গ্র্যান্ড স্লামে নাদাল–জোকোভিচের সেরা ৬ লড়াই

রাফায়েল নাদালকে ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে হারিয়েছিলেন নোভাক জোকোভিচ।ফাইল ছবি: রয়টার্স

৫৬তম বারের মতো টেনিস কোর্টে মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন রাফায়েল নাদাল ও নোভাক জোকোভিচ। এখনো চোখে লেগে আছে বা কখনোই মানুষ ভুলতে পারবে না—নাদাল-জোকোভিচের এমন লড়াইয়ের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে এই দুই তারকার লড়াইয়ের আগে দেখে আসা যাক গ্র্যান্ড স্লামে তাঁদের সেরা ছয়টি টেনিস অমরাবতীর গল্প।


বিজয়ী যখন জোকোভিচ


অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ফাইনাল
, ২০১২

ফল: জোকোভিচ ৫-৭, ৬-৪, ৬-২, ৬-৭ (৫/৭), ৭-৫

গ্র্যান্ড স্লামের ইতিহাসে দীর্ঘতম ফাইনাল এটি। ম্যাচটি শেষ হতে সময় লেগেছিল ৫ ঘণ্টা ৫৩ মিনিট। পঞ্চম সেটে ৪-২-এ পিছিয়ে পড়েছিলেন নোভাক জোকোভিচ। তবে রাফায়েল নাদাল ও জোকোভিচের টানা তৃতীয় গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনালটি শেষ পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতে নেন জোকোভিচই। এই জয়ে নাদালের বিপক্ষে টানা জয়ের সংখ্যাটাও সাতে নিয়ে যান সার্বিয়ান তারকা। এটাই তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা ম্যাচ কি না—এই প্রশ্নের উত্তরে জোকোভিচ বলেছিলেন, ‘আমি এটাকেই সেরা বলব। আর এটা শুধু এই কারণে যে ম্যাচটি আমরা প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে খেলেছি। এটা ছিল অসাধারণ এক ব্যাপার। আর নাদালের কথা? ‘শারীরিক দিক থেকে আমার খেলা সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ ছিল এটা’—বলেছেন স্পেনের তারকা।

এবার কি নাদালকে হারাতে পারবেন জোকোভিচ?
ছবি: রয়টার্স

ফ্রেঞ্চ ওপেন কোয়ার্টার ফাইনাল, ২০১৫

ফল: জোকোভিচ ৭-৫, ৬-৩, ৬-১

এই ম্যাচ দিয়েই ২০০৯ সালে রবিন সোদারল্যান্ডের পর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে রোলাঁ গারোর লাল দুর্গে রাফায়েল নাদালকে হারিয়েছেন জোকোভিচ। ম্যাচটি জিতে নিজের ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন সার্বিয়ান তারকা। কিন্তু ফাইনালে তিনি হেরে যান সুইস স্তানিস্লাস ভাভরিঙ্কার কাছে। তবে পরের বছরই জোকোভিচ অ্যান্ডি মারেকে হারিয়ে নিজের প্রথম ফ্রেঞ্চ ওপেন জেতেন।

নাদালের বিপক্ষে ২০১৫ সালের কোয়ার্টার ফাইনাল জয় নিয়ে জোকোভিচ বলেছিলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই এটা বড় এক জয়, ম্যাচটি আমি অনেক দিন মনে রাখব।’ ম্যাচ শেষে নাদালের কথা ছিল, ‘খুব সহজ কথা, এ ম্যাচে সে আমার চেয়ে ভালো খেলেছে।’

উইম্বলডন সেমিফাইনাল, ২০১৮

ফল: জোকোভিচ ৬-৪, ৩-৬, ৭-৬ (১১/৯), ৩-৬, ১০-৮

উইম্বলডনে যাওয়ার আগে ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে বিস্ময়করভাবে সেই সময়ে র‌্যাঙ্কিংয়ের ৭২ নম্বরে থাকা ইতালিয়ান মার্কো চেক্কিনাতোর কাছে হেরে গিয়েছিলেন জোকোভিচ। এরপর তো তিনি উইম্বলডনে খেলতে না যাওয়ার কথাও ভাবছিলেন।

শেষ পর্যন্ত উইম্বলডনে গেছেন জোকোভিচ এবং সেমিফাইনালে নাদালের সঙ্গে লিখলেন আরেকটি টেনিস-অমরাবতী। পঞ্চম সেটে পাঁচটি ব্রেক পয়েন্ট বাঁচিয়ে হারিয়ে দিলেন নাদালকে। ৫ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের ম্যাচটি শেষে জোকোভিচ বলেছিলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম দীর্ঘ ম্যাচ ছিল এটা। আমি খুব খুশি।’ নাদালের প্রতিক্রিয়া ছিল এ রকম, ‘আমি আসলে আমার মধ্যেই যেন ছিলাম না!’

৫৬তম বারের মতো জোকোভিচের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন রাফায়েল নাদাল।
ছবি: রয়টার্স

বিজয়ী যখন নাদাল

ফ্রেঞ্চ ওপেন ফাইনাল, ২০১২

ফল: নাদাল ৬-৪, ৬-৩, ২-৬, ৭-৫

বৃষ্টির বাধায় পড়া ফাইনালটি শেষ হয়েছিল দুই দিনে। নাদাল দুটি সেট জেতার পর টানা আটটি গেম জেতেন জোকোভিচ। নিজেকে গুছিয়ে নিতে নাদাল একটু বিরতি নেন। নাদালকে ঘুরে দাঁড়াতে সময় দিয়েছিল বৃষ্টিও। জোকোভিচ তৃতীয় সেটটি জয়ের পর বৃষ্টিতে আর প্রথম দিন খেলা হয়নি। ২-১-এ এগিয়ে থেকে পরের দিন আবার খেলা শুরু করেন নাদাল। ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতে নেন ৩ ঘণ্টা ৪৯ মিনিটের লড়াই।

ম্যাচ শেষে নাদাল বলেছিলেন, ‘আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জিততে পারা সম্মানের বিষয়। এটি আমার কাছে স্মরণীয় এক মুহূর্ত।’ জোকোভিচ হারের দায় চাপিয়েছেন আবহাওয়ার ওপর, ‘কন্ডিশন ভালো ছিল না। কিন্তু এটা কারও দোষ নয়। আর আজকে আমার হেরে যাওয়ার কারণও এটা নয়।’

ফ্রেঞ্চ ওপেন সেমিফাইনাল, ২০১৩

ফল: নাদাল ৬-৪, ৩-৬, ৬-১, ৬-৭ (৩/৭), ৯-৭

জোকোভিচের সামনে হাতছানি ছিল অষ্টম খেলোয়াড় হিসেবে ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের কীর্তি গড়ার। আর নাদালের ছিল ফ্রেঞ্চ ওপেনে অষ্টম শিরোপা জয়ের লক্ষ্য। ওই মৌসুমের শুরুর দিকে মন্তে কার্লোর ক্লে কোর্টে নাদালকে হারিয়ে কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন জোকোভিচ। কিন্তু রোলাঁ গারোর সেমিফাইনালে প্রথম তিন সেটের দুটি জিতে এগিয়ে যান নাদাল। চতুর্থ সেটেও ৬-৫-এ এগিয়ে গিয়েছিলেন। ঠিক সেই সময় জোকোভিচ ঘুরে দাঁড়িয়ে চতুর্থ সেটটি জিতে নন। পঞ্চম সেটেও এগিয়ে যান ৪-২-এ। তবে শেষ পর্যন্ত ক্লে কোর্টের রাজা নাদালের সঙ্গে পেরে ওঠেননি।

ম্যাচ শেষে প্রতিপক্ষ জোকোভিচকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন নাদাল, ‘নোভাককে অভিনন্দন। সে অসাধারণ এক খেলোয়াড়। আমি নিশ্চিত একদিন সে রোলাঁ গারোতে শিরোপা জিতবে।’ জোকোভিচ বলেছিলেন, ‘অসাধারণ একটি ম্যাচ হয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি হতাশ। তবে তাকে (নাদাল) অভিনন্দন। এ অবস্থা থেকেও ম্যাচ জিততে পারে বলেই সে চ্যাম্পিয়ন।’

২০১৪ সালের ফ্রেঞ্চ ওপেনের মতো এবারও কি জোকোভিচকে উড়িয়ে দেবেন নাদাল?
ছবি: রয়টার্স

ফ্রেঞ্চ ওপেন ফাইনাল, ২০১৪

ফল: নাদাল ৩-৬, ৭-৫, ৬-২, ৬-৪

আরও একবার জোকোভিচকে ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্লাম জয় থেকে বঞ্চিত করলেন নাদাল। আর জোকোভিচকে হারিয়ে তিনি হয়ে হেলেন নির্দিষ্ট একটি গ্র্যান্ড স্লামে সর্বোচ্চ ৯টি শিরোপা জেতা প্রথম খেলোয়াড়। সব মিলিয়ে এটা ছিল তাঁর ১৪তম গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা। প্রথম সেটটি জিতলেও নাদালের কাছে সেবারের ফাইনালে উড়েই গিয়েছিলেন জোকোভিচ।