নেইমার, এমবাপ্পেরা মুগ্ধ হয়েছিলেন, এবার মুগ্ধ সাবিনারা

নেইমার–এমবাপ্পেদের মুগ্ধ করে ঢাকা এসেছেন প্যাট্রিকছবি: সংগৃহীত

কখনো বল তুলে নিচ্ছেন কাঁধে। কখনো ঘাড়ের ওপর আটকে থাকছে বল। চোখের পলকে কাঁধ থেকে বল নেমে যাচ্ছে পিঠ গড়িয়ে হাতে। সবশেষে বল নিয়ে চলছে পায়ের জাদু। রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে বল নিয়ে অসাধারণ কারিকুরি করে দেখাচ্ছিলেন প্যাট্রিক বাউরার ও আগুসকা এমনিখ।

ফুটবলার ফ্রি স্টাইলার প্যাট্রিক ও আগুসকা ফ্রি স্টাইলে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। গিনেস রেকর্ডধারী এই জুটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফুটবলের কারিকুরি দেখিয়ে দর্শকদের মন মাতিয়ে চলেছেন। গত বছর কাতার বিশ্বকাপের আগে তাঁদের ফুটবলশৈলী দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন নেইমার ও এমবাপ্পে। গত পরশু সাবিনা খাতুন, মনিকা চাকমারাও মুগ্ধ চোখে দেখলেন এই দুজনের ফুটবলশৈলী।

আগামী মে মাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে শুরু হচ্ছে মেয়েদের ফুটবলের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। ‘বাংলাদেশ উইমেন্স সুপার লিগ’ নামের এই লিগের লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্যাট্রিক-আগুসকা জুটিকে ঢাকা এনেছে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের উদ্যোক্তা স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট ও মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান কে-স্পোর্টস।

প্রথমবার ঢাকায় এসে মুগ্ধ প্যাট্রিক বলেন, ‘এখানকার মানুষের ফুটবলের প্রতি উন্মাদনা দেখে খুব ভালো লেগেছে। এখানে এসেই রাস্তায় বেশ কিছু ছেলেকে ফুটবল খেলতে দেখেছি। ওরা আর্জেন্টিনার জার্সি পরে খেলছিল। সেখানে গিয়ে আমি ওদের কাছ থেকে বল চেয়ে নিই। এরপর ফ্রি স্টাইলের কৌশলগুলো দেখিয়েছি। ওদের কিছু শিখিয়েও দিয়েছি।’

মেসি নেইমারের সঙ্গে আগুসকা
ছবি: সংগৃহীত

গত বছর মে মাসে দোহায় বিশ্বকাপের আগে একটা অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল নেইমার ও এমবাপ্পের সঙ্গে। সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে প্যাট্রিকের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো, ‘বিশ্বকাপের আগে দোহার একটি ইনডোরে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় শো করার জন্য। সেখানে নেইমার, এমবাপ্পে, মার্কিনিওসসহ আরও অনেক ফুটবলার ছিল। তাদের সামনে আমরা স্কিল দেখিয়েছিলাম। ওই সময় ফুটবল নিয়ে নেইমার ও এমবাপ্পের সঙ্গেও কারিকুরি করি।’

দুই ফুটবল তারকাকে খুব কাছ থেকে দেখে যে কারোরই রোমাঞ্চিত হওয়া স্বাভাবিক। প্যাট্রিকও ব্যতিক্রম ছিলেন না। তাঁর কথা, ‘প্রথমবার ওদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় খুব রোমঞ্চিত ছিলাম। ওরাও আমার মতো মানুষ। এক ঘণ্টা ওদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। ভিন্ন ভিন্ন রকমের চ্যালেঞ্জ ও কৌশল দেখাই আমরা। সেগুলোর ভিডিও আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়েছিলাম। আমার জন্য এটা ছিল অন্য রকম অভিজ্ঞতা। আমরা দারুণ উপভোগ করি ব্যাপারটা। নেইমার ও এমবাপ্পে সত্যি বন্ধুত্বপূর্ণ ও খুব বিনয়ী।’

কী কথা হলো তাঁদের সঙ্গে, প্রশ্নটা করতেই হেসে প্যাট্রিক বলেন, ‘যখন আমন্ত্রণ পাই, তখনই জানি নেইমার ও এমবাপ্পে থাকবে অনুষ্ঠানে। এক ঘণ্টার অনুষ্ঠান কিন্তু যেন মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেল। আমরা ফুটবল মাঠে গেলাম একই সঙ্গে। ওরা আসার পর, আমি হাই বললাম। হাসিমুখে কথা বলল দুজনই। এমবাপ্পে তো আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরল। বলল, “কেমন আছ?” নেইমার এগিয়ে এসে বলল, “হেই ব্রো, তুমি কী করে দেখাতে চাও, বলো। আসো আমরা দুজন একসঙ্গে ফুটবল খেলি। ফুটবল নিয়ে কিছু করে দেখাই।”’

গত পরশু হোটেল লা মেরিডিয়ানে এভাবেই কারিকুরি দেখালেন তাঁরা
ছবি: প্রথম আলো

নেইমারের ফুটবল নিয়ে কারিকুরি দেখে মুগ্ধ প্যাট্রিক বলেন, ‘আসলে নেইমারের বল পায়ে স্কিল দেখে আমি মুগ্ধ। আমরা দুজন একসময় বল দেওয়া–নেওয়া করি। অসাধারণ অনুভূতি ছিল সেটা। সত্যি বলতে কি, দুজন ফুটবল কিংবদন্তিকে সামনে থেকে দেখা সত্যি অসাধারণ ছিল। আমার সারা জীবন মনে থাকবে এটা। কারণ, এমন সুযোগ বারবার হয়তো আসবে না।’

জার্মানির ফ্রি স্টাইলার প্যাট্রিক ছোটবেলায় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু ১৩ বছর বয়সে ফুটবল নিয়ে কারিকুরি দেখাতে শুরু করেন। প্রতিদিন নিয়মিত কঠোর অনুশীলন করে বলকে এভাবে আয়ত্তে এনেছেন। এখন যেন বলই কথা শোনে প্যাট্রিকের। যখন প্যাট্রিকের বয়স ১৮ তখন ফ্রি স্টাইলের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেন তিনি। এর পর থেকে এটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন।

ফুটবলার হতে পারেননি। কিন্তু ফুটবল নিয়েই তো সারা বিশ্ব মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন প্যাট্রিক!