তাঁর অভিযোগ ছিল চীনের সাবেক ভাইস প্রিমিয়ারের বিরুদ্ধে। অভিযোগটাও অনেক গুরুতর—জোরপূর্বক যৌন সম্পর্কের। কিন্তু সেই অভিযোগের পর থেকেই নিখোঁজ চীনের টেনিস-কন্যা ও দেশটির সবচেয়ে বড় ক্রীড়া তারকাদের একজন পেং শুয়াই!
২ নভেম্বর থেকে শুয়াই নিখোঁজ হলেও এর মধ্যে আবার নাটকে নতুন মোচড় হয়ে এসেছে একটা মেইল। গতকাল মেয়েদের টেনিসের সংগঠন ডব্লুটিএকে পাঠানো সেই মেইলের প্রেরকের জায়গায় লেখা আছে ২০১৩ উইম্বলডন ও ২০১৪ ফ্রেঞ্চ ওপেনে মেয়েদের দ্বৈতে শিরোপাজয়ী শুয়াইয়েরই নাম। কিন্তু মেইলটা আদৌ শুয়াই করেছেন কি না, তিনি কেমন আছেন...সেসব নিয়ে শঙ্কা জানাচ্ছে ডব্লুটিএ-ই!
ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহারে অনেক বিধিনিষেধ আরোপ করে রাখা চীনে টুইটারের বিকল্প নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েইবো। সেই ওয়েইবোতে ২ নভেম্বর পেং শুয়াই পোস্টে অভিযোগ তোলেন চীনের সাবেক ভাইস প্রিমিয়ার ঝ্যাং গাওলির বিরুদ্ধে। পোস্টে শুয়াই লেখেন, গাওলি তাঁকে যৌন সম্পর্কে বাধ্য করেন।
শুয়াইয়ের পোস্ট এমন একসময়ে এসেছে, যখন আগামী ফেব্রুয়ারিতে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠেয় শীতকালীন অলিম্পিকের প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন, অন্যদিকে দেশটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে চীন থেকে অলিম্পিক সরিয়ে নেওয়ার দাবি করে আসছে মানবাধিকারবিষয়ক অনেক বৈশ্বিক সংগঠন।
শুয়াই ২ নভেম্বর পোস্টটি করার প্রায় আধা ঘণ্টা পর থেকে তা আর দেখা যায়নি। পোস্ট তো পরের কথা, শুয়াইকেই এরপর থেকে আর দেখেননি কেউ! এ নিয়ে টেনিস-বিশ্ব এমনিতেই উদ্বিগ্ন, এর মধ্যে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে শুয়াইকে ‘প্রেরক’ হিসেবে দেখানো মেইল।
গতকাল ডব্লুটিএর কাছে সেই মেইলটি শুয়াই করেছেন বলে দাবি করছে চীনের রাষ্ট্রচালিত টিভি চ্যানেল সিসিটিভির ওয়েবসাইটের ইংরেজি সংস্করণ সিজিটিএন। সংবাদমাধ্যমটির দাবি, মেইলে শুয়াই আগের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। পাশাপাশি সিজিটিএনের দাবি, মেইলে নিজের অবস্থা ও অবস্থান নিয়ে শুয়াই লিখেছেন, ‘আমি নিখোঁজ হয়ে যাইনি। আমার নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত নই। আমি শুধুই বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছি, এই যা! সবকিছু ঠিকঠাকই আছে।’
কিন্তু মেইলের প্রাপক যিনি, ডব্লুটিএর প্রধান সেই স্টিভ সিমন মেইলটা পাওয়ার পর থেকে শুয়াইয়ের নিরাপত্তা নিয়ে আরও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। ‘চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে পেং শুয়াইকে নিয়ে যে বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে, এরপর তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে এবং তিনি কোথায় আছেন, সেটি নিয়ে আমার দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে গেছে। পেং শুয়াই-ই আসলে মেইলটি লিখেছেন, এটা বিশ্বাস করতে পারছি না’—বিবৃতিতে লিখেছেন সিমন।
শুয়াই শুরুতে যে অভিযোগ করেছেন, সেটি নিয়ে এত দিনেও বেইজিংয়ের দিক থেকে কিছু বলা হয়নি। চীনের নিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট ব্যবস্থায় শুয়াইয়ের এসব ব্যাপার নিয়ে আলোচনাই ব্লক করে রাখা হয়েছে। চীনের টেনিস অ্যাসোসিয়েশনও এ নিয়ে মন্তব্য করেনি। চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত চ্যানেল সিসিটিভি এবং সেটির ইংরেজি সংস্করণের ওয়েবসাইট সিজিটিএন ছাড়া দেশটির কোনো সংবাদমাধ্যমও শুয়াইয়ের পুরো ঘটনা নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত খবর প্রকাশ করেনি।
তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ানকে আজ প্রশ্ন করা হয়েছিল শুয়াইয়ের অবস্থান এবং অলিম্পিকের আগে তাঁর ঘটনার কারণে চীন উদ্বিগ্ন কি না, সেটি নিয়ে। লিজিয়ান উত্তরে বলেছেন, ‘আমার উত্তর সহজ। এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার নয়, আপনি যে পরিস্থিতির কথা বলছেন সেটা নিয়ে আমি পুরোপুরি জানিও না।’
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাভিত্তিক ডব্লুটিএ এবং লন্ডনভিত্তিক ছেলেদের টেনিসের সংগঠন এটিপি এর আগে চীনকে আহ্বান জানিয়েছিল, যাতে শুয়াইয়ের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত হয়। মেয়েদের টেনিসের জাপানি তারকা নাওমি ওসাকাসহ অনেকে শুয়াইয়ের সমর্থনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়েছেন।
আর ডব্লুটিএর প্রধান সিমন লিখেছেন, ‘ডব্লুটিএ এবং বাকি বিশ্বের সবার চাওয়া, তিনি (শুয়াই) যে নিরাপদে আছেন, সে নিয়ে স্বাধীন ও পরীক্ষা করার মতো প্রমাণ দেওয়া হোক। আমি যোগাযোগের নানা মাধ্যম ব্যবহার করে তাঁর কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোনোভাবেই কোনো লাভ হয়নি।’
৩৫ বছর বয়সী শুয়াই মেয়েদের টেনিসের যৌথ বিভাগে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠা প্রথম চীনা খেলোয়াড়। ২০১৪ সালে ডাবলসের র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠেছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে উইম্বলডন এবং পরের বছরের ফ্রেঞ্চ ওপেনে মেয়েদের যৌথ বিভাগে শিরোপাও জেতেন শুয়াই।
]আর যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ শুয়াইয়ের, সেই সাবেক ভাইস প্রিমিয়ার ঝ্যাং ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চীনের ভাইস প্রিমিয়ার ছিলেন। এর বাইরে ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতাদের নিয়ে গড়া ‘পোলিতবুরো স্ট্যান্ডিং কমিটি’তে কাজ করেছেন।