আজারেঙ্কাও ছুঁয়ে ফেলবেন মার্গারেট কোর্টকে!

আজারেঙ্কাকে হাতছানি দিচ্ছে দারুণ এক কীর্তি।ছবি: রয়টার্স

২০১৮ সাল থেকেই অপেক্ষা। একেকটা গ্র্যান্ড স্লামে খেলেন সেরেনা উইলিয়ামস, আর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়—মার্গারেট কোর্টকে ছুঁয়ে ফেলবেন সেরেনা? কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান টেনিস কিংবদন্তিকে আর ছোঁয়া হয় না ২৩টি গ্র্যান্ড স্লামের মালিকের। ২৪ তম গ্র্যান্ড স্লামের অপেক্ষাটা তাঁর আর ফুরোয় না!

এবারও ফুরোল না! ২০১৭ সালে মা হওয়ার পর টেনিসে ফিরে চারটি গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনাল খেলেছেন। শিরোপার কাছাকাছি গিয়েও চারবারই ব্যর্থ সেরেনা এবার তো বিদায় নিয়েছেন ইউএস ওপেনের সেমিফাইনালেই। তাঁকে হারিয়েছেন যিনি, সেই ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কাও কিন্তু ছুঁয়ে ফেলতে পারেন কোর্টকে!

চোখ কপালে তুলবেন না! গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা সংখ্যায় নয়, বেলারুশ আজারেঙ্কা অন্য একটা ক্ষেত্রে ছুঁয়ে ফেলবেন অস্ট্রেলিয়ান টেনিস গ্রেটকে। মা হওয়ার পর হাতে গোনা যে তিনজন নারী খেলোয়াড় গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন, তাঁদের একজন মার্গারেট কোর্ট। আজ রাতে আজারেঙ্কা জিতলে সেই চ্যাম্পিয়ন মায়েদের কাতারে নাম লেখাবেন তিনিও।

মার্গারেট কোর্ট ছাড়া অন্য দুই চ্যাম্পিয়ন মা হলেন—ইভোন গুলাগং ও কিম ক্লাইস্টার্স। স্বামী, বাচ্চা, সংসার সামলে গ্র্যান্ড স্লাম জেতা চাট্টিখানি কথা নয়! উন্মুক্ত যুগের টেনিসে চ্যাম্পিয়ন টেনিস মায়েদের সংখ্যাটা তাই তিনেই সীমাবদ্ধ।

প্রথম সন্তানের জন্মের পরের বছর মার্গারেট কোর্ট ফিরেছিলেন পুরো ফিট হয়ে, চেনা ছন্দে। উইম্বলডন ছাড়া সে বছর বাকি তিনটিই গ্র্যান্ড স্লামই জিতেছিলেন তিনি।

প্রথম চ্যাম্পিয়ন মা হওয়ার কৃতিত্বটা মার্গারেট কোর্টের। তাঁর ২৪টি শিরোপার শেষ তিনটি জিতেছিলেন মা হওয়ার পরই। ১৯৭২ সালের মার্চে প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন কোর্ট। সে বছর ইউএস ওপেনে অংশ নিয়ে উঠেছিলেন সেমিফাইনালে। সেবার শেষ চারেই মা কোর্টের দৌড় শেষ হলেও পরের বছর ফিরেছিলেন পুরো ফিট হয়ে, চেনা ছন্দে। উইম্বলডন ছাড়া সে বছর বাকি তিনটিই গ্র্যান্ড স্লামই জিতেছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালে দ্বিতীয় সন্তানের মা হওয়ার জন্য টেনিস ছেড়ে দিয়েছিলেন কোর্ট। পরে ফিরে এসে ডব্লুটি টুর্নামেন্ট জিতলেও গ্র্যান্ড স্লামে আর সাফল্য পাননি। ১৯৭৫ সালে শেষ গ্র্যান্ড স্লাম হিসেবে ইউএস ওপেন খেলা কোর্ট টেনিস থেকে বিদায় নিয়েছিলেন ১৯৭৭ সালে, চতুর্থ সন্তান গর্ভে আসার পর।

মার্গারেট কোর্টের পর দ্বিতীয় মা হিসেবে গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ইভোন গুলাগং। ১৯৭৭ সালের মে মাসে কন্যা সন্তান কেলির জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। এর সাত মাস পরেই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে অংশ নিয়ে বাজিমাত করেছিলেন! মে’র পর সাত মাস হিসেব করলে আসে ডিসেম্বর! হ্যাঁ, সে বছর জানুয়ারিতে একটি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন হওয়ার পর ডিসেম্বরে হয়েছিল আরেকটি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। আর সে টুর্নামেন্টের ফাইনালে কোর্ট ৬-৩,৬-০ গোলে হারিয়েছিলেন গোরলেকে। এখানেই শেষ নয়, এর তিন বছর পর জিতেছিলেন উইম্বলডনও। উন্মুক্ত যুগের টেনিসে কোনো মায়ের উইম্বলডন জয়ের এটাই একমাত্র ঘটনা।

টেনিসের তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন মা অবশ্য এই প্রজন্মের টেনিস প্রেমীদের কাছেও চেনা—কিম ক্লাইস্টার্স। বিয়ে এবং মাতৃত্বের স্বাদ নেওয়ার জন্য ২০০৭ সালে টেনিসকে বিদায় বলেছিলেন। পরের বছর তাঁর কোল আলো করে জন্ম নেয় কন্যা সন্তান জাডা এলি। কিছুদিন যেতেই ক্লাইস্টার্স উপলব্ধি করেন, টেনিসকে দেওয়ার তাঁর এখনো অনেক বাকি! পরিকল্পনা করেই ২০০৯ সালে কোর্টে ফেরেন বেলজিয়ান এই টেনিস তারকা। ইউএস ওপেনে অংশ নিয়েই জিতে যান শিরোপা। পরের বছরও। এখানেই শেষ নয়, ২০১১ সালে জেতেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনও। ২০১২ সালে অবসরে গিয়ে আরও দুই সন্তানের মা হয়ে এ বছর কোর্টে ফিরেছেন ক্লাইস্টার্স।

তিন সন্তানের জননী ক্লাইস্টার্সের পক্ষে হয়তোবা আর গ্র্যান্ড স্লাম জয় সম্ভব নয়। করোনাকালের ইউএস ওপেনের প্রথম রাউন্ডে হেরে সেই বাস্তবতাও ঢের টের পেয়েছেন। তবে ‘মা’ ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কার পক্ষে আরেকটি গ্র্যান্ড স্লাম জয় খুবই সম্ভব। চোখ রাখুন বাংলাদেশ সময় আজ রাত দুটোর ইউএস ওপেনের মেয়েদের এককের ফাইনালে। টানা ১১ ম্যাচে অপরাজিত থাকা আজারেঙ্কা হয়তো চার বছর বয়সী ছেলে লিওকে নিয়ে এদিনই মেতে উঠবেন গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের উৎসবে!