স্টোকস-ম্যাককালাম ফাটকা কাজে লাগবে, ভাবতে পারেননি পেছনের মানুষটিও

ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস ও কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামছবি: রয়টার্স

তাঁর নিজেরই এমন কোনো কাজের অভিজ্ঞতা ছিল না এর আগে। কাউন্টি দল কেন্টের অধিনায়ক ছিলেন, এরপর কাজ করেছেন ধারাভাষ্যকার হিসেবে। রব কি এরপর হয়ে গেলেন ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের ছেলেদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাঁকে এরপর চারটি বড় পদেই নিয়োগ দিতে হয়েছে নতুন কাউকে—টেস্ট দলের কোচ ও অধিনায়ক, এরপর সীমিত ওভারেরও কোচ ও অধিনায়ক।

টেস্টের অধিনায়ক হিসেবে জো রুটের উত্তরসূরি হিসেবে স্টোকসের অনুমিত নামটি থাকলেও কোচ হিসেবে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নিয়োগ এসেছিল চমক হিসেবেই। এর আগে কোনো প্রথম শ্রেণির দলকেই কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা ছিল না ম্যাককালামের। অথচ দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম চারটি টেস্টেই ক্রিকেটের আলোচিত নাম হয়ে উঠেছে ইংল্যান্ড দল, আক্রমণাত্মক ক্রিকেটে সফল হয়ে আলোচিত ম্যাককালাম-স্টোকসের জুটিও। অবশ্য রব কি বলছেন, তাঁর ‘ফাটকা’ এভাবে কাজে লেগে যাবে, সেটি তিনি নিজেও ভাবতে পারেননি।

আরও পড়ুন

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি টেস্টের পর ভারতের বিপক্ষেও টেস্টে জিতেছে ইংল্যান্ড, সব কটিতেই আবার রান তাড়া করে। এ মৌসুমে টেস্ট ম্যাচ নিয়ে ইংলিশদের আগ্রহও ছিল অনেক। স্কাই স্পোর্টসকে রব কি বলেছেন, এসব ভাবনার বাইরেই ছিল তাঁর, ‘যেভাবে টেস্ট সিরিজটা গেছে, সেটা দারুণ। কখনোই ভাবিনি এমন হবে। তবে যে ব্যাপারটা আমার আরও ভালো লেগেছে, জনগণের আগ্রহ জন্মেছে। এটি হয়তো পরিকল্পনার অংশ ছিল না, তবে স্টোকস ও ম্যাককালাম কোনো এক ভাবে সেটি করতে পেরেছে। তারা অনেকের ভেতর থেকেই সেরাটা বের করে এনেছে, ফাটকাটা আসলে এটি নিয়েই ছিল।’

ইংল্যান্ডের ছেলেদের ক্রিকেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রব কি
ইংল্যান্ড ক্রিকেট

ম্যাককালামের মতো কাউকে নিয়োগ দেওয়ার পেছনে কোন ভাবনা কাজ করেছে, সেটিও জানিয়েছেন কি, ‘হয়তো এমন একজনকে নেওয়া যেত, যে কঠিন হেডমাস্টারের মতো, খেলোয়াড়দের ছাড় দেবে না। অথবা এমন একজন, যে একটু আলগা করবে সবকিছু, সবাইকে নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ দেবে, নিজেদের সামর্থ্যের পুরোটা ঢেলে দিতে পারবে। আমার বাজি এটিই ছিল, ব্রেন্ডন (ম্যাককালাম) সেটিই করেছে।’

আরও পড়ুন

ইংল্যান্ডের এই ব্যাটিংয়ের ধরনটিকে ম্যাককালামের ডাকনাম অনুযায়ী বলা হচ্ছে ‘বাজবল’। এর আগে অবশ্য এই নাম নিয়ে নিজের আপত্তির কথা প্রকাশ্যেই বলেছেন ম্যাককালাম। কিরও ঠিক পছন্দ নয় এটি, ‘“বাজবল” নিয়ে আমি যে ক্ষিপ্ত, তা নয়। এ নাম আমরা দিইনি, এটা আসলে ছেলেরা যা করেছে, সেটিকে একটু খাটো করে। এর মানে এটি নয় যে শুধু এভাবে খেললেই আপনি টেস্ট দলে জায়গা পাবেন। ব্যাপারটি এমন নয়। তারা চাপও সামলেছে।’

অবশ্য এমন ইতিবাচক মানসিকতার পেছনে প্রক্রিয়াটা কী, রব কি সেটি ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘যখন লর্ডসে নিউজিল্যান্ডকে হারালাম, আমি সেখানে ছিলাম। ড্রেসিংরুমে গিয়েছিলাম। জো রুট দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে আমাদের জয় এনে দিয়েছিল। কিন্তু বেন (স্টোকস) ও ব্রেন্ডন (ম্যাককালাম) অ্যালেক্স লিসকে নিয়ে দারুণ একটা ব্যাপার তুলে ধরেছিল। সে ২০ রান করেছিল, তখনো দলে তার জায়গা নিশ্চিত নয়। তবে তারা বলেছিল, “তুমি যেভাবে ব্যাটিং করেছ, তাতেই সুরটা ধরা গেছে। তোমার কাছ থেকে আমরা এটিই চাই।” জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গেও ব্যাপারটা অমনই, যে কয়েকটা বড় শট খেলেছিল। এসবের প্রভাব কী, সেটি তো পরে দেখাই গেছে।’

আরও পড়ুন

শুধু মাঠের অনুশীলন বা ড্রেসিংরুমে নয়, এর বাইরেও খেলোয়াড়দের সঙ্গে ম্যাককালাম কাজ করতে পছন্দ করেন বলে জানিয়েছেন কি, ‘ব্রেন্ডন মাঠে যাওয়ার সময় কোনো একজন খেলোয়াড়ের কাছ থেকে তার গাড়িতে লিফট চায়। যাতে তার সঙ্গে কাজ করতে পারে, কথা বলতে পারে। এভাবেই তাদের ফুরফুরে রাখে এবং তারা নিজেদের মতো করে “বাজবল” খেলে। পুরো ব্যাপারটিই এমন।’

ইংল্যান্ডের এ খেলার ধরন সব সময় কাজে দেবে না, কি সেটি জানেন। তবে আপাতত এটি ‘দারুণ’ লাগছে তাঁর, ‘লোকে বলে, “তোমরা ভারতের বিপক্ষে এমন করতে পারবে না”, অথবা “অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করতে পারবে না”... যখন বল স্পিন করবে…। ঠিক আছে, এমন হতেই পারে। তবে আপাতত বর্তমানেই থাকি, যেভাবে পারি, খেলার চেষ্টা করি। সামনে কী আছে, সেটি নিয়েই ভাবনা আমাদের।’