এখন মেসি-নেইমার লড়াই দেখার অপেক্ষা

বিশ্বকাপ এখন নাটকীয় পর্বে এসে পৌঁছেছে। এটা মৃত্যুপর্ব। এখানে যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হতে পারে। আমি শুরু থেকেই বলে আসছি, ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনাই এবার সবচেয়ে ফেবারিট। ব্রাজিল নিজের মাঠে খেলছে। আর নিজের মাঠে খেললে আপনি কিছু আনুকূল্য পাবেনই। ব্রাজিল দলটিও দারুণ এবং আমি তাদের কোচ লুইস ফেলিপে স্কলারিকেও ব্যক্তিগতভাবে চিনি। আমি মনে করি, এ ধরনের টুর্নামেন্টের জন্য তিনি অসাধারণ একজন কোচ। আর এ রকম টুর্নামেন্টে দলকে সাহায্য করতে চাইলে তাদের সমর্থন দিয়ে যেতে হয়।
আমি মনে করি, যেকোনো ম্যাচে ব্রাজিল যদি শুরুটা ভালো করতে পারে, তাহলে সেটা প্রতিপক্ষের জন্য খুব খুব কঠিন হয়ে যেতে পারে। স্কলারি খুবই প্রেরণাদায়ক একজন মানুষ। তিনি আগে একটা শক্ত দল বাছাই করেন। তারপর এ রকম একটা টুর্নামেন্টের জন্য তাদের মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত করেন। কনফেডারেশনস কাপেই সবাই সেটা দেখেছে। তিনি দায়িত্ব নিলেন এবং দলটাকে চ্যাম্পিয়ন করলেন। ওটা ছিল বিশ্বকাপের জন্য ব্রাজিলের প্রস্তুতি। সুতরাং আমি ব্রাজিলকেই সবার চেয়ে এগিয়ে রাখব। যদিও শেষ ষোলোর ম্যাচগুলোর ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে। জার্মানি অনেক ভালো ফুটবল খেলছে। তারপর আসবে আর্জেন্টিনার নাম। এরপর হল্যান্ড। এক দল তরুণ ফুটবলার নিয়ে জার্মানি তাদের দলটাকে ঢেলে সাজিয়েছে। আর্জেন্টিনার বেলায়ও প্রায় একই কথা বলা যয়। দুটি দলেই অনেক তরুণ ফুটবলার এবং এ কারণেই এ দলগুলো আমার ফেবারিট। কারণ, তাদের ঐতিহ্য আর অভিজ্ঞতা। ওরা বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল, ফাইনাল খেলে অভ্যস্ত। কঠিন সময়ে এই অভিজ্ঞতাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। আর এটাই টুর্নামেন্টও জিতিয়ে দিতে পারে। দলে প্রতিভা আর সামর্থ্যের সমন্বয় এবং অনেকগুলো বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতা এসব সময়ে খুব কাজে দেয়।
লিওনেল মেসিকে খেলতে দেখা তো সব সময়ই রোমাঞ্চকর। যদিও আমার মনে হচ্ছে, সে শতভাগ ফিট নয়। এ বছর সে দুই মাসের মতো চোটে ছিল। কিন্তু তার পরও সে এই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার জন্য লড়ছে। আমি নিশ্চিত, যদি তার দল সেমিফাইনাল বা ফাইনাল পর্যন্ত যায়, তাহলে আমরা আরও অনেকগুলো জাদুকরি মেসি-মুহূর্ত দেখতে পাব।
আমার নিজের দেশের কিছুই ভালো হয়নি। চোট, লাল কার্ড, পেনাল্টি সবকিছুই পর্তুগালের বিপক্ষে গেছে। দল হিসেবেও তারা খারাপ খেলেছে। আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জন্য এটা দুর্ভাগ্যজনক এক টুর্নামেন্ট। রোনালদোর মতো বিশ্বসেরা ফুটবলারের কাছ থেকে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু তাকে তো সহযোগিতা করার মতো কাউকে থাকতে হবে। তার ওপর আবার চোট। আপনি রিয়াল মাদ্রিদের রোনালদো আর পর্তুগালের রোনালদোর মধ্যে তুলনা করতে পারেন না। কারণ, দুই দলে তার আলাদা সতীর্থ। পর্তুগাল তো আর রিয়াল মাদ্রিদ নয়। রোনালদো তার সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছে। আমাদের উচিত হবে না তাকে কোনো দোষ দেওয়া। সে তার দেশের জন্য সেরাটাই দিতে চেয়েছে। ও বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার, অসাধারণ একটা মৌসুম কাটিয়েছে। একেক জনের একেক মতামত থাকতেই পারে। তবে আমার মনে হয়, গত বছর তার পারফরম্যান্স আসলেই অসাধারণ ছিল এবং সেই পর্তুগালের ১ নম্বর।
পর্তুগাল নেই। স্পেন, ইতালি আর ইংল্যান্ডও বিদায় নিয়েছে। জাভি, আলোনসোরা বিদায় বলেছে। এখন আমি শুধু নেইমার আর মেসির মধ্যে লড়াই দেখার অপেক্ষায়। দেখা যাক কে ফাইনাল খেলে। আগেই বলেছি, এটা মৃত্যুপর্ব। এখানে যেকোনো কিছুই হতে পারে।