অ্যাটলেটিকোর ভিয়া-বরণ

নিরাপত্তারক্ষীরা অনেক চেষ্টা করলেন থামাতে। কিন্তু ভিসেন্তে ক্যালদেরন স্টেডিয়ামের প্রায় ২০ হাজার দর্শক একসঙ্গে মাঠে নেমে আসার পর তাঁরাও দিশেহারা। নিরুপায় হয়ে শেষ পর্যন্ত ডেভিড ভিয়াকেই সরিয়ে নিতে হলো নিরাপদ স্থানে। এর আগে দর্শকদের কেউ ছুঁয়ে দেখলেন প্রিয় তারকাকে, কেউ পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুললেন, হঠাৎ জড়িয়ে ধরে কেউ কেউ চুমুও খেলেন!এতটাই উচ্ছ্বাস, এতটাই ভালোবাসায় পরশু ‘ভিয়া-বরণ’ হলো অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে।মাত্র ৫১ লাখ ইউরোর বিনিময়ে যখন বার্সেলোনা তাঁকে বিক্রি করে দিয়েছিল কিছুদিন আগে, মজা করে একটি ব্রিটিশ দৈনিক লিখেছিল, ভিয়াকে অ্যাটলেটিকো পেয়ে গেল কয়েকটা বাদামের দামে! ফুটবল দলবদলের বাজার সম্পর্কে সামান্যতম ধারণা আছে, এমন যে-কেউই বুঝবেন, স্পেন জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার জন্য ট্রান্সফার ফিটা আসলেই খুব কম হয়ে গেছে। কিন্তু সেটা আসলে হয়েছিল অনেকটা ভিয়ার আগ্রহেই। এমনিতেই বার্সেলোনায় নিয়মিত খেলার সুযোগ পাচ্ছিলেন না, তার ওপর আসছেন নেইমার। অথচ সামনের বছর বিশ্বকাপ দলে ডাক পাওয়ার জন্য বিবেচনা করা হবে ক্লাবের পারফরম্যান্সই। বার্সায় বেঞ্চে বসে থাকার চেয়ে অন্য কোনো ক্লাবে গিয়ে নিয়মিত খেলাটাই ভালো মনে হচ্ছিল তাঁর কাছে।অ্যাটলেটিকোর কাছ থেকে প্রস্তাব আসার পর তাই সেটা সানন্দেই গ্রহণ করেছেন তিনি, ‘শুরুতে প্রিমিয়ার লিগের কথা ভাবছিলাম। কিন্তু তারপর অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ প্রস্তাব দিল এবং তিন দিনের মধ্যেই কথাবার্তা পাকা হয়ে গেল। ফুটবলীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও খুব একটা ভাবতে হয়নি, কারণ অ্যাটলেটিকো লা লিগায় তৃতীয় হয়েছে, আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলবে আর গতবার রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে স্প্যানিশ কাপ জিতেছে।’ নতুন ক্লাবে এসে শুরুতেই যে অভ্যর্থনা পেয়েছেন, তাতে উচ্ছ্বসিত স্প্যানিশ স্ট্রাইকার, ‘অ্যাটলেটিকো সমর্থকদের আন্তরিকতায় আমি খুব খুশি। এ রকম একটা বড় ক্লাবে খেলা দারুণ সম্মানের। আমি অ্যাটলেটিকোর জন্য সব দিতে তৈরি। পরের মৌসুমের জন্য খুবই অনুপ্রাণিত।’গত দুই মৌসুম অ্যাটলেটিকোর হয়ে গোলবন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন রাদামেল ফ্যালকাও। মাদ্রিদের ক্লাবটির হয়ে ৬৭ ম্যাচে ৫২ গোল করা কলম্বিয়ান স্ট্রাইকার কিছুদিন আগে পাড়ি জমিয়েছেন মোনাকোতে। তবে সমর্থকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক পরিচয়ের দিন ভিয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সে অভাব পূরণেরও, ‘ফ্যালকাও এখানে খুবই জনপ্রিয় ছিল। তাঁর অনুপস্থিতি যাতে বোঝা না যায়, আমি সেই চেষ্টাই করব।’১৯৯৫-৯৬ মৌসুমের পর আর স্প্যানিশ লিগের শিরোপা জিততে পারেনি রিয়াল মাদ্রিদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বীরা। স্প্যানিশ লিগ তো আসলে অনেক দিনই দুই ঘোড়ার দৌড়। রিয়াল-বার্সা দর্শক বানিয়ে সর্বশেষ লা লিগার শিরোপা জিতেছিল ভ্যালেন্সিয়া, সেটি সেই ২০০৩-০৪ মৌসুমে। তারপর গত এক দশক লা লিগার বাকি ক্লাবগুলো যেন লড়ছে শুধু তৃতীয় হওয়ার জন্য। সেখানে ভিয়ার সাবেক ক্লাব ভ্যালেন্সিয়া আর বর্তমান ক্লাব অ্যাটলেটিকোর মধ্যে চলে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এই দুটির মধ্যে তৃতীয় সেরা দল কোনটি? এই প্রশ্নে ভিয়ার উত্তর, ‘আজ থেকে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ আমার কাছে বিশ্বের সেরা দল।’ ওয়েবসাইট।