অনভ্যাসেই আটকে যাচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাটিং

টি–টোয়েন্টির ব্যাটিংয়ের দেখাই যেন মিলছে না...ছবি: এএফপি

জয়ের অভ্যাসের সঙ্গে একটা অনভ্যাসও টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশ দলের। টি–টোয়েন্টির ব্যাটিং না করার অনভ্যাস। চার–ছক্কা হাঁকাতে না পারার অনভ্যস্ততা। মাসকাটের আল আমেরাত স্টেডিয়ামে গতকাল ওমানের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতলেও প্রথম ম্যাচের মতো ব্যাটিংটা ভালো হয়নি সে কারণেই।

বিশ্বকাপের ঠিক আগে ঘরের মাঠে পরপর দুই সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় সবাইকে আশাবাদী করেছিল। যাক, বিশ্বকাপের আগে জয়ের ধারায় তো আছে বাংলাদেশ দল! কিন্তু প্রদীপের নিচে যেমন অন্ধকার থাকে, আশার উল্টো পিঠে ছিল দুশ্চিন্তাও। দুই সিরিজেই যে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংটা হয়েছে আড়ষ্ট! টি–টোয়েন্টির হাতখোলা ব্যাটিং করে যেতে পারেননি কেউই।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটে সেটি করার সুযোগও ছিল না অবশ্য। বিশ্বকাপের জন্য ব্যাটিং–বোলিংয়ের প্রস্তুতির চেয়ে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়কেই পাখির চোখ করেছিল বাংলাদেশ। ‘অতিথি সৎকারে’র ব্যবস্থা করতে গিয়ে উইকেটে এমনই ‘বিষ’ ঢালা হলো যে তাতে নীল হয়ে উঠল বাংলাদেশের ব্যাটিংটাও। উইকেট বাঁচিয়ে খেলতে গিয়ে ব্যাটসম্যানরা পারেননি টি–টোয়েন্টির মারকাটারি ব্যাটিংয়ের অনুশীলন করতে। ঘরের মাঠের উইকেটে যখন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরই এই অবস্থা, অস্ট্রেলিয়া–নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা তো সেখানে ধুঁকবেনই। বোলাররাও পাননি টি–টোয়েন্টির উইকেটে ব্যাটসম্যানদের চ্যালেঞ্জ জানানোতে অভ্যস্ত হতে।

ওমানের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছে সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ নাঈমের জুটি
ছবি: এএফপি

তারপরও বাংলাদেশের ‘স্বার্থসিদ্ধি’ হলো দারুণভাবেই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যেকোনো সংস্করণের ক্রিকেটেই প্রথম সিরিজ জয়ের উল্লাসে ভাসল বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতল প্রথম টি–টোয়েন্টি সিরিজ। সাফল্যের আবহ সংগীতের মধ্যে তখনো অবশ্য প্রশ্ন উঠেছিল—এমন উইকেটে খেলে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি আসলে কতটা হলো? দলের মধ্য থেকে জবাব এসেছে, বিশ্বকাপের আগে হাতে যথেষ্টই সময় আছে। ওমানের কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে তত দিনে টি–টোয়েন্টির ব্যাটিংটা হাতের তালুতে নিয়ে আসা যাবে। এ নিয়ে না ভেবে বরং বিশ্বকাপে যে জয়ের অভ্যাস নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে, তা নিয়েই চনমনে ছিল দল। আশা ছিল, জয়ের ওই অভ্যাসই বিশ্বকাপে আত্মবিশ্বাসের অক্সিজেন জোগাবে।

ঢাকা থেকে উড়ে গিয়ে ওমানের আল হাজার পর্বতমালায় এখনো প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সে আশা। টি–টোয়েন্টির ব্যাটিংয়ের দেখা তবু মিলছে না। মাসকাটে অনানুষ্ঠানিক প্রস্তুতি ম্যাচে ২০৭ রান করার কথা ভুলে যান। ওটা ছিল ওমান ‘এ’ দলের বিপক্ষে। শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি ম্যাচ দুটির দিকে তাকালে দেখবেন, দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া ব্যাটিং–দুশ্চিন্তা সত্যি হওয়ার শুরু আসলে সেখানেই। অবশ্য দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে হেরেও বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপে পা রাখার আগমুহূর্তে কোচ, অধিনায়ক শুনিয়েছেন আশার কথা। যার সারমর্ম ছিল—ঘরের মাঠের জবুথবু ব্যাটিংয়ের কোনো প্রভাবই পড়বে না বিশ্বকাপে।

ওমানের বিপক্ষে বেশ নিচের দিকে ব্যাটিংয়ে এসেছেন মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিম
ছবি: বিসিবি

বাংলাদেশ দলের সেই ধারণা প্রথম পর্বের দুই ম্যাচে অন্তত সত্যি হয়নি। বরং ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে, খেলাটা বুঝি মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটেই হচ্ছে! স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে অবশ্য বেশি বিপদে পড়তে হয়েছে নিজের পরপর দুই ওভারে সাকিব–মুশফিককে তুলে নেওয়া ক্রিস গিভসের লেগ স্পিনের সামনেই। লেগ স্পিন খেলায় এমনিতেই অনভ্যস্ত বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। বিশ্বকাপের আগে তাতে কিছুটা ধাতস্থ হওয়ার সুযোগ ছিল দলের সঙ্গে তরুণ লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম থাকায়। কিন্তু কোয়ারেন্টিন খরচ কমাতে বিশ্বকাপ শুরুর আগে হঠাৎই পরিকল্পনায় বদল, আমিনুলকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হলো দেশে।

আমিনুল থাকলেই নেটে তাঁর বল খেলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা লেগ স্পিন খেলায় খুব অভ্যস্ত হয়ে যেতেন, তা হয়তো নয়। কিন্তু লেগ স্পিনের সামনে অনভ্যস্ততা তো কিছুটা দূর হতো! সবচেয়ে বড় কথা, আমিনুলকে আকস্মিক দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশের অপরিপক্ব পরিকল্পনাটাই তুলে ধরে আবার।

যেটার শুরু ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া–নিউজিল্যান্ডের জন্য মন্থর উইকেটের ফাঁদ পেতে। আর সে ফাঁদে সেই যে পা আটকাল, কাল ওমানের নির্বিষ বোলিংয়ের সামনেও তা আটকেই থাকল। জয়ের অভ্যাস কোনো কাজেই আসছে না যেন। কাল হচ্ছে টি–টোয়েন্টির ব্যাটিংয়ের অনভ্যাসটাই।