হঠাৎই অবসরের ঘোষণা মেয়েদের টেনিসের এক নম্বর তারকার

অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতার পরছবি: এএফপি

টেনিস-বিশ্বকে চমকে দিলেন অ্যাশলি বার্টি। মাত্র ২৫ বছর বয়সে মেয়েদের এক নম্বর এই টেনিস তারকা অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন মাস দুয়েক আগেই অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতা বার্টি।


২০১৯ সালের ফ্রেঞ্চ ওপেনের পর থেকেই মেয়েদের র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানটা দখল করে রেখেছিলেন এই অস্ট্রেলিয়ান টেনিস-কন্যা। জিতেছেন উইম্বলডন ও ফ্রেঞ্চ ওপেনও। ঘরের মাটিতে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে দুই মাস আগেই একটা আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন। তাঁর আগে গত ৪৪ বছরে অস্ট্রেলিয়ার কেউ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতেননি। সে অর্জনের পর বার্টির প্রাপ্তির খাতা কানায় কানায় পূরণ হয়ে গিয়েছে হয়তো, না হয় এখনই অবসর কেন নেবেন!

আগেও বেশ কিছুদিনের জন্য নিজেকে টেনিস থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন বার্টি। পেশাদার টেনিসের চাপ আর র‍্যাঙ্কিংয়ে ক্রমে নামতে নামতে বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন। শেষমেশ ২০১৪ সালের ইউএস ওপেনের পর টেনিস থেকে নির্বাসনে যান।

তবে একেবারেই যে ক্রীড়াজগৎ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন, তা নয়। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বার্টি ক্রিকেট খেলেছেন এই সময়টায়। শুধু তা–ই নয়, মেয়েদের বিগ ব্যাশে ব্রিসবেন হিটের হয়ে অংশ নিয়ে ৯টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচও খেলেছেন। তাতে তেমন আহামরি পারফরমেন্স না দেখাতে পারলেও ক্রিকেটের প্রতি তাঁর ভালো লাগা কমেনি। ক্রিকেট ছেড়ে ২০১৬ সালে টেনিসে প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই দারুণ পারফরম্যান্স তাঁর। তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় সেই কথাই বলে।

সাবেক অস্ট্রেলিয়ান টেনিস খেলোয়াড় ক্যাসি দেলাকুয়ার সঙ্গে আলাপচারিতায় নিজের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বার্টি। সে ভিডিও পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রামে, সঙ্গে ক্যাপশনে নিশ্চিত করে দিয়েছেন, এবার কিছুদিনের জন্য নয়, বরং পাকাপাকিভাবেই পেশাদার টেনিসকে বিদায় জানাচ্ছেন, ‘আজ আমার জন্য অনেক কঠিন এক দিন, আবেগে ভরে উঠছে মন, কারণ আজ আমি টেনিস থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি। আমি বুঝতে পারিনি কীভাবে এই সংবাদটা আপনাদের দেব, তাই আমার প্রিয় বন্ধু ক্যাসি দেলাকুয়াকে অনুরোধ করেছিলাম আমাকে সাহায্য করার জন্য। এই খেলা থেকে যা যা পেয়েছি, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। পরিপূর্ণ ও গর্বিত অনুভূতি নিয়ে খেলা ছাড়ছি আমি। এই যাত্রায় আমাকে যাঁরা সাহায্য করেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা যেসব মুহূর্তের জন্ম দিয়েছি, সেগুলো আমি আজীবন মনে রাখব।’


আগের বারের মতো বার্টির প্রত্যাবর্তন যে আর দেখা যাবে না, সেটা নিশ্চিত করেছেন নিজেই, ‘জানি আমি এমনটা আগেও করেছি, কিন্তু তখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। টেনিস আমাকে যা যা দিয়েছে, সবকিছুর জন্য আমি কৃতজ্ঞ। টেনিস আমার স্বপ্ন সত্যি করেছে, আরও অনেক কিছু দিয়েছে। আমার মনের মধ্যে একটা অংশ সন্তুষ্ট ছিল না কয়েক মাস আগেও। এরপরই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের চ্যালেঞ্জটা এল। আর আমার কাছেও মনে হলো আমার টেনিস ক্যারিয়ারটাকে ঠিকভাবে উদ্‌যাপন করার জন্য এর চেয়ে ভালো মুহূর্ত আর হতে পারে না।’

এমন দৃশ্য আর দেখা যাবে না
ছবি : রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ক্লান্তি কাটিয়ে ফ্রেঞ্চ ওপেন আর উইম্বলডনের দিকে নিজের মনোযোগ ধরে রাখার কথা বলে এই মাসে হতে যাওয়া ইন্ডিয়ানা ওয়েলস টুর্নামেন্ট আর মায়ামি ওপেনে খেলেননি বার্টি। তখন কে জানত, তাঁর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আরও বড় কিছু!


নিজেকে ক্রমাগত শীর্ষে রাখার ওই প্রেরণা আর পাচ্ছেন না বার্টি, ‘আমি জানি, সব সময় নিজের সেরাটুকু দেওয়ার জন্য কত খাটতে হয়। ওই আগ্রহটা আমার মধ্যে আর নেই এখন। শারীরিক পরিশ্রম করার সেই আগ্রহ, মানস্কিভাবে চাঙা থাকার প্রেরণাসহ টেনিসের শীর্ষে থাকার জন্য যা যা দরকার, কোনোটাই এখন আর আমার মধ্যে নেই। আমি শুধু এটাই জানি, টেনিসকে যা যা দিতে পারতাম, সব আমি দিয়ে ফেলেছি। শারীরিকভাবে এর চেয়ে বেশি দেওয়ার সামর্থ্য নেই আমার, সেটা আমি জানি। এই সুন্দর খেলাকে যা যা দিতে পারতাম, সবটুকুই দিয়ে ফেলেছি।’