণ করল। বাংলাদেশ দল চেষ্টা করেছে, কিন্তু কিছু করার নেই, আরও উন্নতি করতে হবে। হ্যাঁ, যেটা বলছিলেন, ১৯৯৩ সালে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে টোকিওতে জাপানের সঙ্গে আমরা ৮ গোল খেয়েছিলাম, গোলরক্ষক ছিল কানন। আরব আমিরাতে পরের ম্যাচে পোস্টের নিচে ছিলাম আমি। আমরা হেরেছিলাম ৪-১ গোলে।
 কানাডায় দেশের ফুটবলের খোঁজখবর পান?
মহসীন: কানাডায় বাংলা কাগজ বের হয়, টুকটাক ফুটবলের খবর তাতে থাকে। তা ছাড়া দেশের অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ আছে, তাদের কাছ থেকে সবই শুনি জানি।
 আপনার পর অনেক গোলরক্ষকই এসেছেন। সেভাবে কাউকে ভালো লেগেছে?
মহসীন: এটা বলা কঠিন। আমিনুল ভালো গোলরক্ষক, বিপ্লবও ভালো। এ ছাড়া আর কারও সম্পর্কে তেমন জানা নেই।
 খেলোয়াড়ি জীবনে আপনি অনেক দলেরই অধিনায়ক ছিলেন। মনে পড়ে সেসব?
মহসীন: মনে তো পড়েই। আবাহনী, মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধায় খেলেছি। তিন দলেরই অধিনায়ক ছিলাম। এশিয়ান যুব ফুটবল, লাল দল, মূল জাতীয় দল সবগুলোরই অধিনায়কত্ব করেছি। সে দারুণ এক অভিজ্ঞতা।
 কিন্তু আপনাকে মানুষ বেশি মনে রেখেছে গোলরক্ষক মহসীন হিসেবেই...
মহসীন: পোস্টের নিচে আসলে আমাকে অনেক লড়াই করতে হয়েছে। ’৭৮ থেকে ’৯৫ পর্যন্ত ছিলাম জাতীয় দলে। তবে জাতীয় দলে এক নম্বর পছন্দ হই কাকতালীয়ভাবে।
 সেটা কীভাবে?
মহসীন: ১৯৮২ দিল্লি এশিয়ান গেমস শুরু করলেন এক নম্বর গোলরক্ষক মোতালেব ভাই। প্রথম ম্যাচে দুই গোলে হারের পর কোচ পরের ম্যাচে আমাকে সুযোগ দিলেন। সাত-আটটা সেভ করি। সেটিই আসলে আমার বড় ব্রেক।
 একটা গানের কলি ছিল, গোলপোস্টে দাঁড়িয়েছে বীর মহসীন...। মনে আছে?
মহসীন: আসলে আস্থা নিয়েই খেলতে চেয়েছি আমি। মনে আছে ইরানে খেলতে গিয়ে ওদের সঙ্গে আমরা মাত্র ১ গোলে হেরে যাই শেষ মুহূর্তের গোলে। ভারতে একটা ম্যাচ হয়েছে মালয়েশিয়া বনাম মহসীন। আমরা হারি ২-১ গোলে। ’৯৩-তে আরব আমিরাতের সঙ্গেও অনেক লড়েছি। আমি পেনাল্টি ঠেকালেও শেষ দিকে আরেকটি পেনাল্টিতে ওরা জিতে যায় ২-১ গোলে।
 ফুটবলজীবনে অনেক স্মরণীয় ঘটনাই আছে আপনার। এ মুহূর্তে কোনটা মনে পড়ছে?
মহসীন: মালয়েশিয়ার সঙ্গে ওই ম্যাচে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই মাঠে। পরদিন আমরা আজমির শরিফ যাই। সেখানে লোকজন আমাকে অনেক অভিনন্দন জানায়। ম্যাচটা তারা টিভিতে দেখেছিল।
 সুযোগ পেলে দেশের ফুটবল নিয়ে কাজ করবেন?
মহসীন: সুযোগ পেলে হতে পারে। তবে কানাডায়ও ফুটবলের সঙ্গে জড়িয়ে আছি। টরন্টোতে একটা দল গড়ে আমরা মন্ট্রিয়লে গিয়ে খেলেছি। রুমি, আয়াজ, মামুন জোয়ার্দারসহ আরও অনেক সাবেক ফুটবলারই থাকে কানাডায়। কাজেই ফুটবল আমাদের প্রবাস জীবনেও ঘুরেফিরে আসে।