যুক্তরাষ্ট্র এখন মেসি-ম্যানিয়ায় আক্রান্ত বললে কি খুব বেশি ভুল হবে! যে দেশটির ফুটবল নিয়ে কদিন আগেও কারও কোনো মাথাব্যথা ছিল না, সে দেশের ফুটবলে এখন সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের চোখ। গতকাল নিজের অভিষেক ম্যাচে শেষ মুহূর্তে গোল করে দলকে জিতিয়ে উন্মাদনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন মেসি।
আর্জেন্টাইন মহাতারকার আগমন শুধু যে সমর্থকদের জাগিয়ে তুলেছে, তা নয়; মেসিকে নিয়ে পাগলামি দেখা গেছে সতীর্থদের মধ্যেও। ইন্টার মায়ামির খেলোয়াড়দের মধ্যে মেসি–উন্মাদনা কীভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, ক্রুজ আজুলের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের পর তা তুলে ধরেছেন তরুণ মিডফিল্ডার বেঞ্জামিন ক্রিমাশ্চি।
লিগস কাপে ক্রুজ আজুলের বিপক্ষে ম্যাচে ৫৪ মিনিটে ক্রিমাশ্চির বদলি হিসেবে মাঠে নামেন মেসি। তাই মাঠে মেসির সঙ্গে খেলার সুযোগ না হওয়ায় কিছুটা আক্ষেপ আছে ১৮ বছর বয়সী এই ফুটবলারের। তবে একসঙ্গে খেলা না হলেও বেঞ্চে বসে মেসি-ভক্ত হিসেবে খেলা উপভোগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই ফুটবলার। শুধু ক্রিমাশ্চিই নন, দলের অন্যরাও মোহিত হয়ে ছিলেন মেসিতে। ম্যাচের পর মেসিকে ঘিরে কী হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই মিডফিল্ডার বলেছেন, ‘সবাই তাঁর কাছ থেকে জার্সি খুঁজছিল। তারা এমনকি তার প্যান্টও চুরি করে নিয়ে গেছে।’
এ সময় তাঁর বদলি হিসেবে মেসিকে মাঠে নামানোর ঘটনা নিয়েও কথা বলেছেন ক্রিমাশ্চি। নিজের অম্লমধুর অভিজ্ঞতা নিয়ে ইন্টার মায়ামির এই তরুণ তুর্কি বলেন, ‘আমি খুবই খুশি। আমি একটা সিনেমার মধ্যে ছিলাম। যখন আমাকে মাঠ থেকে তুলে নেওয়া হলো, তখন আমি আর তার সতীর্থ ছিলাম না। আমিও আরেকজন ভক্ত হয়ে গেলাম। আমি অবশ্য তার সঙ্গে খেলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যখন আমি আমার নম্বর দেখলাম, তখন বললাম—“আহ, কী দুঃখজনক ব্যাপার!” কিন্তু তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো ছিল স্বপ্নের মতো একটি ব্যাপার। একেবারে পাগলামি।”’
মেসিকে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার পর তাঁর জাদুকরি ফুটবল তো বেঞ্চে বসেই দেখেছেন। তবে মাঠে নামার আগেই ক্রিমাশ্চি আন্দাজ করতে পেরেছিলেন কী হতে যাচ্ছে। ম্যাচ শুরুর আগের অনুভূতি ব্যাখ্যা করে ক্রিমাশ্চি বলেছেন, ‘ফ্রি কিকের আগে আমি সতীর্থদের বলেছিলাম, এভাবেই সবকিছু শুরু হয়, এভাবেই সিনেমা শুরু হয়। আশা করছি, সেভাবেই এটা শেষ হবে।’ ক্রিমাশ্চির অনুমান অনুসারেই যেন সব শেষ হয়েছে। সিনেমার উত্তেজনাপূর্ণ শেষ দৃশ্যের মতো মেসিও শেষ মুহূর্তে উপহার দিয়েছেন অনবদ্য এক গোল, যা জয় এনে দিয়েছে ইন্টার মায়ামিকে।
শুধু দর্শক বা সতীর্থরাই নন, অন্য খেলার কিংবদন্তিরাও এদিন মেসির অভিষেকের সাক্ষী হতে এসেছিলেন। গ্যালারিতে এদিন বাস্কেটবল কিংবদন্তি লেব্রন জেমস এবং টেনিস কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামসের মতো তারকাদেরও দেখা গেছে। ম্যাচের আগে মেসির সঙ্গে দেখা করে তাঁকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন লেব্রন। পরে মেসির সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘স্বাগতম ভাই।’ এ সময় মেসির মাহাত্ম্যের সাক্ষী হওয়া ও দেখা দারুণ ব্যাপার বলেও মন্তব্য করেছেন লেব্রন। পরে মেসিও লেব্রনের এ বার্তার জবাব দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘অনেক ধন্যবাদ ভাই। তোমাকে দেখেও অনেক ভালো লাগল।’
মেসির অভিষেক ম্যাচ জিতে দারুণ রোমাঞ্চিত থাকলেও সেটা নিয়ে পড়ে থাকার সুযোগ নেই ইন্টার মায়ামির। তাদের এখন প্রস্ততি নিতে হচ্ছে পরের ম্যাচের জন্য, যেখানে মেসির দল ইন্টার মায়ামির প্রতিপক্ষ আটালান্টা ইউনাইটেড। এ ম্যাচেও সবার চোখ থাকবে মেসির ওপরই। ধারণা করা হচ্ছে, এ ম্যাচে মেসিকে হয়তো শুরুর একাদশে রাখবেন ইন্টার মায়ামির কোচ জেরার্দো মার্তিনো।