‘বিসিবি আমাকে সুযোগ দিতে পারত’

মালদ্বীপ নারী দলের দায়িত্ব নিয়েছেন ফাতেমা তুজ জোহরাটুইটার
মেয়েদের সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে তিনি ছিলেন বিকেএসপি নারী দলের কোচ। তার আগে কোচিং করাতে গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ নারী দলের হয়ে দুটি আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলা সাবেক ক্রিকেটার ও বিকেএসপির কোচ ফাতেমা তুজ জোহরা এবার নিলেন মালদ্বীপ নারী ক্রিকেট দলের কোচের দায়িত্ব। মালে থেকে কাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন তাঁর নতুন দায়িত্ব আর কোচ হয়ে ওঠার কথা—
প্রশ্ন:

মালদ্বীপ নারী ক্রিকেট দলের কোচ হওয়ার জন্য অভিনন্দন। চুক্তিটা কত দিনের?

ফাতেমা তুজ জোহরা: আমি মূলত বিকেএসপিতে ক্রিকেট কোচ হিসেবে চাকরি করি পূর্ণ মেয়াদে। আপাতত তিন মাসের জন্য এখানে এসেছি। এরপর যদি ভালো লাগে, সবকিছু ভালোভাবে যায়, তাহলে হয়তো চুক্তি নবায়ন করব। ওরা আমাকে দীর্ঘ মেয়াদেই চাচ্ছে।

প্রশ্ন:

ওখানে মেয়েদের ক্রিকেটের অবস্থা কেমন দেখছেন?

ফাতেমা: এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি, অনুশীলন সেশনও শুরু হয়ে গেছে। ইনডোর, আউটডোর—সব সুবিধাই অসাধারণ। তবে সত্যি বলতে কি, এটা বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে কোভিডের মতো বড় একটি বিরতির পর। কোভিডের আগে মেয়েদের জাতীয় দল ছিল এখানে। এখন আসলে অমন কোনো দল নেই, কোভিডের পর তেমন কোনো দল গড়ে ওঠেনি। আমাকে শূন্য থেকে শুরু করতে হচ্ছে। আর তাদের খেলোয়াড়েরা বাংলাদেশের মতো পেশাদার নয় এখনো। খেলার পাশাপাশি ওরা আরও দু-তিনটি কাজ করে।

প্রশ্ন:

আপনার কাছে তাদের চাওয়াটা কেমন?

ফাতেমা: আগেও এখানে পুরুষদের ক্রিকেটেই বেশি মনোযোগ ছিল। তবে এখন মেয়েদের আইসিসি ইভেন্ট বেড়েছে। আগামী বছর প্রথমবারের মতো মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ হবে। মালদ্বীপ মেয়েদের ক্রিকেটেও নজর দিতে চায়। এ কারণেই আমাকে তারা বাংলাদেশ থেকে এনেছে। একেবারে জুনিয়র পর্যায় থেকে ক্রিকেটার তৈরি করে একটা জাতীয় দল তৈরি করা—এটিই আমার দায়িত্ব।

মালদ্বীপে খেলোয়াড়দের সঙ্গে ফাতেমা
সৌজন্য ছবি: ফাতেমা তুজ জোহরা
প্রশ্ন:

আপনি বিকেএসপির কোচ, সেখান থেকে গেলেন অস্ট্রেলিয়ায়। এবার মালদ্বীপের মতো দেশে। তিনটি ভিন্ন ধরনের ক্রিকেট সংস্কৃতির দেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা হচ্ছে আপনার...

ফাতেমা: আমার কোচিং ক্যারিয়ারে এই তিন দেশ একটা ত্রিভুজের মতো, আমি এর মাঝখানে। বাংলাদেশ একটা উন্নয়নশীল দেশ, এরপর উন্নত একটা দেশে গেলাম। এখন আবার সহযোগী সদস্য একটি দেশে এসেছি। তিন রকম ‘ফ্লেভার’ই পাচ্ছি। বাংলাদেশ ও সিডনির অভিজ্ঞতা মালদ্বীপে কাজে লাগাতে পারছি। এখানে অবশ্য বিকেএসপির কাজের সঙ্গে মিল আছে। বিকেএসপিতে একটা ব্যাচকে গড়ে তুলি, এরপর তাদের মধ্য থেকে ক্রিকেটার নিয়ে জাতীয় দলের জন্য প্রস্তুত করি। এর আগে সিডনিতে কাজ করেছি নিউ সাউথ ওয়েলসে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৮ দল নিয়ে।

প্রশ্ন:

বাংলাদেশে যখন কোচিং শুরু করেন, তখন কি ভেবেছিলেন যে এ রকম একটা জাতীয় দলের দায়িত্ব নেবেন?

ফাতেমা: অবশ্যই না। ২০০৭ সালে বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেটের প্রথম ব্যাচে ছিলাম আমি। জাতীয় দলের ক্যাম্পে ভালো শুরুর পর মনে হলো, এখানে ভবিষ্যৎ গড়া যায়। ২০০৯ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় জাতীয় দলে সুযোগ পাই। বিশ্ববিদ্যালয় দলে আমাদের কোচ ছিলেন দেবব্রত পাল। ওনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া একজন মেয়ের জন্য ক্রিকেটে আসাটা সহজ ছিল না, বিশেষ করে মেয়েদের ক্রিকেট যখন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুই হয়নি। পরিবারে চার ভাইবোনের মধ্যে খেলতাম শুধু আমি। বাবাই আমার প্রেরণা, সমর্থন দিতেন, স্বাধীনতাও।

মালদ্বীপের ক্রিকেট অবকাঠামোকে দারুণ বলছেন ফাতেমা
সৌজন্য ছবি: ফাতেমা তুজ জোহরা
প্রশ্ন:

বিসিবির কাছ থেকে কখনো কাজের প্রস্তাব পেয়েছেন?

ফাতেমা: আমার কোচিং ক্যারিয়ার শুরু ২০১১ সালে। তখন থেকে এই পর্যন্ত আসা নিজের প্রচেষ্টাতেই। বিসিবি আমাকে সুযোগ দিতে পারত। বাংলাদেশ ছাড়া সব দেশই মেয়েদের দলে স্থানীয় মেয়ে স্টাফ রাখে। কিন্তু বাংলাদেশ দলে দেখবেন, ফিজিও ছাড়া সবাই পুরুষ। ফিজিও ছেলে রাখার নিয়ম থাকলে আমার ধারণা সেটিও রাখত। দু-তিনজন মেয়ে কোচ জাতীয় দলে এসেছিলেন, তবে তাঁরা বিদেশি। বিসিবি এখন পর্যন্ত মনে করেনি আমাকে তাদের প্রয়োজন। তবে বিসিবি যদি মেয়েদের ক্রিকেট শুরু না করত, আমি এ পর্যন্ত আসতেই পারতাম না। সেদিক থেকে আমি সব সময় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

দু-তিনজন মেয়ে কোচ জাতীয় দলে এসেছিলেন, তবে তাঁরা বিদেশি। বিসিবি এখন পর্যন্ত মনে করেনি আমাকে তাদের প্রয়োজন। তবে বিসিবি যদি মেয়েদের ক্রিকেট শুরু না করত, আমি এ পর্যন্ত আসতেই পারতাম না। সেদিক থেকে আমি সব সময় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
প্রশ্ন:

এখন তো মেয়েদের ক্রিকেটের অবস্থা সারা বিশ্বেই অনেক বদলেছে। মেয়েদের ক্রিকেটের কী ভবিষ্যৎ দেখেন?

ফাতেমা: মেয়েদের খেলাধুলা, বিশেষ করে ক্রিকেট নিয়ে আমি অনেক আশাবাদী। কোভিড না থাকলে এত দিনে আরও অনেক এগোত। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপটা হয়ে যেত। অনেক সহযোগী দেশ বাড়ছে। আইসিসিও এই দিকে অনেক মনোযোগ দিচ্ছে এখন। আমাদের দেশে অনেক লিগ হচ্ছে। গত বছরের পর এ বছরও অনেক বিদেশ সফর আছে। মালদ্বীপ মেয়েদের ক্রিকেটে নতুন, একটু সময় লাগবে। তবে আমি আশাবাদী, যদি কাজ করে যেতে পারি, মালদ্বীপ ক্রিকেট বোর্ডকে আমি ভালো কিছু দিতে পারব। বাংলাদেশের সুনামটাও বাড়াতে পারব বলে আশা করি।