ফেদেরারকে টপকানোর চাপেই কি ভেঙে পড়লেন নাদাল?

নাদাল হেরে গেলেন সিৎসিপাসের কাছে।ছবি: রয়টার্স

বন্ধু দুজন। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীও। রজার ফেদেরার আর রাফায়েল নাদালের বন্ধুত্ব আর তাঁদের দ্বৈরথ নিয়ে কম উপাখ্যান তো লেখা হয়নি। এ যাত্রায় দ্বৈরথে বন্ধু ফেদেরারকে টপকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল নাদালের। সুইস কিংবদন্তির রেকর্ড ২০টি গ্র্যান্ড স্লামে ভাগ তো গত ফ্রেঞ্চ ওপেনেই বসিয়েছেন নাদাল, এবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে সুযোগ ছিল ফেদেরারকে ছাপিয়ে উন্মুক্ত যুগে ছেলেদের এককে সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের রেকর্ড গড়ার।

কিন্তু সেই চাপেই কি ভেঙে পড়লেন নাদাল? ক্যারিয়ারে এর আগে যে তেতো স্বাদ মাত্র দুবার পেয়েছিলেন, সেটিই আজ আবার পেলেন স্প্যানিশ টেনিস কিংবদন্তি। দুই সেটে এগিয়ে গিয়েও গ্রিসের স্তেফানোস সিৎসিপাসের কাছে নাদাল হেরে গেছেন ৬-৩, ৬-২, ৬-৭ (৪/৭), ৪-৬, ৫-৭ গেমে। কোয়ার্টার ফাইনালেই শেষ হয়ে গেল নাদালের ২০২১ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন অভিযান।

চোটের কারণে ফেদেরার খেলছেন না। ছেলেদের টেনিসে সময়ের আলোচিত তারকাদের মধ্যে ডমিনিক থিম, আলেক্সান্দার জভেরভ, গ্রিগর দিমিত্রভ, দিয়েগো শোয়ার্টজমান আগেই বিদায় নিয়েছেন। নাদালের শিরোপা জেতার সম্ভাবনা-সুযোগ তাতে আরও বেড়েছে।

নাদালের শিরোপার পথে সবচেয়ে বড় বাধা ও র‍্যাঙ্কিং শীর্ষে থাকা নোভাক জোকোভিচ অবশ্য চোট নিয়েও দারুণ দাপটে খেলে যাচ্ছেন, উঠে গেছেন সেমিফাইনালে। কিন্তু জোকোভিচের সবচেয়ে বেশি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের রেকর্ডটাকে ৮ থেকে ৯-এ নেওয়ার আর সব মিলিয়ে গ্র্যান্ড স্লামের সংখ্যাকে ১৭ থেকে ১৮-তে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ বেড়ে গেল নাদালের বিদায়ে।

অথচ দুই সেট পরেও বাছাইয়ে দ্বিতীয় নাদালের সেমিফাইনালে ওঠা সময়ের ব্যাপারই মনে হচ্ছিল। ক্যারিয়ারে এর আগে শুধু দুবারই দুই সেটে এগিয়ে গিয়েও ম্যাচ হেরেছিলেন নাদাল, ২০০৫ সালে মায়ামিতে রজার ফেদেরারের বিপক্ষে আর ২০১৫ ইউএস ওপেনে ফাবিও ফগনিনির বিপক্ষে।

ম্যাচে ৪৯টি উইনার আর ১৭টি এইস মারা সিৎসিপাস নাদালকে তৃতীয়বারের মতো সে তেতো স্বাদ উপহার দেওয়ার পর বলছিলেন, ‘তৃতীয় সেট থেকে কী হলো আমি নিজেও জানি না। ছোট পাখির মতো হালকা মনে হচ্ছিল নিজেকে। সবকিছু আমার পক্ষে যাচ্ছিল।’

দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জিতেছেন সিৎসিপাস।
ছবি: রয়টার্স

মেলবোর্নের আর্দ্র আবহাওয়ায় বেশ ঘাম ঝরেছে নাদালের। প্রথম দুই সেটে তবু নিজের সেরা ছন্দেই ছিলেন। সিৎসিপাসকে কোর্টের এ মাথা-ও মাথা দৌড়িয়ে মেরেছেন। কিন্তু ঘাম আর ক্লান্তিই কি তৃতীয় সেটে নাদালকে ভোগাল? তৃতীয় সেটে নাদালের ভুল খেলার পুরো ফায়দা তুলে নিয়ে সেটে টাইব্রেকে নিয়ে যান সিৎসিপাস। ২২ বছর বয়সী গ্রিক তরুণ সেই সেট জেতার পরই খেলা পুরো বদলে গেল! চতুর্থ সেট সহজেই জিতলেন সিৎসিপাস, পঞ্চম সেটে ১১তম গেমে আবার ব্রেক করলেন নাদালের সার্ভিস।

১২ বছর আগে ক্যারিয়ারের একমাত্র অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতা নাদালের অপেক্ষার তাই অবসান আর হলো না। না ক্যারিয়ারে শুধু এই একটি গ্র্যান্ড স্লাম একাধিকবার জিততে পারার অপেক্ষা ঘুচল, না হলো ফেদেরারকে ছাড়িয়ে যাওয়া।