এমন ব্যাটিংয়ের কারণ জানেন না খালেদ মাহমুদ

আলোর স্বল্পতায় আনুমানিক ৫০ ওভার ব্যাটিং করার চ্যালেঞ্জ কমে নেমে আসে ২৬ ওভারে। এর মধ্যেই ৭৬ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফলোঅনের শঙ্কায় বাংলাদেশ।ছবি : শামসুল হক

খালেদ মাহমুদ জাতীয় ক্রিকেট দলের টিম ডিরেক্টর। দলের পরিকল্পনা ও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা এখন তাঁর। ঢাকা টেস্টে যদিও দলের সঙ্গে নেই তিনি। জৈব সুরক্ষাবলয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় ড্রেসিংরুমে আপাতত থাকতে পারছেন না, বাইরে থেকেই দলকে পরামর্শ দিতে হচ্ছে। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ চতুর্থ দিনের খেলা শেষে মাহমুদ তাই সরাসরি কথা বলতে পারলেন সংবাদকর্মীদের সঙ্গে। তবে ঠান্ডা লাগায় ভাঙা গলায় ব্যাটিং বিপর্যয় নিয়ে খালেদ মাহমুদের বলা কথাগুলো শুনে যে কারও মনে হতে পারে, জাতীয় দলের সঙ্গে বুঝি টিম ম্যানেজমেন্টের কোনো যোগাযোগই নেই! টিম ডিরেক্টর নিজেই বলছেন, এত বাজে ব্যাটিংয়ের কোনো কারণ জানা নেই তাঁর।

পাকিস্তান প্রথম ইনিংস ঘোষণার পর আজ চতুর্থ দিনে বাকি দেড় সেশনের পুরো সময় ব্যাট করতে হয়নি বাংলাদেশকে। আলোর স্বল্পতায় আনুমানিক ৫০ ওভার ব্যাটিং করার চ্যালেঞ্জ কমে নেমে আসে ২৬ ওভারে। এর মধ্যেই ৭৬ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফলোঅনের শঙ্কায় বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ডের চেয়েও দৃষ্টিকটু লাগবে ব্যাটসম্যানদের আউট হওয়ার ধরন। মনে হচ্ছিল, এটা বুঝি ওয়ানডে কিংবা টি–টোয়েন্টি ম্যাচ, হাতে এতটুকু সময় নেই!

এ ম্যাচে দলের সঙ্গে নেই খালেদ মাহমুদ
ছবি : শামসুল হক

সাধারণত দল মাঠে কেমন খেলবে, কৌশল কেমন হবে—এসব বিষয় জানা থাকে টিম ম্যানেজমেন্টের। দলের সঙ্গে না থাকলেও  খালেদ মাহমুদ তো এই ম্যানেজমেন্টেরই অংশ। কিন্তু বাংলাদেশ আজ যেভাবে ব্যাট করেছে, সে সম্পর্কে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলে সাবেক এই ক্রিকেটারের মুখ থেকে ‘জানি না’ কথাটাই বেশি উচ্চারিত হয়েছে।

সংবাদকর্মীদের খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘আমি ওপর থেকে খেলা দেখেছি। কেন এমন হলো জানি না। অধৈর্য ব্যাপারটা ছিল, টেস্ট ব্যাটিং বলতে যা বোঝায় সে রকম তো ব্যাটিং করিনি আমরা। কেন এ ব্যাপারটা হচ্ছে, সেটা চিন্তার বিষয়।’ অর্থাৎ ব্যাটসম্যানদের বাইশ গজে ‘আত্মহত্যা’র ব্যাখ্যা নেই টিম ডিরেক্টরের কাছে!

পাকিস্তানের অফ স্পিনার সাজিদ খান এর আগে মাত্র ৩ টেস্ট খেলেছেন। শুধু তাঁকেই আজ ৬ উইকেট দিয়েছে বাংলাদেশ দল। ম্যাচের পরিস্থিতির সঙ্গে একদমই বেমানান (ইনিংসের তখন মাত্র ১০.১ ওভার এবং দুই ওপেনারও আউট) সময়ে অপ্রয়োজনীয় ও ঝুঁকিপূর্ণ সিঙ্গেল নিতে গিয়ে রানআউট হন স্বয়ং অধিনায়ক মুমিনুল হক। ভাবা যায়! টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং অবশ্য সব সময় ভাবনা ভেঙেচুরে নতুন সব চমক উপহার দেয়!

ব্যাটসম্যানদের বাইশ গজে ‘আত্মহত্যা’র ব্যাখ্যা নেই টিম ডিরেক্টরের কাছে!
ছবি: প্রথম আলো

অভিষিক্ত মাহমুদুল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন। সাদমান বাড়তি বাউন্স পাওয়া বল অযথাই কাট করতে গিয়ে ক্যাচ তুলেছেন। সবচেয়ে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম পর্যন্ত স্লগ সুইপ খেলার ‘লোভ’ সংবরণ করতে না পেরে ‘আত্মহত্যা’ করলেন! অথচ টিম ম্যানেজমেন্ট থেকেই বলা হয় স্পিনটাই ভালো খেলে বাংলাদেশ।

‘উইকেটে স্পিন হচ্ছিল এবং ওরা ভালো স্পিনও করেছে। কিন্তু ভালো স্পিন খেলার সামর্থ্য তো আমাদের আছে। হয়নি কেন, বা এত তাড়াহুড়ো কেন, সেটা জানি না। আমরা তো জানি যে আজ সারা দিন ব্যাটিং করার কথা ছিল, কালকের দিনে টেস্ট শেষ হবে। চারটা-সাড়ে চারটা সেশন হয়তোবা’, বলেন বাংলাদেশ দলের এই টিম ডিরেক্টর। অবাক করা বিষয়, ৩২ বলে ২৩ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করা সাকিব আল হাসানও অস্থিরচিত্তে ব্যাট করেছেন। অযথাই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে শট খেলার চেষ্টা করেন।

টেস্টে, তা–ও দলের সঙিন অবস্থায় এমন ‘চেষ্টা’ কতটুকু যুক্তিসংগত? খালেদ মাহমুদের কাছে নিশ্চয়ই এটারও ব্যাখ্যা নেই!