রোলাঁ গারোয় পোলিশ ইতিহাস

প্রথম পোলিশ নারী হিসেবে গ্র্যান্ড স্লাম জিতলেন সিওনতেক। জেতার পর নিজেও বুঝে উঠতে পাচ্ছিলেন না কী করবেন।ছবি: রয়টার্স

সার্ভ করার জন্য বলটা আকাশে ছুড়লেও শেষ মুহূর্তে র‍্যাকেট সরিয়ে নিলেন ইগা সিওনতেক। কে জানে সার্ভের জন্য একটু বাড়তি মুহূর্ত খুঁজে নিলেন কিনা! একটু ভেবে চিন্তে  করা সে সার্ভকে পাত্তাই দিলেন না সোফিয়া কেনিন। তাঁর ব্যাকহ্যান্ড এতটাই জোরালো ছিল যে ঠেকাতে না পেরে র‍্যাকেট ছুড়ে দিয়ে থামানোর একটা চেষ্টা নিয়েছিলেন সিওনতেক। ব্রেক পয়েন্টটা জিতে নিয়ে আশা জাগালেন কেনিন। ওদিকে রাজ্যের হতাশা সিওনতেকের মুখে।

প্রথম সেট জেতার জন্য সার্ভ করছিলেন সিওনতেক। ৪০-৩০ পয়েন্টে এগিয়েও ছিলেন। কিন্তু ম্যাচ জুড়ে যে সমস্যায় ভুগছিলেন সেটাই বাধা হয়ে দাঁড়াল। তাঁর ব্যাকহ্যান্ড নেটে আটকে যাওয়ায় ডিউস হলো। এর পর তো ডিউস থেকে অ্যাডভান্টেজ, আর এর পর ব্রেক পয়েন্ট কাজে লাগানো কেনিনের। ৬-৩ গেমে যেখানে সেট জিতে যাওয়ার কথা সিওনতেকের সেখানে ব্যবধান কমিয়ে ৫-৪ করে ফেললেন যুক্তরাষ্ট্রের তরুণী। তবে কেনিন ও নিয়ে খুব বেশি ভাবতে যাননি। কেনিনের সার্ভ ব্রেক করেই প্রথম সেট জিতে নিলেন ৬-৪ গেমে। দ্বিতীয় সেটে অবশ্য স্নায়ুর এমন পরীক্ষায় যেতে হয়নি তাঁকে। অনায়াসে ৬-৪, ৬-১ গেমে ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতে নিলেন সিওনতেক। ইতিহাসের প্রথম পোলিশ গ্র্যান্ড স্লাম বিজয়ীর নাম এখন ইগা সিওনতেক।

ফাইনালে খেলতে নেমেই ইতিহাস নাড়াচাড়া করতে বাধ্য করেছেন সিওনতেক। টুর্নামেন্টের শুরুতে র‍্যাঙ্কিংয়ে ৫৪তম স্থানে ছিলেন ১৯ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়। ১৯৭৫ সালে র‍্যাঙ্কিং চালু হওয়ার পর রোলাঁ গারোতে এত পিছিয়ে থাকা কোনো খেলোয়াড় ফাইনাল খেলেননি। তাঁর সুবাদেই ৮১ বছর পর কোনো পোলিশ নারীর দেখা পেল ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনাল। তবে রেকর্ডগুলো থেকে লিঙ্গ, সময় কিংবা রোলাঁ গারোর মুছে দিয়ে সবকিছুতেই সর্বকালের প্রথম করে নেওয়ার সুযোগ ছিল তাঁর সামনে। সিওনতেকের আগে যে পোল্যান্ডের কেউ কখনো গ্র্যান্ড স্লাম জিতেননি!

ক্যারিয়ারে এর আগে কোনো সর্বোচ্চ পর্যায়ের টুর্নামেন্ট জিতেননি। গ্র্যান্ড স্লামে এর আগে কখনো চতুর্থ রাউন্ডও পেরোননি। কিন্তু সিওনতেকের খেলায় তার কোনো ছাপই দেখা যায়নি এ টুর্নামেন্টে। সেমিফাইনাল পর্যন্ত কোনো সেট হারেননি। তাঁর বিপক্ষে কোনো সেটে সর্বোচ্চ ৪ পয়েন্ট নিতে পেরেছেন কোনো প্রতিপক্ষ। শীর্ষ বাছাইকে চতুর্থ রাউন্ডে উড়িয়ে দিয়েছেন অবলীলায়। ভাবা যায়, সেমিফাইনাল পর্যন্ত মাত্র ২৩ গেম হেরেছেন সিওনতেক!

কোনো সুযোগ পাননি কেনিন।
ছবি: রয়টার্স

ফাইনালের শুরুটাও হয়েছে এমন দাপটের সঙ্গেই। প্রথম তিনটি গেমই জিতে নেন স্বাচ্ছন্দ্যে। পরের তিন গেমে তাঁর ব্যাকহ্যান্ডজনিত সমস্যা কাজে লাগালেন কেনিন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ৩-৩ সমতা। এরপর আবার সিওনতেক দাপট। প্রথম সেটের একপর্যায়ে তো প্রতিপক্ষের চেয়ে গড়ে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার বেশি গতিতে সার্ভ করছিলেন। সেটা কিছুক্ষণ কেনিনের পক্ষে কাজ করলেও পরে ঠিকই নিজেকে ফিরে পান এই পোলিশ।

দ্বিতীয় সেটের শুরুতে ফিরে আসার আশা দেখেছিলেন কেনিন। সিওনতেকের প্রথম সার্ভ ব্রেক করে এগিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওটাই তাঁর শৌর্য বীর্যের শেষ প্রদর্শনী হয়ে থাকল। সার্ভ আর ফোরহ্যান্ডে তাঁকে নাস্তানাবুদ করে ফেলেন সিওনতেক। টানা ছয় গেমে জয়, ৬-১ ব্যবধানে জিতে নিলেন দ্বিতীয় সেট। মাত্র আধ ঘন্টা স্থায়ী হয়েছে সেটি। এক ঘন্টা ২৪ মিনিটের এক লড়াইয়ে ফেবারিট কেনিনকে উড়িয়ে দিলেন পুরো টুর্নামেন্টেই কোনো সেট না হারা সিওনতেক।

টুর্নামেন্ট জুড়েই দাপুটে টেনিস উপহার দিয়েছেন সিওনতেক।
ছবি: রয়টার্স

ম্যাচের পরও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না একটু আগে কী হলো, ‘আমি জানি না কী হলো। আমি খুব খুব খুশি। আমার পরিবার অবশেষে এখানে আসতে পেরেছে দেখে খুশি। আমি এখনো জানি না, সবকিছু এখনো বিহবল করে রেখেছে আমাকে। পাগলাটে মনে হচ্ছে। দুই বছর আগে জুনিয়র গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছি আর এখন আমি এখানে! খুব অল্প সময় মনে হচ্ছে, তাই আমি এখনো ঘোর কাটাতে পারছি না। আমাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। দারুণ একটা ফাইনাল হলো।’

চার বছরের ক্যারিয়ারে ১১ লাখ ডলার প্রাইজমানি পাওয়া সিওনতেক দুই সপ্তাহের এক টুর্নামেন্টেই জিতে নিয়েছেন ১৯ লাখ ডলার। এটিপি র‍্যাঙ্কিংয়ে ৫৪ থেকে এক লাফে উঠে এসেছেন ১৭-তে। কিন্তু দেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ড স্লাম জেতার দিনে এসব নিয়ে ভাবতে তাঁর বয়েই গেছে।