আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে ফিরলেন মুশফিকও

এই ম্যাচটি খেলবেন কিনা এ নিয়ে আগমুহূর্ত পর্যন্ত অনিশ্চয়তা ছিল। পুরো ফিট না হয়েও ম্যাচের গুরুত্ব বুঝে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিম আহত সেই কাঁধেই বিরাট দায়িত্ব নিয়েছিলেন। যখন ব্যাট হাতে নেমেছিলেন, স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছিল ১ রানে দুই উইকেট। মুমিনুল হককে সঙ্গে নিয়ে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ৬৮ রানের দারুণ এক জুটিও গড়েছিলেন। সেই সময়ই আম্পায়ারের মারাত্মক এক ভুলে এলবিডব্লু হয়ে ফিরে গেলেন। বল ব্যাটে লেগে মুশফিকের প্যাডে লেগেছিল। তবুও আঙুল তুলে দিয়েছেন জোহান ক্লোয়েট। মুশফিক যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না।

এই মুহূর্তে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের স্কোরটিও অবিশ্বাস্য। ২০ ওভার শেষে ৩ উইকেটে ৭২। মাত্রই আগের বলে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গেছেন ফর্মের সঙ্গে যুঝতে থাকা নাসির হোসেন। মুমিনুল ভরসা হয়ে ৪০ রানে অপরাজিত আছেন।

অথচ দিনের শুরুটা কী উজ্জ্বলভাবেই না হয়েছিল বাংলাদেশের জন্য। ৯০ রানে ৫ উইকেট পড়ে গিয়েছিল আফগানিস্তানের। তখন মনে হচ্ছিল, তাদের ১৫০ পেরোনোই কঠিন। রান তোলার ধীর গতি আর একের পর এক উইকেট পতন দেখে যাঁরা খেলা দেখা বাদ দিয়ে অন্য কাজে মন দিয়েছিলেন, চোখ কচলে তারাই পরে আবিষ্কার করেছেন, সেই আফগানিস্তানই শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে তুলল ৬ উইকেটে ২৫৪!

ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর শেষ দিকে স্টিম রোলার চালিয়েছেন আসগর স্তানিকজাই ও সামিউল্লাহ সেনওয়ারি। দুজনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জিং স্কোরই পেল আফগানিস্তান। ষষ্ঠ উইকেটে দুজনে যোগ করেছেন ১৬৪ রান। বাংলাদেশে বিপক্ষে যেটি ষষ্ঠ উইকেটে রেকর্ড জুটি। এর আগে ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে শতরানের জুটিই হয়েছিল মাত্র দুটো। সেনওয়ারি ৬৯ বলে ৮১ করে রান আউট হয়েছেন, স্তানিকজাই অপরাজিত ছিলেন ক্যারিয়ার-সেরা ৯০ রানে।

মুমিনুল হকের শিকার হয়ে যখন আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী ৭ রানে ফিরলেন তখন আফগানিস্তান তখন বিধ্বস্ত এক জনপদ যেন। প্রথমে ধীরে সুস্থেই ইনিংস মেরামতের কাজ শুরু করল স্তানিকজাই-সেনওয়ারি জুটি। প্রাথমিক বিপর্যয় সামলে দুই আফগান চড়াও হয়েছেন মূলত ৩৯ ওভার শেষে। শেষ ১১ ওভারে আফগানিস্তান তুলেছে ১১৭, খুইয়েছে মাত্র একটি উইকেট, সেটিও শেষ ওভারে। এ সময় ওভারে সাড়ে দশেরও বেশি করে রান তুলে আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্যও বাংলাদেশকে একটা বিপদবার্তা দিয়ে রাখল যেন। বাংলাদেশের ফিল্ডাররা শেষ দিকে দুটো ক্যাচ ফেলে বড় উপকারও করে দিয়েছে তাদের।

শিশিরের কারণে এবারের এশিয়া কাপে টস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছুদিন ধরে ভাগ্যের সঙ্গেও যুঝতে থাকা বাংলাদেশের দিকে অবশ্য আজ শুরুতেই মুখ তুলে তাকিয়েছে ভাগ্য। টসে জিতে বোলিং নিয়েছেন মুশফিক। আর তিনের তৃতীয় ওভারেই ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন রুবেল হোসেন। আফগান পতনের সেই শুরু। নিজের টানা দুই ওভারে আরাফাত সানি করিম সাদিক ও নাজিবুল্লাহ জারদানকে ফেরালে ৪৩ রানেই প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে হারায় আফগানিস্তান। নিজের বলে ফিল্ডিং করতে গিয়ে আহত হয়ে মাঠ ছেড়েছেন সোহাগ গাজী। সেটি বাংলাদেশের জন্য শাপে বর হয়েই আসে। সোহাগের বদলে আক্রমণেই এসেই সানির জোড়া আঘাত।

চতুর্থ উইকেটে ৩১ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন নওরোজ মঙ্গল ও আসগর স্তানিকজাই। নাঈম ইসলামের দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে রান আউটের খাঁড়ায় পড়ে এই জুটিরও পতন। এরপর মুমিনুল হকের লেগস্পিনে স্লিপে নাসির দারুণ এক ক্যাচ ধরলে আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবীও ফিরে যেতে বাধ্য হন।

তখন কে কল্পনা করেছিল, এই আফগানিস্তান এমন ঝড় তুলবে শেষে! সবচেয়ে বড় কথা, যে আফগানিস্তান মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল, তারাই এখন বোলিং করতে নামবে চাঙ্গা হয়ে। আর যে বাংলাদেশ শুরুতে ছিল চনমনে, ফিল্ডিং শেষে মাঠ ছাড়ার সময় তাদের দেখাল রণক্লান্ত।

চাপটা স্পষ্ট বোঝা গেল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শুরুতেই। বাংলাদেশের জন্য বিষফাঁড়া হলো, আহত সোহাগ ব্যাটিং করতে না পারলে একজন ব্যাটসম্যান কম নিয়েই খেলতে হবে বাংলাদেশকে।