আগস্ট বিশেষ এক মাস সিদ্দিকুরের, বাংলাদেশের গলফের
২ আগস্ট ২০১০, বাংলাদেশের গলফার সিদ্দিকুর রহমানের জন্য গৌরবের এক দিন। দশ বছর আগে এই দিনে প্রথম এশিয়ান ট্যুর জয় করে আন্তর্জাতিক গলফে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছিলেন সিদ্দিকুর। তিন বছরের ব্যবধানে ২০১৩ সালে দিল্লিতে জিতেছিলেন আরও একটি এশিয়ান ট্যুর। তবে ব্রুনেই ওপেন দিয়ে প্রথম বড় কোনো ট্রফি উঁচিয়ে ধরায় এর মাহাত্ম্যটা বাংলাদেশের গলফের বিজ্ঞাপনের কাছে অনেক বেশি। প্রতি বছর ২ আগস্ট আসলেই আনমনে ফিরে যান সেই দিনটাতে।
এই তো গতকাল ছিল সেই শিরোপা জয়ের দশ বছর পূর্তি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সিদ্দিকুর লিখেছেন, ‘আজ আমার বিশেষ এক দিন। এদিন আমার ক্যারিয়ারের নবজন্ম ঘটেছিল। প্রথম এশিয়ান ট্যুর জয়ের দশ বছর উদ্যাপন করছি।’
ভারতের সার্কিটে শিরোপা জয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে ব্রুনেই ওপেনে নেমেছিলেন সিদ্দিকুর। টুর্নামেন্টটি নামে এশিয়ান ট্যুর হলেও ইউরোপ, আমেরিকার বড় বড় গলফাররাও খেলতে এসেছিলেন ৩ লাখ ডলার প্রাইজমানির এ টুর্নামেন্টে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রথম হয়েছিলেন সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা বাংলাদেশের এক ছেলে। শিরোপার সঙ্গে হাতে উঠেছিল ৪৮ হাজার ৬০০ ডলারের চেক।
কোনো আগাম সংকেত না দিয়েই ব্রুনেইয়ে জ্বলে ওঠা। একশ ভাগের বেশি দিতে পেরেছিলেন বলেই সেটা সম্ভব হয়েছিল বলে মনে করেন সিদ্দিকুর, ‘ব্রুনেই ওপেন জয় ছিল আমার ক্যারিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সেই সময়ে ট্রফিটি জিততে পেরেছিলাম বলেই আমি আজকের সিদ্দিকুর হতে পেরেছি। নিজের শতভাগের চেয়েও বেশি দিতে পেরেছিলাম বলেই সম্ভব হয়েছিল ব্রুনেই ওপেন জয় করা।’
এখন পর্যন্ত দুইটি এশিয়ান ট্যুর জয় করেছেন বাংলাদেশের গলফের বড় মুখ। দ্বিতীয়টি ২০১৩ সালের দিল্লির হিরো ইন্ডিয়া ওপেন। ভারতের এই টুর্নামেন্টটি ছিল অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। অর্থের বিচারে ১৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ ব্রুনেইয়ের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। কিন্তু ব্রুনেই ওপেন জয়কেই এগিয়ে রাখেন সিদ্দিকুর, ‘আমার ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন বলব ব্রুনেই ওপেন জয়। দিল্লি ওপেনে ট্রফি জিততে অনেক বেশি বড় বড় খেলোয়াড়দের পেছনে ফেলতে হয়েছে। অর্থও অনেক বেশি ছিল। তবুও আমার কাছে ব্রুনেই সেরা। কারণ সেটা আমার জীবন বদলে দিয়েছে।’
২০১০ এর পরে ২০১৩-এর পরে পেরিয়ে গিয়েছে আরও সাত বছর। কিন্তু এশিয়ান ট্যুর আর জেতা হয়নি সিদ্দিকুরের। এতে নিজের ব্যর্থতা দেখছেন অবশ্যই। কিন্তু আবার স্মরণ করিয়ে দিলেন বাংলাদেশের গলফের পরিবেশটাও, ‘আমার আরও বেশি এশিয়ান ট্যুর জেতা উচিত ছিল। কিন্তু আমি পারিনি। আসলে গলফে নিয়মিত বড় শিরোপা জেতার জন্য আমাদের দেশে এখনো সেই উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়নি। আমাকে ভিসা পাওয়ার জন্য ছুটতে হয়। পারিবারিক দায়িত্ব আছে।শতভাগ মনোযোগ খেলায় দিতে পারি না। সব মিলিয়ে আমার আর জেতা হয়নি।’
করোনার এই সময় স্বাভাবিকভাবেই গলফ কোর্সে যাওয়া হয়নি সিদ্দিকুরের। হতাশার একটা সময় কাটছে তাঁর। তবে এ হতাশা দ্রুতই কেটে যাবে বলে আশাবাদ তাঁর। তিনি আবারও গলফে ফিরবেন। দেশকে এনে দেবেন কোনো না কোনো গৌরব।