৬০০ দিন পর ফেদেরার রোল নম্বর পাঁচ

ফেদেরারকে টেনিস কোর্টে দেখার অপেক্ষা জানুয়ারির আগে হয়তো ফুরাচ্ছে না।ছবি: রয়টার্স

সেই যে জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফাইনালে নোভাক জোকোভিচের কাছে হেরেছিলেন; তারপর থেকে টেনিস কোর্টে আর রজার ফেদেরারের দেখা মেলেনি। করোনাকে পাশ কাটিয়ে ইউএস ওপেন হয়েছে, ফ্রেঞ্চ ওপেন হয়েছে, এখানে-সেখানে এটিপি টেনিস টুর্নামেন্ট চলছে, কিন্তু ফেদেরার ঘরে বসে। হাঁটুতে যে চোট সুইস টেনিস কিংবদন্তির! দুবার অস্ত্রোপচারের ধকলও সামলে এই কদিন হলো আবার অনুশীলনে ফিরেছেন।

লম্বা এই বিরতির প্রভাব তাঁর ৩৯ বছর বয়সী শরীরে, তাঁর টেনিসে কতটা পড়েছে, সেটা ফেদেরার আবার কোর্টে ফেরার পর বোঝা যাবে। তবে ধাক্কাটা ফেদেরারের টেনিস র‍্যাঙ্কিংয়ে পড়েছে ঠিকই।

র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে তো তিনি অনেক দিন ধরেই নিয়মিত নন, এই বয়সে জোকোভিচ-নাদালদের সঙ্গে লড়ে ফেদেরারকে শীর্ষে দেখার প্রত্যাশাই ভুল। দুই নয়তো তিন, অথবা—বছর দুয়েক ধরে র‍্যাঙ্কিং টেবিলে এর মধ্যেই ঘোরাঘুরি চলছিল ফেদেরার। কিন্তু আগামী সোমবার প্রকাশিতব্য র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁকে চার নম্বর থেকেও সরিয়ে দিতে যাচ্ছেন দানিল মেদভেদেভ।

প্যারিস মাস্টার্সের কোয়ার্টার ফাইনালে গতকাল আর্জেন্টাইন দিয়েগো শোয়ার্টজমানকে ৬-৩, ৬-১ গেমে হারিয়েই ফেদেরারকে টপকে যাওয়া নিশ্চিত করেছেন রাশিয়ার মেদভেদেভ। সময়ের হিসাবে ১ বছর ৮ মাস পর র‍্যাঙ্কিংয়ের সেরা চারে থাকছেন না ফেদেরার। দিনের হিসাবে ঠিক ৬০০ দিন পর এমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে তাঁর।

সেরা চারের বাইরে ফেদেরার সর্বশেষ ছিলেন গত বছরের ১৮ মার্চ প্রকাশিত র‍্যাঙ্কিংয়ে। আর সেরা চারের বাইরে থেকে মৌসুম শেষ করার অভিজ্ঞতা ফেদেরারের হতে যাচ্ছে ২০১৬ সালের পর এই প্রথম।

তবে শুধু পাঁচে নেমে যাওয়াই নয়, সাতে থাকা আলেক্সান্ডার জভেরেভও এখন ফেদেরারকে হুমকি দিচ্ছেন ছয়ে নামিয়ে দেওয়ার। গতকাল স্তানিসলাস ভাভরিঙ্কাকে হারিয়ে প্যারিস মাস্টার্সের সেমিফাইনালে উঠেছেন জভেরেভও। ২৩ বছর বয়সী জার্মান আজ সেমিফাইনালে খেলবেন রাফায়েল নাদালের বিপক্ষে। এই টুর্নামেন্টের পর ১৫-২২ নভেম্বর লন্ডনের ওটু অ্যারেনাতেও খেলবেন জভেরেভ। সেখানে আরও পয়েন্ট পেয়ে তাঁর সামনে থাকা সিৎসিপাসকে টপকানোর সুযোগ তো আছেই, টপকে যেতে পারেন ফেদেরারকেও।

ফেদেরারের র‍্যাঙ্কিংয়ে পতন যদি হয় টেনিস-ভক্তদের জন্য মন খারাপ করা খবর, তবে আগামী সোমবারের র‍্যাঙ্কিং নোভাক জোকোভিচের ভক্তদের জন্য নিয়ে আসবে আনন্দের বার্তা। বছরটা র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থেকেই শেষ করতে যাচ্ছেন সার্বিয়ান টেনিস তারকা, তাতে একটা রেকর্ডও ছুঁয়ে ফেলতে যাচ্ছেন।

২০১১, ২০১২, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৮ সালের পর ২০২০—এ নিয়ে ছয়বার র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থেকেই বছর শেষ করতে যাচ্ছেন ‘জোকার’—যে কীর্তি ফেদেরার-নাদালেরও নেই। এর আগে ছেলেদের টেনিসে শুধু একজনই ছয়বার বছর শেষ করেছিলেন র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থেকে—জোকোভিচের ছোটবেলার নায়ক পিট সাম্প্রাস। ফেদেরার ও নাদাল সবার ওপরে থেকে বছর শেষ করেছেন পাঁচবার করে।

স্ত্রী মিরকা ভাভরিনেচের সঙ্গে ফেদেরার।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

এ তো বছরটা র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থেকে শেষ করার খবর। হিসাবটা যখন সপ্তাহের হবে, সেখানেও ফেদেরারের জন্য হুমকি হয়ে আসছেন জোকোভিচ। টানা সবচেয়ে বেশি সপ্তাহ র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকার রেকর্ডটা ফেদেরারেরই, কিন্তু টানা ৩১০ সপ্তাহ র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকার সেই রেকর্ড নিয়ে এখন টানাটানি। আগামী ৮ মার্চ পর্যন্ত র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকলেই ফেদেরারের রেকর্ডটা পেরিয়ে যাবেন জোকোভিচ।

তবে র‍্যাঙ্কিংয়ে সেরা বিশে থাকার রেকর্ড হিসাব করলে ফেদেরার এখনো অদ্বিতীয়। এ নিয়ে ১০০০ সপ্তাহ র‍্যাঙ্কিংয়ের সেরা বিশে থাকছেন ফেদেরার, যে রেকর্ড ছেলেদের টেনিসে আর কারও নেই। দুইয়ে থাকা আন্দ্রে আগাসির চেয়ে র‍্যাঙ্কিংয়ের প্রথম ২০-এ ১৩২ সপ্তাহ বেশি থাকছেন ফেদেরার। আর সেরা দশে থাকার হিসাব করলে ১০০০ সপ্তাহ সেরা দশে থাকার কীর্তি ছুঁতে আর ৮১ সপ্তাহ বাকি ফেদেরারের।

তত দিন পর্যন্ত ফেদেরার খেলবেন? তাঁর অবসর নিয়ে প্রশ্ন তো নিয়মিতই ওঠে। তবে দুদিন আগে সুইস কিংবদন্তি জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমি কোনোভাবেই এখন অবসর নেব না। গত সপ্তাহেও অনুশীলন করেছি, জানুয়ারির শুরুতে আমি কোর্টে থাকব আশা করি। এখনো মনে হচ্ছে আমার মধ্যে এখনো কিছু টেনিস বাকি আছে।’

গতকালই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা ছবি দিয়েছেন ‘ফেডেক্স।’ সুইজারল্যান্ডে সবুজ-সুন্দরে ঘেরা এক টেনিস কোর্টে অনুশীলন চলছে তাঁর। ক্যাপশনে ফেদেরার লিখেছেন, ‘কাজে ফিরেছি!’ রেকর্ড লক্ষ্য? আগামী ১৮ জানুয়ারি শুরু হতে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। কদিন আগে ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতে ফেদেরারের ২০ গ্র্যান্ড স্লামের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেছেন রাফায়েল নাদাল, ফেদেরার নিশ্চয়ই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে জিতে আরেকটু এগিয়ে যেতে চাইবেন।