'ভালোবেসেই কাজটা করেছি'

>
স্বপন দাস
স্বপন দাস
১৯৮৫ সালে মোহামেডানের অধিনায়ক ছিলেন। খেলা ছেড়ে ’৯৫ সালে যোগ দেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) ফুটবল কোচ হিসেবে। ২০ বছর দায়িত্ব পালন করে গত মে মাসে অবসরে গেছেন স্বপন দাস। এনএসসিতে কাজ করার দীর্ঘ সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বললেন জাতীয় দলের সাবেক ডিফেন্ডার

সাবেক ফুটবলাররা শীর্ষস্তরের ক্লাব বা বিভিন্ন জাতীয় দলের কোচ হতে চান বেশি। আপনি এনএসসির কোচ হলেন কেন? এখানে তো প্রচারণা বা তেমন কোনো প্রাপ্তি নেই...

স্বপন দাস: প্রাপ্তির কথা কখনো ভাবিনি। কোচিং করাতে ভালোবাসি, তাই এনএসসির কাজটা নিয়েছিলাম। ২০ বছর পর এনএসসি থেকে বিদায়ের সময় বলতে পারি, আমি খুশিই আছি।
তবু প্রতিষ্ঠিত কোচদের দিকে তাকালে খারাপ লাগে না?
স্বপন: মোটেও না। টাকার পেছনে ছুটিনি, যদিও এনএসসি থেকে পাওয়া সম্মানীটা পর্যাপ্ত নয়। হ্যাঁ, এই চাকরিতে আমার সংসার হয়তো চলেছে, কিন্তু ছেলেমেয়েকে ভালো স্কুলে পড়ানো সম্ভব ছিল না। তবু কাজটা উপভোগ করেছি। অর্জনের দিক থেকে আমি খুশি।
মাঝখানে তো নিটল-টাটা জাতীয় লিগে আপনার নিজের শহর মুন্সিগঞ্জের সমাবেশ ক্লাবের কোচ ছিলেন। ক্লাব কোচিংয়ে আর সেভাবে দেখলামই না আপনাকে...
স্বপন: এনএনসিতে অনেক সময় কাজ থাকে না। ওই সময় চাইলে ক্লাব কোচিং করানো যায়। তবে আমি ওসব নিয়ে ভাবিনি। আমি সব সময়ই ভেবেছি, গ্রাম থেকে একটা ছেলেকে তুলে এনে ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারার মধ্যে একটা তৃপ্তি আছে। সেই তৃপ্তি নিয়েই অবসরে গেলাম। এক বছরের অবসরকালীন ছুটিতে আছি এখন, তবু এনএসসির ডাকে নড়াইলে একটা কোচিং ক্যাম্প করছি।
এনএসসিতে লম্বা সময় কাজ করার সামগ্রিক অভিজ্ঞতা কেমন?
স্বপন: খারাপ বলব না। তবে আমি দেখেছি, এখানে সচিব পর্যায়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা এটাকে কোনো চাকরিই মনে করেন না। তাঁদের বেশিরভাগেরই ধারণা, এটা একটা চাকরি হলো! যার কারণে তাঁরা নিজেরাও কোচের সাফল্য বা একজন কোচের কাজ কী, সে সম্পর্কে চিন্তা করেন না। এ জন্য কোচকে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া উচিত, সেটিও তাঁরা ভাবেন না।
তারপরও আপনি কাজটা করলেন ২০ বছর। এনএসসির ফুটবল কোচিংটা আসলে কেমন?
স্বপন: সারা দেশে কোচিং ক্যাম্প হয়। ঘুরে ঘুরে সেগুলো আমরা করেছি। আমার সঙ্গে ফুটবল কোচ ছিলেন মোশাররফ বাদল, তিনি আগামী বছর অবসরে যাবেন। এনএসসিতে আসলে কোচের সংকট আছে। সরকারের দেওয়া আর্থিক বরাদ্দও অপ্রতুল।
এনএসসির প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি কদিন পরই হারিয়ে যায়। আসলে এই সব কর্মসূচির সার্থকতা কোথায়?
স্বপন: সার্থকতা অবশ্যই আছে। আমরা প্রতিভা তুলে আনি, অনেক সময় ফেডারেশন ওই ছেলেদের নেয়। ঢাকায় ক্লাব পর্যায়ে ঢুকে যায় অনেক ছেলে। এসবের একটা ইতিবাচক প্রভাব আছেই। তা ছাড়া বলব, বছর দুয়েক ধরে এনএসসির কাজটা আগের চেয়ে আরও ভালো হচ্ছে।
কিন্তু এমন অভিযোগও তো আছে, এসব কর্মসূচি শুধুই নামমাত্র হয়ে থাকে?
স্বপন: না না, আমরা কোচেরা তো চেষ্টা করি ভালো কিছু করতে। বিষয়টা হলো, একটা ক্যাম্পের জন্য ধরেন এক লাখ টাকা দেয় সরকার, এর মধ্যে ছেলেদের বুট, জার্সি, নাশতা, যাতায়াত খরচ লাগে। এ দিয়ে কী হয়! এমনও হয়েছে, এনএসসির কোচিংয়ের টাকা ফেডারেশন নিয়ে গেছে। তারা কোনো হিসাবও দেয় না। এনএসসির কিছু কোচিং প্রোগ্রামের টাকা স্থানীয় সাংসদের হাতেও যায়। এসবের ফলোআপ কী আমরা আসলে জানি না। তাই বিদায়ের সময় একটা পরামর্শ দেব এনএসসিকে, ১৫ দিনের বদলে কোচিং প্রোগ্রামগুলো যেন অন্তত তিন সপ্তাহ হয়।