টেনিসে আজ মায়েদের ফাইনালে ওঠার লড়াই

সেমিফাইনালে মুখোমুখি দুই মা, দুই বন্ধু সেরেনা উইলিয়ামস ও ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা।ফাইল ছবি

দুই মা। একজনকে ডাকছে ইতিহাস। আর একবার চ্যাম্পিয়ন হলেই যে মেয়েদের গ্র্যান্ড স্লাম টেনিস জয়ের রেকর্ডে মার্গারেট কোর্টের পাশে নাম লেখাবেন সেরেনা উইলিয়ামস।

আরেকজনের সামনে অবশ্য রেকর্ড-টেকর্ডের কোনো হাতছানি নেই। তাঁর ট্রফি কেসে  গ্র্যান্ড স্লাম ট্রফি মাত্র দুটি। তৃতীয়টি কি এবারের ইউএস ওপেন থেকেই নিয়ে যাবেন ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা?

এবারের ইউএস ওপেনে এখন পর্যন্ত টিকে থাকা দুই মায়ের একজনকে অবশ্য থেমে যেতে হবেই আজই। বাংলাদেশ সময় শেষ রাতে যে সেমিফাইনালে মুখোমুখি সেরেনা উইলিয়ামস ও ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা।

গতকাল রাতে অবাছাই সভেতানা পিরঙ্কোভাকে হারিয়ে শেষ চারে উঠেছেন সেরেনা। ম্যাচের প্রথম সেটটা জিতে তো সেরেনার রেকর্ড ছোঁয়ার স্বপ্ন কোয়ার্টার ফাইনালেই থামিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন বুলগেরিয়ার পিরঙ্কোভা। পিরঙ্কোভা জিতলেও অবশ্য মন্দ হতো না, পাওয়া যেত আরেক মায়ের গল্প। ২০১৮ সালে ছেলের মা হওয়া পিরঙ্কোভা টেনিসে ফিরেছেন তিন বছরেরও বেশি সময় পর। শুধু কি অবাছাই, ইউএস ওপেন খেলার সময় ডব্লুটিএ র‌্যাঙ্কিংয়েও ছিল না ৩২ বছর বয়সী বুলগেরিয়ানের নাম।

এটি (ম্যাচ) আমাকে দেখিয়ে দিল মায়েরা কতটা শক্ত হতে পারে। আপনি সন্তান জন্ম দিয়েছেন মানে হলো আপনি সবকিছুই করতে পারেন।
সেরেনা উইলিয়ামস
সেরেনার কাছে হেরে হাসিমুখেই বিদায় নিয়েছেন সভেতানা পিরঙ্কোভা (বাঁয়ে)
ছবি: এএফপি

২০১৮ সালে এপ্রিলে মা হওয়ার পর আবারও টেনিসে ফিরবেন কিনা তাই নিয়ে সংশয়ে ছিলেন পিরঙ্কোভা। সেই মেয়ের মন থেকে এবার নিশ্চয়ই সব দোলাচল দূর হয়েছে ক্যারিয়ার নিয়ে। সেরেনার কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে ৬-৪, ৩-৬, ২-৬ গেমে হারলেও ক্যারিয়ার এগিয়ে নেওয়ার বিশ্বাসটা অন্তত রোপণ করে নিয়েছেন নিজের মধ্যে।

কঠিন এক ম্যাচ শেষে ২৪তম গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের পথে আরেক ধাপ এগোলেন তিন বছর বয়সী অলিম্পিয়ার মা সেরেনা। আরেক মাকে হারানোর পর অবশ্য মাতৃত্বের জয়গানই গাইলেন মার্কিন টেনিস তারকা, ‘এটি (ম্যাচ) আমাকে দেখিয়ে দিল মায়েরা কতটা শক্ত হতে পারে। আপনি সন্তান জন্ম দিয়েছেন মানে হলো আপনি সবকিছুই করতে পারেন। আমার মনে হয় সভেতানার (পিরঙ্কোভা) মাধ্যমে আমরা সেটি আজ দেখলাম।’

এক মা বিদায় নিয়েছেন। টিকে থাকা দুই মায়ের আরেকজনও যাবেন আজ। সেরেনা না আজারেঙ্কা, টিকে থাকবেন কে? র‌্যাঙ্কিং ও ইতিহাসে ভরসা রাখলে ৩৮ বছর বয়সী সেরেনাই ফেবারিট সাত বছরের ছোট আজারেঙ্কার চেয়ে। ডব্লুটিএর সর্বশেষ র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরেনা আছেন আটে, অন্যদিকে আজারেঙ্কা আছেন ২৭ নম্বরে। দুজনের মুখোমুখি লড়াইয়ে ১৮-৪ ব্যবধানে এগিয়ে সেরেনা। ২০১২ ও ২১০৩ সালে টানা দুবার ফাইনালে আজারেঙ্কাকে হারিয়েই ইউএস ওপেন জিতেছিলেন উইলিয়ামস বোনদের ছোটজন। দুবারই ম্যাচ গড়িয়েছিল তৃতীয় সেটে।

সেই সময়ে অবশ্য সেরেনার এক নম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আজারেঙ্কাই। ২০১২ ও ২০১৩ সালে বেশির ভাগ সময়ে র‌্যাঙ্কিং শ্রেষ্ঠত্বও ছিল বেলারুশ কন্যার। মাতৃত্বের স্বাদ নেওয়ার আগে সেরেনা-আজারেঙ্কার সর্বশেষ লড়াইয়ে জিতেছিলেন আজারেঙ্কাই। ক্যালিফোর্নিয়ায় ইন্ডিয়ান ওয়েলস ওপেনটা সেরেনাকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু এরপরই গর্ভে সন্তান ধারণ করে টেনিস থেকে দূরে সরে যান আজারেঙ্কা। ২০১৭ সালে ফিরলেও আগের ফর্মে আর ফিরতে পারছিলেন না তিনি। পরে তো ছেলে লিওকে কাছে রাখতে আইনি লড়াইয়ে নেমে আদালতেই বেশি সময় কাটাতে হয়েছিল আজারেঙ্কাকে।

টেনিস কোর্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা অবশ্য প্রভাব ফেলেনি সেরেনা-আজারেঙ্কার বন্ধুত্বে। ২০১৭ সালে সেরেনা গর্ভে সন্তান ধারণের পর টেনিস থেকে সরে দাঁড়ালে শুভকামনা জানিয়েছিলেন আজারেঙ্কা, ‘আশা করছি সে ফিরবে ও আমরা আরও কিছু লড়াই করতে পারব। তাঁকে (সেরেনা) ছাড়া আমি ট্যুরের কথা কল্পনাও করতে পারি না।’
মা হয়ে টেনিসে ফেরার দুজনের মাত্র একবারই দেখা হয়েছে। গত বছর ইন্ডিয়ান ওয়েলসের দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচটিও জমজমাট লড়াই উপহার দিয়েছিল। সেরেনা জিতেছিলেন ৭-৫, ৬-৩ গেমে।

এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে? আমার জন্য এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না। আমি রোমাঞ্চিত। চ্যাম্পিয়ন এক খেলোয়াড়ের বিপক্ষে খেলার কী দারুণ এক সুযোগ, যাকে কিনা আমি আমি প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করি। তিনি আমার বন্ধুও বটে।’
ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা

আজারেঙ্কার বিশ্বাস সেরেনা তাঁর সেরাটা তাঁদের লড়াইয়ের জন্য তুলে রাখেন। এবার কী হবে কী জানে। তবে এবারের ইউএস ওপেনে সেরেনার চেয়ে এ পর্যন্ত আজারেঙ্কাই তরতর করে এগিয়েছেন। কাল রাতে তো ১৬তম বাছাই বেলজিয়ামের এলিসে মের্তেনসকে ৬-১, ৬-০ গেমে উড়িয়ে দিয়েই শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছেন।

সেরেনার সঙ্গে আবার দেখা হচ্ছে কোর্টে সেটিই ভেবেই রোমাঞ্চিত আজারেঙ্কা। মের্তেনসকে হারানোর পর বললেন, ‘এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে? আমার জন্য এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না। আমি রোমাঞ্চিত। চ্যাম্পিয়ন এক খেলোয়াড়ের বিপক্ষে খেলার কী দারুণ এক সুযোগ, যাকে কিনা আমি আমি প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করি। তিনি আমার বন্ধুও বটে।’

সেরেনা মা হওয়ার পর টেনিস ফেরার পর থেকেই প্রতিটি গ্র্যান্ড স্লাম শুরু করেছেন মার্গারেট কোর্টের রেকর্ড ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে। প্রতিবারই অবশ্য হতাশ হতে হয়েছে। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে তো উইম্বলডন ও ইউএস ওপেন মিলিয়ে চারটি ফাইনালে হেরেছেন সেরেনা।

২০১৮ সালের ইউএস ওপেনের ফাইনালে নাওমি ওসাকার বিপক্ষে খেলার সময় তো মেজাজ হারিয়ে চেয়ার আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে মেতেছিলেন সেরেনা। গত বছরের ফাইনালে সেই সেরেনা হেরেছেন কানাডিয়ান কিশোরী বিয়াঙ্কা আন্দ্রেস্কুর কাছে।
এবার কি ও সব স্মৃতি কী পেছনে ফেলতে পারবেন সেরেনা? তার আগে অবশ্য আজ মায়েদের লড়াইয়ে পেছনে ফেলতে হবে বন্ধু আজারেঙ্কাকে।