জানা কথাগুলোই মুমিনুলের মুখে

অথচ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়ার আগে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক বলছিলেন ধৈর্য ধরে লম্বা সময় ব্যাটিং করার কথাফাইল ছবি: প্রথম আলো

‘৮০ করেছি, এটাই বেশি। না মারলে এই ৮০ রানও হতো না।’

কথাটা দক্ষিণ আফ্রিকাফেরত বাংলাদেশ টেস্ট দলের এক ব্যাটসম্যানের। পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের হঠাৎই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার ব্যাখ্যাটা আজ তিনি এভাবেই দিলেন।

অথচ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়ার আগে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক কী বলেছিলেন? বলছিলেন ধৈর্য ধরে লম্বা সময় ব্যাটিং করার কথা। দক্ষিণ আফ্রিকায় ভালো করতে হলে কী করতে হবে—এই প্রশ্নে মুমিনুল উত্তর দিয়েছিলেন, ‘লম্বা সময় ব্যাটিং করতে হবে। দুই-আড়াই দিন যদি কোনো টেস্টে ব্যাটিং করতে পারি, তাহলে আমরা সব সময় ম্যাচে টিকে থাকব। দক্ষিণ আফ্রিকায় আমরা কতক্ষণ ব্যাটিং করতে পারি, সেটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নিউজিল্যান্ডে ছেলেরা লম্বা সময় ব্যাটিং করে দেখিয়েছে যে, ওরা পারে। ফলও পেয়েছে। আমাদের নিজেদের জন্যও এই উদাহরণটা দরকার ছিল।’

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশ দলের একটা অংশ ফিরেছে আজ
সংগৃহীত

নিউজিল্যান্ডের এই শিক্ষাটা ডারবান টেস্ট পর্যন্ত ধরে রেখেছিল বাংলাদেশ। মাহমুদুল হাসানের শতক ও তাঁর আশপাশে বাকি ব্যাটসম্যানদের ক্রিজে আঁকড়ে পড়ে থাকার চেষ্টাটা ছিল চোখে পড়ার মতো। এমনকি ডারবান টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৩ রানে অলআউট হয়ে গেলেও ব্যাটসম্যানরা ধরে খেলার চেষ্টা করেছেন। পোর্ট এলিজাবেথে এসে ধৈর্যের সেই বাঁধ ভেঙে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনারদের, বিশেষ করে কেশব মহারাজকে যেন পাল্টা আক্রমণেই বশ করতে চেয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।

মহারাজও হয়তো বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন। একটু ফ্লাইট, একটু ওভার স্পিন আর গতির বৈচিত্র্য হলেই হলো—বাংলাদেশ প্রতি–আক্রমণের পথই বেছে নেবে। পাকিস্তানের সাজিদ খানের তো এটা ভালোই জানার কথা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রাকিম কর্নওয়াল, শ্রীলঙ্কার প্রবীণ জয়াবিক্রমা, পাকিস্তানের সাজিদ খানেরও এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। মহারাজের মতো এই তিন স্পিনারও গত দুই বছরে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের বিলিয়ে দেওয়া উইকেটে নিজেদের রেকর্ড সমৃদ্ধ করেছেন।

টেস্ট সিরিজে এভাবে হাসতে পারেননি মুমিনুল
এএফপি

২০২১ সালের বাংলাদেশ সফরে এসে ঢাকা টেস্ট জিতিয়ে দিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অফ স্পিনার কর্নওয়াল। একই বছর শ্রীলঙ্কা সফরের পালেকেল্লে টেস্টে জয়বিক্রমা নিয়েছেন ১১ উইকেট। গত ডিসেম্বরে পাকিস্তানি অফ স্পিনার সাজিদ খান তো বাংলাদেশের বিপক্ষে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডই করে ফেলেছেন। মিরপুরে প্রথম ইনিংসে নিয়েছেন ৮ উইকেট, দ্বিতীয় ইনিংসে ৪। এবারের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে মহারাজ কী করেছেন, সেই স্মৃতি তো একদম তাজা। সবার ক্ষেত্রে একটা জিনিস কমন, বল বাঁক খেলে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরাও বেঁকে বসেন।

প্রতি সিরিজে শেখার অনেক কিছু থাকে। আপনি যদি শেখা বাদ দেন, তাহলে উন্নতি করতে পারবেন না। আমার কাছে মনে হয় ব্যাটিংয়ে স্পিন কীভাবে হ্যান্ডেল করবেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।
মুমিনুল হক

আজ দেশে ফিরে আসা টেস্ট দলের আট ক্রিকেটারকে এ নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হলো। বিমানবন্দরে মুমিনুল তাঁদের দলের প্রতিনিধি হয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বললেন, ‘প্রতি সিরিজে শেখার অনেক কিছু থাকে। আপনি যদি শেখা বাদ দেন, তাহলে উন্নতি করতে পারবেন না। আমার কাছে মনে হয় ব্যাটিংয়ে স্পিন কীভাবে হ্যান্ডেল করবেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। টেস্ট ক্রিকেটে কিছু সেশন থাকে, যেখানে আপনি ডমিনেট করবেন। আবার কোনো সেশন থাকবে, যেখানে ডমিনেট করবেন না। পেস বোলাররা নতুন ও পুরোনো বলে কীভাবে বোলিং করবে, শেষ সেশনে কীভাবে বোলিং করবে, এমন অনেক কিছুই শেখার আছে।’

এসব এমন কী নতুন কথা? এ তো ক্রিকেটে আগ্রহীমাত্ররই জানা। মুমিনুল এসব শিক্ষামূলক কথা আবার কেন বললেন, তা শুধু তিনিই বলতে পারবেন।

তাঁর পরের কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স মুমিনুলের কাছে কোনো অপ্রত্যাশিত ধাক্কা হয়ে আসেনি। নইলে কেন বলবেন, ‘আপনাদের হয়তো প্রত্যাশা বেশি ছিল। অনেকেই মনে করছেন, একটা টেস্ট জিতে (নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই) আমরা হয়তো বিশ্বের এক বা দুই নম্বর দল হয়ে গেছি। ওয়ানডেতে তো আমরা অনেক স্থিতিশীল দল, টেস্টে না। সেটাও আমাদের বুঝতে হবে। কোন দিকে ঝুঁকি নিয়ে শট খেলব, রান করব, এসব বুঝতে হবে।’

মুমিনুল এখন টেস্ট–ব্যর্থতার গ্লানি বয়ে বেড়াতে চান না। সমালোচনার ঝড় পাশ কাটিয়ে এগোতে চান সামনে
এএফপি

টেস্ট দল কে চালায়, এ নিয়েও প্রশ্ন হয়েছে। জবাবটা অবশ্য মুমিনুল দিয়েছেন সপাটে পুল শট খেলে, ‘যেহেতু আমি দলের অধিনায়ক, সিদ্ধান্ত আমিই নিই। কেউ আমাকে ফোর্স করে না, ওই ক্ষমতাটুকু আমার আছে। হয়তো আমি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমে বোলিং করে হেরেছি বলে এই কথাটা এসেছে।’

মুমিনুল এখন টেস্ট–ব্যর্থতার গ্লানি বয়ে বেড়াতে চান না। সমালোচনার ঝড় পাশ কাটিয়ে এগোতে চান সামনে। আগামী ৮ মে বাংলাদেশে দুটি টেস্ট খেলতে আসবে শ্রীলঙ্কা। তাঁর চোখ এখন সেদিকেই, ‘এটা হতেই পারে। আমি যদি এখন থেকে নেগেটিভ চিন্তা করি, তাহলে নিজের কাছে নিজেকে ভিতু মনে হবে। আমি যেমন ছিলাম, তেমনই আছি। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যে ভুলটা করেছি, এই ভুলটা পরের সিরিজে যেন না করি। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

টেস্ট ক্রিকেটটা টেস্টের মতো করে খেলার শিক্ষাটা বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত নেয় কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।