অধিনায়কত্বে আরেক স্বপ্ন পূরণ জামাল ভূঁইয়ার

>ডেনমার্কে জন্ম নিয়েও স্বপ্ন দেখেছিলেন বাংলাদেশের হয়ে খেলার। জন্মভূমি না হলেও পিতৃভূমি তো! তিনি তাঁর স্বপ্ন পূরণ করেছেন ২০১৩ সালে। পরিণত হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে। পেয়েছেন অধিনায়কত্ব। এটি যেন তাঁর নতুন এক স্বপ্ন সত্যি হওয়া।
বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবে হিসেবে তাঁর অভিষেক হয়েছিল গত ২৭ মার্চ লাওসের বিপক্ষে ফিফা আন্তর্জাতিক ম্যাচে। এর আগে থাইল্যান্ডেও অনুশীলন ম্যাচে তাঁর হাতে বাহুবন্ধনী দেন সাবেক কোচ অ্যান্ড্রু ওর্ড। এরপর গতকাল প্রথমবারের মতো প্রতিযোগিতামূলক কোনো ম্যাচে বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করলেন জামাল ভূঁইয়া। পূরণ হলো তাঁর বড় একটা স্বপ্ন।
সে কথাই আজ বাংলাদেশ দলের হোটেল লবিতে বসে বললেন এই ফুটবলার। কিন্তু জামাল ভূইয়া কী আগের জামাল ভূঁইয়া আছেন? গতকাল এশিয়ান গেমসে উজবেকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ ৩-০ গোলে হেরেছে তাঁর অধিনায়কত্বেই, তবে সেই হারটা স্বাভাবিকই। তবে জামালকে ঠিক ছন্দে দেখা যায়নি। হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে বরং তাঁর সতীর্থ ফাহাদই চোখ কেড়েছে বেশি। জেমি ডের ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে দুই হোল্ডিং মিডফিল্ডারের একজন জামাল ভূঁইয়া। তাঁর ওপরই আশাটা বেশি। কিন্তু জামাল গতকাল ভুল পাস দিয়েছেন অনেকবার। পরাস্ত হয়েছেন। গতিতেও যেন একটু ঘাটতি দেখা গেল।
কেন? জামাল কী তাহলে ফুরিয়ে গেছেন? এসব নিয়ে প্রশ্ন করলে জামাল কিছুক্ষণ চুপ খাকেন। ‘তাগিদ দিলে বলেন, ‘নিজের পারফরম্যান্স ভালোই বলব।’ তার মানে উজবেকদের বিপক্ষে পারফরম্যান্সে খুশি? এবার তাঁর কথা, ‘আমি বলব আমার পারফরম্যান্স ভালো নয়, খারাপও নয়। হ্যাঁ এটা ঠিক, আরও ভালো করতে হবে।’
নিজেকে নিয়ে বলেন, ‘আগের জামাল এখনকার জামাল আলাদা। আগে অভিজ্ঞ ছিলাম না। এখন অভিজ্ঞতা বেড়েছে। হয়তো এখন গতিটা কিছুটা কমেছে। তবে অভিজ্ঞতা দিয়ে পুষিয়ে নিচ্ছি আমি।’
জামালের আগের পারফরম্যান্স নেই অনেকেই তা বলেন। তবে জামাল সেটা পুরোপুরি মানেন না। বলছেন, ‘মানুষের প্রত্যাশা অনেক আমার কাছে। অনেকে ভাবেন, জামাল ভালো খেলেনি তাই দলও ভালো খেলেনি। কিন্তু ফুটবলটা এক জনের খেলা নয়। সব সময় দল আগে। তবে আমি সামগ্রিকভাবে খুশি নিজের ওপর। ফিট আছি। ভালো আছি।’
ডেনমার্কে জন্ম, সেখানে বেড়ে ওঠা। তারপর বাংলাদেশ দলে খেলার স্বপ্ন দেখা। এখন তো বাংলাদেশের ফুটবলেই বড় এক নাম জামাল ভূইয়া। এশিয়ান গেমসে প্রথম ম্যাচে হারের পর জামালের মনটা হয়তো একটু খারাপ। তবে অধিনায়ত্ব পেয়ে ভীষণ খুশি। প্রথম আলোকে প্রথমেই বললেন, ‘বাংলাদেশ অনেক বড় দেশ। অনেক মানুষ এখানে। এমন দেশের ফুটবল দলের অধিনায়ক হওয়া গর্বের ব্যাপারই।’
জাতীয় দলে খেলতে জামাল প্রথম বাংলাদেশে আসেন ২০১০ সালে। তখন পাসপোর্ট সমস্যায় খেলা হয়নি। সেই হতাশায় আর ফিরতে চাইছিলেন না বাংলাদেশে। একবার বাফুফে ডাকলে আসেননি। ২০১১ সালে আবার ডাকে বাফুফে, তখনও তিনি ‘না’ বলেই দিয়েছিলেন। শেষে লোকভিক ডি ক্রুইফ এসে তাঁকে জামালকে ডেকে আনেন। ২০১৩ সালে নেপালে চ্যালেঞ্জ কাপ দিয়ে অভিষেক হলো লাল-সবুজ জার্সিতে। সেই থেকে মালদ্বীপে প্রীতি ম্যাচ, জর্ডানে বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচ, ভুটানের সঙ্গে সেই ৩-০ হারের ম্যাচে জামাল ছিলেন না দলে। টম সেন্টফিট এসে তাঁকে বাদ দিয়ে দেন। তখন সেন্টফিটের কথা ছিল, ‘জামাল আমার খেলার ধরনের সঙ্গে যায় না।’
আবার ফিরে এখন তো দলেরই অন্যতম মুখ জামাল।এই যে বছর পাঁচেক খেলে ফেলেছেন বাংলাদেশ দলে, কেমন বদল দেখছেন? ‘আগে একটু খারাপ ছিল বাংলাদেশ দলের অবস্থা। এখন অনেক উন্নতি হয়েছে। পেশাদারি বেড়েছে। এগুলো অনেক গুরত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের জন্য।’ বলতে বলতে যোগ করেন, ‘এখন শুধু এক দুজন কোচ নয় বাংলাদেশ দলে। এখন ছয়জন কোচ। আগে ডায়েট বলতে কিছু ছিল না দলে। এখন সবাই ভালো খাবার খায়। অাগে সবাই সুগার খেয়েছে, চকলেট খেয়েছে। এখন শরীরের জন্য যেটা ভালো সেটা খাচ্ছে।’
বাংলাদেশ দলটাকেও আগের চেয়ে এখন শক্তিশালী মনে করেন জামাল, আগে জিম করত না কেউ। জিমে গেলে মনে করত এগুলো কী। এখন সবাই জিমে যায়। সবাই অনেক বেশি সচেতন।’ দল যা চায়, ফেডারেশন এখন সবই দেয় বলছেন জামাল, ‘এখন খেলোয়াড়দের পারফর্ম করার সময়। কাতারের দুবার এবং কোরিয়ায় আমরা একবার ক্যাম্প করলাম। এগুলো ভালো। এখন অবশ্যই আমাদের প্রতিদান দেওয়ার সময়। কোনো অজুহাত দিলে চলবে না। কারণ, আগে শুনতাম দেল এটা নেই, ওটা নেই। এখন সেটা বলা যাবে না। এখন সবই পাই আমরা।’
নিজের স্বপ্ন কী? ‘সাফ জেতা।’ জামাল যোগ করেন, ‘সাফ জয় হবে আমার জন্য অনেক বড় কিছু। দেশের নাম হবে। এটা আমি জিততে চাই। তার আগে এখন ভাবনায় শুধুই এশিয়ান গেমস। বললেন, ‘উজবেকিস্তান অনেক ভালো দল। এই গ্রুপের সবচেয়ে শক্তিশালী। ওদের সঙ্গে পেরে ওঠা কঠিন ছিল। আসলে ওরা এত বেশি এগিয়ে থাকা দল যে, আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল ওদের আটকানো।’
কথায় কথায় এল বিয়ে প্রসঙ্গ। কিছুদিন আগে বলেছিলেন বিয়ে করবেন, পাত্রী দেখা হচ্ছে। কিন্তু পছন্দের পাত্রীর দেখা নাকি পাচ্ছেন না। ব্যাপার কী? সমস্যাটা কোথায়? জামাল লাজুক হাসি দেন, ‘কী করব বলেন। পাই না তো পাত্রী।’ ইন্দোনেশিয়ায় পাত্রী কী পছন্দ? এবার হাসির মাত্রা বেড়ে গেল আরও।