অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা জিতে বাবার স্বপ্ন পূরণ সাবালেঙ্কার

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ট্রফি হাতে আরিনা সাবালেঙ্কারয়টার্স

এক নম্বর নয়, বেলারুশের তারকা আরিনা সাবেলেঙ্কা অস্ট্রেলিয়ান ওপেন খেলতে এসেছেন র‌্যাঙ্কিংয়ের ২ নম্বর খেলোয়াড় হিসেবে। ফাইনালে আজ তাঁর প্রতিপক্ষ কিনওয়েন ঝেং ছিলেন ১২তম বাছাই। এরপরও মেলবোর্নে আজ দুজনের শিরোপা–নির্ধারণী ম্যাচটি নিয়ে উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না টেনিস বিশ্বের। এ ম্যাচকে দেখা হচ্ছিল ‘মেয়েদের আধুনিক টেনিসের সৌন্দর্যের প্রদর্শনী’ হিসেবে।

কিন্তু লড়াইটা তেমন হলো কই! একপেশে এক ম্যাচে ঝেংকে ৬–৩, ৬–২ গেমে উড়িয়ে দিয়ে ৪ বছর আগে পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়া বাবার একটি পুরোনো স্বপ্ন পূরণ করেছেন সাবালেঙ্কা।

মাত্র ৭৬ মিনিটেই শেষ হয়েছে এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালের রোমাঞ্চ। ম্যাচ শুরু হওয়ার ২ মিনিট পরই প্রথম গেমটি জিতে নেন সাবালেঙ্কা। খানিক পরই ঝেংয়ের সার্ভ ব্রেক করে এগিয়ে যান ২–০তে। এরপর নিজের সার্ভ থেকে স্কোরলাইন করেন ৩–০! কিছু বুঝে ওঠার আগেই যেন ম্যাচটি হাত ফসকে যেতে থাকে ঝেংয়ের।

ঝেংকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে সেরেনার একটি কীর্তি ছুঁয়েছেন সাবালেঙ্কা
এএফপি

ঝেং অবশ্য পরের গেমে ঘুরে দাঁড়ান। সহজেই জিতে স্কোরলাইন করেন ৩–১। কিন্তু নিজের সার্ভ পেয়ে সাবালেঙ্কা সেটা করে ফেলেন ৪–১। ম্যাচের তখন মাত্র ১৬ মিনিট কেটেছে। সাবালেঙ্কার প্রথম সেট জেতা যখন সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল, তখনই আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে সাবালেঙ্কার সার্ভ ব্রেক করে সপ্তম গেমটি জিতে নেন ঝেং। পরের গেমটিও জিতে স্কোরলাইন করেন ৫–৩। কিন্তু প্রথম সেটটি ৯ গেমের ওপারে যেতে দেননি সাবালেঙ্কা। ৩৩ মিনিটেই ৬–৩ গেমে জিতে নেন প্রথম সেট।

প্রথম সেটটা যেখানে শেষ করেছিলেন, দ্বিতীয় সেটটা যেন সেখান থেকেই শুরু করেন সাবালেঙ্কা। ঝেংয়ের সার্ভ ব্রেক করে জিতে নেন প্রথম গেম। এরপর নিজের সার্ভে করেন ২–০। এই সেটে ঝেং গুরে দাঁড়ান তৃতীয় গেমেই। কিন্তু ওই পর্যন্তই। এবারের সেটটা সাবালেঙ্কা শেষ করেন ৮ গেমের মধ্যে, জেতেন ৬–২ গেমে। এই সেটের শেষ দিকে চারবার চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট সেভ করে সাবালেঙ্কাকে ম্যাচ পয়েন্টটা নিতে কিছুটা বিলম্ব করানো ছাড়া আর কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেননি ঝেং।

ম্যাচ শেষে ঝেংকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন সাবালেঙ্কা
এএফপি

ফাইনালটা কি এমন একপেশে হওয়ার কথা ছিল? ম্যাচের আগে টেনিস পণ্ডিতেরা বলছিলেন-মেলবোর্নের রড লেভার অ্যারেনায় লড়াইটা সমানে সমানই হতে যাচ্ছে। সাবালেঙ্কা ও ঝেংয়ের খেলার ধরন বিশ্লেষণ করেই এমনটা বলেছিলেন তাঁরা। দুজনেরই শক্তির জায়গায় দারুণ মিল-সার্ভে ভালো এবং ফোরহ্যান্ডে দুর্দান্ত। কিন্তু বেসলাইনে ভালো খেলার কারণে কিছুটা হলেও কেউ কেউ এগিয়ে রাখছিলেন ঝেংকে।

কিন্তু সাবালেঙ্কা শুরু থেকেই নিজের সবচেয়ে শক্তির জায়গা সার্ভ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। তিনি সার্ভগুলো করছিলেন ঝেংয়ের শরীর থেকে একটু দূরে। ফলে ফোরহ্যান্ড শটটাকে খুব ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারছিলেন না ঝেং। এ ছাড়া সাবালেঙ্কা শটগুলোও খেলছিলেন খুব গতিতে। সেই গতির সঙ্গেও মানিয়ে উঠতে পারছিলেন না ২১ বছর বয়সী মেয়ে।

সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে বেলারুশের এক বাবা আর তাঁর মেয়ের একটি স্বপ্নই পূরণ হলো। চার বছর আগে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন সাবালেঙ্কার বাবা। মারা যাওয়ার আগে তিনি মেয়েকে বলে গিয়েছিলেন নিজস্ব একটি স্বপ্নের কথা-আমি চাই, ২৫ বছরের মধ্যে তুমি অন্তত দুটি গ্র্যান্ড স্লাম জেত!

সাবালেঙ্কা যখন বছরের পরবর্তী গ্র্যান্ড স্লাম ফ্রেঞ্চ ওপেনে খেলতে নামবেন, পা রাখবেন ২৬-এ। এর আগেই তো আজ দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা জিতে ফেললেন সাবালেঙ্কা।