ফেদেরারের ‘২০’–এ ভাগ বসালেন দাপুটে নাদাল

তাঁর সার্ভ ফেরাতে পারলেন না জোকোভিচ। শিরোপা নিশ্চিত হলো। আনন্দটা সেই মুহূর্তে এভাবেই ফুটে উঠল নাদালের চোখেমুখে।ছবি: রয়টার্স

নোভাক জোকোভিচের সঙ্গে কোর্টে এর আগে ৫৫ বার লড়েছেন স্প্যানিশ টেনিস কিংবদন্তি। উন্মুক্ত যুগে এককে এর চেয়ে বেশি ম্যাচ আর কোনো দ্বৈরথ দেখেনি। দুজন দুজনের শক্তি-দুর্বলতা জানার আর কিছু বাকি থাকে কি? এই ম্যাচে চমক আর কী-ই বা থাকতে পারে!

এ বছরে জোকোভিচ এর আগে ৩৮ ম্যাচে মাত্র একবারই হেরেছেন। সেই হারও ইউএস ওপেনের চতুর্থ রাউন্ডে দুর্ঘটনাবশত লাইনসওম্যানকে আঘাত করে। কোর্টে খেলে কেউ হারাতে পারেনি সার্বিয়ান টেনিস তারকাকে।

সেই জোকোভিচকেই আজ রোলাঁ গারোতে কেমন ‘অ্যামেচার’ বানিয়ে দিলেন রাফায়েল নাদাল!
 
ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনাল, জোকোভিচ-নাদাল লড়াই, জিতলে ছেলেদের এককে সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের রেকর্ডে রজার ফেদেরারের সমান ২০টি গ্র্যান্ড স্লাম হবে নাদালের...ধ্রুপদি কিছুর আহ্বান ছিলই! সেই ম্যাচেই মাত্র ২ ঘন্টা ৪১ মিনিটের মধ্যে জোকোভিচকে ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে নাকানিচুবানি খাইয়ে ছাড়লেন নাদাল!

নাদালকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন জোকোভিচ।
ছবি: রয়টার্স

ফেদেরারের ২০ গ্র্যান্ড স্লামের রেকর্ড তো ছোঁয়া হলোই, নিজের ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ ফ্রেঞ্চ ওপেনে ১০০ জয়ের মাইলফলকও হলো ৩৪ বছর বয়সী স্প্যানিশ তারকার। অথচ কালকের ম্যাচটি ছিল রোলাঁ গারোতে নাদালের ১০২তম! ১৫ বছর হয়ে গেল রোলাঁ গারোতে প্রথম ম্যাচ খেলেছেন নাদাল, এতদিন পরও সেখানে তাঁর জয়ের হার ৯৮.০৪ শতাংশ!

এমনি এমনিই তো ম্যাচের পর নাদাল বলেননি, ‘রোলাঁ গারো আমার কাছে সবকিছু। আমার টেনিস ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোর অধিকাংশই এখানে কাটিয়েছি আমি, এ নিয়ে কোনো সংশয়ই নেই। আমার কাছে এখানে খেলাটাই একটা বড় প্রেরণা। এই শহ, এই কোর্টের সঙ্গে আমার যে ভালোবাসার গল্প, সেটা কখনো ভোলা যাবে না। সবাইকে সে জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।’

রোলাঁ গারো তাঁর ‘বাড়ি’, তারওপর সামনে ফেদেরারের ইতিহাস ছোঁয়ার হাতছানি...দুইয়ে মিলিয়েই কি এমন জোকোভিচকে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলার খুনে মানসিকতায় দেখা দিলেন রাফায়েল নাদাল? হয়তো। না হলে প্রথম দুই সেটে জোকোভিচের এভাবে পাত্তাই না পাওয়ার আর কী ব্যাখ্যা হতে পারে! প্রথম সেট নাদাল জিতলেন ৬-০ গেমে! সেটের সব গেমেই জয়! এতবার দেখা হয়েছে দুজনের, কিন্তু এর আগে যে কখনো জোকোভিচের বিপক্ষে নাদাল এমন ‘ব্যাগেল’ পাননি!

দ্বিতীয় সেটে একটু ‘উন্নতি’ জোকোভিচের। এবারে ৬-২। ম্যাচের অষ্টম গেমে এসে প্রথমবার গেম জেতার অনুভূতি হয় জোকোভিচের, প্রথম ৯০ মিনিটে দুবার। তৃতীয় সেটে যা একটু প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলো। পঞ্চম গেমে এসে নাদাল ব্রেক করলেন ‘জোকারে’র সার্ভ, ষষ্ঠ গেমে জোকোভিচ দিলেন পাল্টা। ম্যাচে প্রথমবার ব্রেক করলেন নাদালের সার্ভ। শেষবারও। ১১তম গেমে নাদাল ম্যাচে অষ্টমবারের মতো ব্রেক করলেন জোকোভিচের সার্ভ, পরের সেটে শিরোপা! ফ্রেঞ্চ ওপেনে নাদালের ১৩তম। রেকর্ড যে এটিও, তা নিশ্চয়ই বলতে হয় না!

‘তুমি দেখিয়েছ, তুমি কেন মাটির কোর্টের রাজা’—ম্যাচ শেষে হাসতে হাসতে শাশ্বত সত্যিটাই আরেকবার বললেন জোকোভিচ। তবে এভাবে হেরেও অত বেশি আক্ষেপ নেই জোকোভিচের, ‘আমার জন্য আজ ম্যাচটা অনেক কঠিন ছিল। অবশ্যই যেভাবে খেলেছি, তাতে আমি খুব একটা খুশি নই। তবে আমি অবশ্যই আজ কোর্টে অনেক ভালো একজন খেলোয়াড়ের কাছেই হেরেছি।’

আর নাদাল? বন্ধু ফেদেরারের ইতিহাস ছোঁয়ার ক্ষণেও সেই রোমাঞ্চের চেয়ে রোলাঁ গারোর প্রতি ভালোবাসাই বেশি থাকল তাঁর কণ্ঠে, ‘অনেক কঠিন একটা বছর গেছে। এখানে জেতাটা আমার কাছে অনেক কিছু। সত্যি বলতে আমি আজ ২০-এর (২০তম গ্র্যান্ড স্লাম) কথা বা দারুণ এই সংখ্যাটায় রজারকে ছোঁয়ার কথা ভাবিনি। আমার কাছে আজকের দিনটা শুধুই রোলাঁ গারোতে আরেকটা শিরোপা জয়ের।’