হকিতে মারামারি: মাঠ ছাড়ল মোহামেডান, পিছিয়ে থেকেও ‘জয়ী’ আবাহনী

হকিতে আবাহনী–মোহামেডান ম্যাচে মারামারির দৃশ্যশামসুল হক

টান টান উত্তেজনা ছিল ম্যাচের আগেই। রাসেল মাহমুদ জিমির হলুদ কার্ড সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার দাবিতে আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচটি না খেলারই হুমকি দিয়েছিল মোহামেডান।

তবে শেষ পর্যন্ত সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মোহামেডান ঠিকই মাঠে নেমেছে। কিন্তু হকি লিগে দেশের দুই প্রধান দলের অঘোষিত ‘ফাইনাল’-এর অপমৃত্যু ঘটল মোহামেডান ৩-২ গোলে এগিয়ে থাকা অবস্থায়। মাওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে ম্যাচের ৪২ মিনিটে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে হাতাহাতির পর লাল কার্ড নিয়ে সৃষ্টি হয় জটিলতা। তারই জের ধরে মোহামেডান মাঠ ছেড়ে চলে গেলে দুই আম্পায়ার আবাহনীকে ৫-০ গোলে জয়ী ঘোষণা করেছে।

ম্যাচে উত্তেজনা ছিল আগাগোড়াই। শুরুতেই ভারতীয় খেলোয়াড় আফ্ফান ইউসুফের পেনাল্টি কর্নারের গোলে আবাহনী এগিয়ে গিয়েছিল। ২৫ মিনিটে আবাহনীকে ২-০ গোলে এগিয়ে দেন পুষ্কর খীসা। কিন্তু এই ম্যাচেই মোহামেডান ঘুরে দাঁড়ায় দুর্দান্তভাবে। মালয়েশিয়ান খেলোয়াড় ফাইজাল বিন সারির চমৎকার এক হ্যাটট্রিকে দুই গোলে পিছিয়ে পড়া মোহামেডানই তৃতীয় কোয়ার্টারে এগিয়ে গেল ৩-২ ব্যবধানে। খেলার নিয়ন্ত্রণ তখন পুরোপুরি সাদাকালোদের হাতে। আবাহনীর ওপর চেপে বসা মোহামেডান তখন গোলের নেশায় উন্মত্ত। আবাহনীও দাঁতে দাঁত চেপে মোহামেডানের দারুণ আক্রমণগুলো ঠেকিয়ে যাচ্ছিল। অঘটনটা ঘটল ঠিক তখনই।

আবাহনীর বিপক্ষে ৩–২ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর মোহামেডানের উল্লাস
প্রথম আলো

ম্যাচের তখন ৪২ মিনিট। আবাহনীর একটি পেনাল্টি কর্নার দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেয় মোহামেডান, বল তখন ডেড। আফ্ফান ইউসুফের সঙ্গে মোহামেডানের মালয়েশিয়ান খেলোয়াড় জুল পিদাউস বিন মিজানের ধাক্কাধাক্কি হয়। এই সময় মোহামেডান ও আবাহনীর একাধিক খেলোয়াড় হাতাহাতিতে জড়িয়ে যান। হাতাহাতি গুরুতর আকার ধারণ করে কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই। দুই দলের সব খেলোয়াড়ের সঙ্গে যোগ দেন ডাগআউটের খেলোয়াড়েরাও। পরিস্থিতি চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আম্পায়ার ও কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে দুই দলের খেলোয়াড়দের হাতাহাতি থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর আম্পায়াররা লাল কার্ড দেখান মোহামেডানের দুই খেলোয়াড় দ্বীন ইসলাম ও তানভীর সিয়ামকে। লাল কার্ড দেখেন আবাহনীর মো. নাঈমুদ্দিন। হলুদ কার্ড দেখেন মোহামেডানের জুল পিদাউস ও আবাহনীর আফ্ফান ইউসুফ।

আম্পায়ারের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি মোহামেডান, মাঠ ছেড়ে চলে যান মোহামেডানের খেলোয়াড়েরা। আবাহনীর খেলোয়াড়েরা অবশ্য মাঠেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। বারবার অনুরোধের পরও মোহামেডান দল আর মাঠে নামেনি। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে দুই আম্পায়ার ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজান। লিগের বাইলজ অনুযায়ী মোহামেডান খেলতে অস্বীকৃতি জানানোর জন্য আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা করা হয় ৩-০ গোলে।

এরপর আরেক নাটক। বাইলজ অনুযায়ী মোহামেডান এই ম্যাচে হেরে গেলেও আম্পায়ারের শেষ বাঁশি বাজানোর পর উল্লাসে মেতে ওঠেন সাদাকালো দলের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা। মোহামেডান ক্লাবের পতাকা নাড়িয়ে উল্লাস করছিলেন তাঁরা। আর ‘জয়ী’ আবাহনী নীরবেই মাঠ ছাড়ে। এই ম্যাচে আবাহনীকে জয়ী ঘোষণার কারণে লিগে আবাহনী ও মেরিনার্সের পয়েন্ট সমান হয়ে গেল। লিগের বাইলজ অনুযায়ী আবাহনী ও মেরিনার্সের মধ্যে প্লে-অফ ম্যাচ হওয়ার কথা। এর জন্য দুই দলকেই চিঠি পাঠাবে ফেডারেশন।