
দারুণ একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনালের পর বিশ্বকাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন এখন জার্মানি। তবে আর্জেন্টিনা মাথা উঁচু করেই দেশে ফিরবে। জার্মানদের কাজটা তারা কঠিনই করে তুলেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মারিও গোটশের জাদুতেই জার্মানি জিতেছে।
ম্যাচটা হয়েছে দুটি ভিন্ন ধরনের ফুটবলের। যে দুটি দল লড়াই করেছে তারা কেউ একবিন্দু জায়গা ছেড়ে দেয়নি। আমি অবশ্য বলব, সবকিছুর পরও ফুটবলের সৌন্দর্যটা এই ম্যাচে অটুটই ছিল।
জার্মানদের জন্য এই শিরোপা জয় বড় এক গৌরব। এই দলটাকে তারা তিলে তিলে গড়ে তুলেছে। ভিতটা মজবুত ছিল, যদিও আগের সব বিশ্বকাপে জার্মানি ভালো করতে পারেনি। ফুটবলের সব সময় তো আর সেরারা জেতে না। এই ফাইনালে অবশ্য সেরা দলটাই জিতেছে। কিন্তু আর্জেন্টাইনদের মনে রাখতে হবে তারা নিজেদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে, লড়াইয়ের মতো লড়াই করেছে।
তবে জার্মানি সব সময়ই খুব বিপজ্জনক একটা দল। এই দলে বেশ কয়েকজন বল প্লেয়ার আছে। দেখুন, জার্মানি যেভাবে খেলে সেটা একসময় লাতিন আমেরিকার দলগুলো খেলত। ফিলিপ লামদের মুভমেন্ট, বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ, পাসিং, সবকিছুই ৭০ দশকের ব্রাজিলের সেই দলকে মনে করিয়ে দেয়। ব্রাজিলে যেভাবে তারা খেলেছে নিঃসন্দেহে সেটা জার্মান ফুটবলের জন্য নতুন এক দিগন্ত।
আর্জেন্টিনার জন্য আমি অবশ্যই ব্যথিত। কারণ আমি হাভিয়ের মাচেরানোদের মতো কিছু খেলোয়াড়কে অনেক আগে থেকেই চিনি। আমি জানি এখন তাদের কতটা বেদনার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। তার পরও বিশ্বকাপে কিছু না করলেই কেবল আপনাকে এখান থেকে মাথা নিচু করে বিদায় নিতে হবে। তাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়।
আর্জেন্টিনা কিন্তু শুরুতে খুব একটা ভালো খেলছিল না। দল হিসেবেও তাদের এককাট্টা মনে হয়নি তখন। এরপর কোচ কয়েকটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—মাঝমাঠটা সংহত করেছেন, ডেমিচেলিসকে দলে নিয়েছেন। বেলজিয়াম ও হল্যান্ডের মতো দলকে হারানোর জন্য তাদের কম ঘাম ঝরাতে হয়নি। যেমন মাচেরানোর কথাই ধরুন, সে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়দের একজন। গত দুটি ম্যাচেই আর্জেন্টিনা অনেক গোছানো ফুটবল খেলেছে। এতক্ষণ যা বললাম তাতে মনে হতে পারে, আমি ‘সাবেলিস্তা’। আসলে আমি ‘সাবেলিস্তা’ বা ‘অ্যান্টিসাবেলিস্তা’ কোনোটিই নই। অনেক দিন ধরেই বলে আসছি আর্জেন্টিনা বাছাইপর্বে ভালো খেলেনি। কিন্তু যখন খেলার ধরন বদলাতে চেয়েছে তারা, তখনই ভালো খেলেছে।
এই সঙ্গে আমি ব্রাজিলকে নিয়ে কিছু বলতে চাই। অনেক দিন থেকেই বলছি ব্রাজিল ওদের শিকড় থেকে দূরে সরে আসছে। ১৯৮২ ও ’৮৬ বিশ্বপকাপে দেখুন, ব্রাজিল মন ভরানো ফুটবল খেলেছিল। কিন্তু সাফল্য পায়নি। এবার ঘরের মাঠে ওদের এমন বাজে খেলতে দেখা হৃদয়বিদারক। কারণ ব্রাজিলে ঐতিহ্যগতভাবে অনেক ভালো খেলোয়াড় আছে।
আশার কথা, জার্মানি শেখার মতো অনেক দৃষ্টান্ত রেখেছে। এটা সত্যি নয়, বিশ্বকাপ জিততে ওদের সংগ্রাম করতে হয়েছে। ওরা ভালো ফুটবল খেলেই শিরোপা জিতেছে। জার্মানিকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি। তার পরও আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বলে আমি একটু ব্যথিত।