জাবিরকে হারিয়ে ইতিহাসের পাতায় সিওনতেক

এই ইউএস ওপেনের ট্রফি এখন আমার– এমনটাই যেন বোঝাতে চাইলেন সিওনতেক।ছবি: এএফপি

দুজনকেই ডাকছিল ইতিহাস।

প্রথম আফ্রিকান নারী হিসেবে উইম্বলডনের ফাইনালে উঠে গত জুলাইয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন উনস জাবির। আর ইউএস ওপেনের ফাইনালে উঠে গড়েছেন আরেক ইতিহাস—টেনিসের উন্মুক্ত যুগে এই টুর্নামেন্টের প্রথম আফ্রিকান নারী। ফাইনাল জিততে পারলে হয়ে যেত আরও বড় ইতিহাস।

অন্যদিকে এর আগে দুটি গ্র্যান্ড স্লামের শিরোপা জেতা ইগা সিওনতেকের সামনেও ছিল ইতিহাসের হাতছানি—প্রথম পোলিশ নারী হিসেবে ইউএস ওপেন জয়ের হাতছানি। বাংলাদেশ সময় কাল রাতে তিউনিসিয়ার জাবিরকে ৬-২, ৭-৬ (৭/৫) গেমে হারিয়ে ইতিহাসকে আলিঙ্গন করেছেন মেয়েদের টেনিসের এক নম্বর তারকা সিওনতেকই।

নিউইয়র্কে আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামের ফাইনাল জিতে ২১ বছর বয়সী সিওনতেক এ বছরে দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্লামের শিরোপা ঘরে তুললেন। এর আগে জিতেছেন চলতি বছরের ফ্রেঞ্চ ওপেন। ২০২০ সালে তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপাও ছিল ফ্রেঞ্চ ওপেন।

সব টুর্নামেন্ট মিলিয়ে এ নিয়ে টানা দশম ফাইনাল জিতলেন সিওনতেক। শিরোপানির্ধারণী ম্যাচে তাঁর এই জয়যাত্রা শুরু হয়েছে তিন বছর আগে লুগানোতে ক্যারিয়ারের প্রথম ডব্লুটিএ ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর থেকেই।

বিশ্বের এক নম্বর তারকা হলেও এবারের ইউএস ওপেন সিওনতেক ফেবারিট হিসেবে শুরু করেননি। ম্যাচ শেষেও সেটিই বললেন তিনি, ‘নিশ্চিত ছিলাম না যে আমি গ্র্যান্ড স্লামের শিরোপা জয়ের মতো পর্যায়ের পারফর্ম করছি কি না; বিশেষ করে ইউএস ওপেনে, যেখানে কোর্ট খুবই দ্রুতগতির।’

আরও পড়ুন

পুরো ছন্দে না থেকেও গ্র্যান্ড স্লামের শিরোপা জয়ের পর সিওনতেকের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গস্পর্শী, ‘এটা সত্য যে আমি এমন কিছু প্রত্যাশা করিনি। তাই এটা আমার নিজের জন্য একটা বার্তা যে আকাশই সীমানা।’ সব মিলিয়ে অনেক কিছুর মিশেলে অন্য রকম একটা অনুভূতিই হচ্ছিল পোলিশ তরুণীর, ‘আমি গর্বিত, আবার কিছুটা বিস্মিতও। এমন কিছু করতে পেরে আমি আনন্দিত।’
আরও একবার আফ্রিকার প্রথম মেয়ে হিসেবে গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের ইতিহাসের খুব কাছে গিয়েও পারলেন না জাবির। ২৮ বছর বয়সী তিউনিসিয়ান মেয়ে এর আগে জুলাইয়ে উইম্বলডনের ফাইনালে হেরেছেন রাশিয়ায় জন্ম নেওয়া কাজাখস্তানের খেলোয়াড় এলেনা রিবাকিনার কাছে।

এবার সিওনতেকের কাছে হেরে আবারও তীরে গিয়ে তরি ডোবার আক্ষেপ হওয়ার কথা জাবিরের। ম্যাচ শেষে অবশ্য কোনো আক্ষেপ নেই বলেই জানালেন, ‘আমার দুঃখ করার কিছু নেই। কারণ, আমি সম্ভাব্য সেরা চেষ্টাই করেছি।’ এভাবে তীরে গিয়ে বারবার তরি ডুবলেও হতাশ না হয়ে চেষ্টা করে যাওয়ার পক্ষে জাবির, ‘আমি আশা ছেড়ে দেওয়ার মানুষ নই। আমি জানি, আবার ফাইনাল খেলব এবং আমার সর্বোচ্চ চেষ্টাই করব।’

আরও পড়ুন

ফাইনালে ওঠার পথে এবারের ইউএস ওপেনে অসাধারণ খেলেছেন জাবির। ফাইনালে সরাসরি সেটে হারার আগে এবারের ইউএস ওপেনে মাত্র একটি সেটই হেরেছিলেন তিনি। কিন্তু ফাইনালে প্রথম সেটেই কেমন যেন ভেঙে পড়েন জাবির। ম্যাচের ৮ মিনিটের মধ্যে ৩-০ গেমে এগিয়ে যান সিওনতেক। তবে শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে পরের দুই গেম জিতে ৩-২ করেন জাবির। শেষ পর্যন্ত অবশ্য প্রথম সেটটা ৬-২ গেমেই হেরে যান তিনি।

দ্বিতীয় সেটেও জাবিরের সার্ভ ব্রেক করে ৩-০ গেমে এগিয়ে যান সিওনতেক। আগের সেটের মতোই এবারও ঘুরে দাঁড়িয়ে ৩-২ করেন জাবির। প্রথম সেটের মতো দ্বিতীয় সেটেও আরেকবার জাবিরের সার্ভ ব্রেক করে ব্যবধান ৪-২ করেন সিওনতেক।

আরও পড়ুন

এবার অবশ্য সহজে হাল ছাড়েননি জাবির। ঘুরে দাঁড়িয়ে স্কোরলাইন ৪-৪ করে ফেলেন। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের দ্বিতীয় সেটে একটা সময় স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৬-৬। টাইব্রেকেও প্রথমে পিছিয়ে পড়েছিলেন জাবির।

কিন্তু ৪-২ গেমে পিছিয়ে থাকা জাবির এবারও ঘুরে দাঁড়িয়ে এগিয়ে যান ৫-৪-এ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর জেতা হলো না জাবিরের। ইতিহাসকে আলিঙ্গন করার জন্য তাঁকে থাকতে হবে নতুন বছরের অপেক্ষায়।