ইনিয়েস্তা, আজও স্পেশাল কিছু?

শিল্পী ও তুলি! অনুশীলনে ইনিয়েস্তা। ছবি: রয়টার্স
শিল্পী ও তুলি! অনুশীলনে ইনিয়েস্তা। ছবি: রয়টার্স

নির্ধারিত ৯০ মিনিট আগেই ফুরিয়ে গেছে। ফুরিয়ে যাওয়ার পথে অতিরিক্ত সময়ের ৩০ মিনিটও। ম্যাচের মাত্র চার মিনিট বাকি। সেই সময় দৃশ্যপটে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। ডান প্রান্ত থেকে দুর্দান্ত এক ভলি। ডাচ গোলরক্ষক সেই আগুনে-শটের কাছে অসহায়। বল চলে গেল জালে। রেফারির গোলের বাঁশিটা এক রকম ম্যাচ শেষের আর স্পেনকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণার বাঁশিই হয়ে উঠল।
ইনিয়েস্তা তখন ছুটছেন। এক টানে খুলে ফেললেন জার্সি। ভেতরের গেঞ্জিতে ভেসে উঠল একটা হাতের লেখা। হাতের লেখাটি হয়তো সুন্দর নয়। কিন্তু শাশ্বত সুন্দর বাক্যটি। যে বাক্যে মিশে আছে এক অকালপ্রয়াত বন্ধুর প্রতি এক বন্ধুর ভালোবাসা। ‘দানি জার্ক আমাদের সঙ্গেই থাকবে।’
নিজের পরিবারের কাউকে নয়, বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করলে যুবদলে একসঙ্গে খেলা প্রয়াত বন্ধুকে উত্সর্গ করবেন বলে গোপনে ঠিক করে রেখেছিলেন ইনিয়েস্তা। স্পেনের মিডফিল্ডারের সেই গোল উদযাপনের ছবি ফুটবল ইতিহাসের ফ্রেমেই বন্দী হয়ে আছে।
কাকতালীয়ভাবে আজও বিশ্বকাপের আরেক ‘ফাইনাল’। ২০১০ বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্টই যে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি হচ্ছে একে অন্যের। আজও কি স্পেশাল কিছুর পরিকল্পনা করেছেন ইনিয়েস্তা? ম্যাচের গুরুত্ব অনুযায়ী ফাইনালের সঙ্গে কিছুর তুলনা চলে না। তবে ইনিয়েস্তা নিশ্চয়ই আজও গোল করতে চাইবেন।
বার্সার মাঝমাঠের প্রাণভোমরা অবশ্য ব্যক্তিগত হিসাব-নিকাশ কষছেন না। তিনি তাকিয়ে আছেন দলীয় অর্জনের দিকে। টানা দুবার বিশ্বকাপ জয়ের কৃতিত্ব আছে মাত্র দুটো দলের। ইতালি ও ব্রাজিল। সর্বশেষ কীর্তিটা ব্রাজিলের, ১৯৫৮ ও ১৯৬২ বিশ্বকাপে। গত অর্ধশতাব্দীতে এর পুনরাবৃত্তি হয়নি। এর থেকেই বোঝা যায় অর্জনটা এখন কত কঠিন।
কঠিন বলেই ইনিয়েস্তা আরও বেশি করে সেটা চাইছেন, ‘ইতিহাস গড়ার এক বিরল সুযোগের সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। এই দল এবং এই দলের দর্শনের ওপর আমার আস্থা আছে। আমাদের দলে এমন অনেকে আছে যারা ম্যাচের ভাগ্য বদলে দিতে পারে।’
এল পাইসে লেখা কলামে ইনিয়েস্তা লিখেছেন, ফুটবলে ইতিহাস কখনো আপনা থেকে গড়ে না। নিজ হাতে যারা ইতিহাস লিখতে পারে, তাদেরই নাম ঠাঁই পায় সোনালি পৃষ্ঠায়। ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো—বিরল শিরোপাত্রয়ী জয়েও তৃপ্ত নন তিনি, ‘এটা স্মৃতিচারী হওয়ার সময় নয়। বরং এটা সেই সময়, ইতিহাস থেকে প্রেরণা নিয়ে নতুন ইতিহাস গড়ার।’