আফ্রিদির দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডভাঙা সেই তারকা অবসরে

ধুমধাড়াক্কা ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি আছে অ্যান্ডারসনের।
ছবি: টুইটার

এককালে অসাধ্যসাধন করেছিলেন তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদির করা ওয়ানডের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটা (৩৭ বলে) আদৌ কেউ ভাঙতে পারবে কি না, সংশয় ছিল। অন্তত সেই সময় তো বটেই। তিনিই দেখিয়েছিলেন, চাইলে সেটাও করা সম্ভব, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩৬ বলে সেঞ্চুরি করে জানিয়ে দিয়েছিলেন, আর দশটা রেকর্ডের মতো আফ্রিদির ওই রেকর্ডও অবিনশ্বর নয়। পরে এবি ডি ভিলিয়ার্স রেকর্ডটি নিজের করে নেন (৩১ বলে)।

তবে আফ্রিদিকে হটিয়ে পাদপ্রদীপের আলোয় আসা নিউজিল্যান্ডের সেই অলরাউন্ডার কোরি অ্যান্ডারসনের বিদায়টা কিন্তু বেশ নীরবেই হলো। জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন এই তারকা।

তবে জাতীয় দল থেকে সরে যাচ্ছেন দেখে ক্রিকেট খেলাই ছেড়ে দিচ্ছেন, তা কিন্তু নয়; যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেট টি-টোয়েন্টিতে নাম লিখিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। তাঁদের সঙ্গে অ্যান্ডারসনের চুক্তিটা তিন বছরের। চুক্তিতে সই করেই জাতীয় দলকে বিদায় বলে দিয়েছেন এই তারকা। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ‘ব্ল্যাক ক্যাপস’দের হয়ে মোট ৯৩টি ম্যাচ খেলেছেন অ্যান্ডারসন।

অথচ একসময়ে এই কোরি অ্যান্ডারসনকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অন্যতম বড় বিজ্ঞাপন মনে করা হতো। আফ্রিদির রেকর্ড ভেঙে সবার নজরে আসা এই ক্রিকেটারকে ২০১৪ সালে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে দলে ভেড়ায় আইপিএলের দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। সেবার মুম্বাইকে কোয়ালিফায়ারে তোলার পেছনে অনেক বড় হাত ছিল এই অলরাউন্ডারের। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ৪৪ বলে ৯৫ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে রাতারাতি মুম্বাই-সমর্থকদের চোখের মণি হয়ে গিয়েছিলেন। পরে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে হেরে ফাইনালের আগেই বাদ পড়ে যায় তারা। ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডকে ফাইনালে তোলার পেছনেও অবদান ছিল অ্যান্ডারসনের।

মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়েও খেলেছেন আইপিএলে।
ছবি: টুইটার

কিন্তু ক্যারিয়ারজুড়েই জ্বালিয়েছে বিভিন্ন চোট। আজ পিঠের চোট তো কাল কুঁচকির। সব মিলিয়ে একসময়ে নিজের সামর্থ্যের প্রতি আত্মবিশ্বাসই হারিয়ে ফেলেছিলেন অ্যান্ডারসন। আস্তে আস্তে জাতীয় দল থেকেও দূরে সরে গেছেন। জিমি নিশাম, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমদের কল্যাণে বহুদিন ধরেই জাতীয় দলে অপাঙ্‌ক্তেয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ক্যারিয়ারে এত উত্থান-পতনের সাক্ষী অ্যান্ডারসনের বয়স এখনো ৩০ ছোঁয়নি। ভাবা যায়?

অবসর নিয়েই পাড়ি জমাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে। নিজের ক্যারিয়ারের নতুন অধ্যায় সম্পর্কে অ্যান্ডারসন বলেছেন, ‘সিদ্ধান্তটা আমার জন্য সহজ ছিল না। আমি নিজেকে বেশ কিছু প্রশ্ন করেছি। আমি এখন কী চাই? দুই বছর পর আমি নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চাই? পাঁচ বছরে? দশ বছরে? স্বাভাবিকভাবেই এই বয়সে এসে আপনি জীবন নিয়ে আরও গভীরভাবে চিন্তা করতে শিখবেন। আমার বাগ্‌দত্তা ম্যারি মার্গারেটও আমাকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে অনেক অনুপ্রাণিত করেছে। আমার জন্য ও যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে নিউজিল্যান্ডে এসেছিল। আমার এখন মনে হচ্ছে, ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাকাপাকিভাবে চলে যাওয়াটাই আদর্শ হবে, দুজনের জন্যই।’

কোরি অ্যান্ডারসন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেট টি-টোয়েন্টিতে নাম লিখিয়েছেন পাকিস্তানের সামি আসলাম ও দক্ষিণ আফ্রিকার ড্যান পিয়েট। তিন বছর সেখানে খেলার পর চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও নাম লেখাতে পারবেন অ্যান্ডারসন।