টিকার অপেক্ষায় বাড়ছে শঙ্কা

হাতে গোনা কয়েকজন ফুটবলার ছাড়া করোনার টিকা নেননি জাতীয় দল ও ঘরোয়া ফুটবলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই।

ফুটবলারদের মাঠে নামার অপরিহার্য শর্ত এখন করোনা পরীক্ষা।
ফাইল ছবি

২৫ জুন আবারও মাঠে গড়ানোর কথা প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ। খসড়া সূচি অনুযায়ী প্রথম দিনেই মুখোমুখি হওয়ার কথা দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব আবাহনী ও মোহামেডানের। কিন্তু মোহামেডানের ১১ ফুটবলারসহ ১৭ জন করোনা পজিটিভ হওয়ায় ক্লাবটি লিগ পেছানোর আবেদন করেছে বাফুফের কাছে। এক ক্লাবেরই এত বেশিসংখ্যক খেলোয়াড়-কর্মকর্তার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা দুশ্চিন্তার কারণ তো বটেই। তা ছাড়া লিগে যাঁরা খেলবেন, সেই ফুটবলারদের বেশির ভাগেরই এখনো নেওয়া হয়নি করোনার টিকা।

বাফুফের আবেদনের পর এপ্রিলে খেলোয়াড়-কোচ-রেফারি ও কর্মকর্তাদের জন্য ৭০০ টিকার অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বাফুফে টিকার জন্য প্রথম পর্যায়ে নাম পাঠায় ৪০০ জনের। কিন্তু টিকার অপ্রতুলতা এবং অনেকেরই জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় বেশির ভাগ খেলোয়াড় এখনো টিকা নিতে পারেননি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘সুরক্ষা’ অ্যাপে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ছাড়া টিকার জন্য নাম নিবন্ধন করা যায় না।

খেলোয়াড়দের মধ্যে যাঁরা টিকা নিতে পেরেছেন, তাঁদের মধ্যে জাতীয় দলের ফুটবলার মাত্র চারজন। বাফুফে সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দলে থাকা খেলোয়াড়দের মধ্যে টিকা নিয়েছেন শুধু গোলরক্ষক শহিদুল আলম, মিডফিল্ডার সোহেল রানা ও স্ট্রাইকার সুমন রেজা। এ ছাড়া টিকা নিয়েছেন সর্বশেষ দলে না থাকা জাতীয় দলের আরেক ফুটবলার মামুনুল ইসলামও। এই চারজন অবশ্য টিকা নিয়েছেন যাঁর যাঁর সার্ভিসেস দলের মাধ্যমে।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম দফায় টিকা পাওয়ার কথা বিভিন্ন জাতীয় দলে খেলা ১০ হাজার খেলোয়াড়ের। বিসিবির উদ্যোগে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা সেই শ্রেণিতে আরও আগেই টিকা পেয়ে গেছেন। জাতীয় দলের ফুটবলারদের টিকা নিতে না পারার কারণ হিসেবে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম বলেছেন খেলোয়াড়দের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকার কথাই, ‘জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের করোনার টিকার আওতায় আনতে চেয়েও আমরা পারিনি। কারণ, তখন তারা তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে পারেনি।’ একই কারণে অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ছাড়া জাতীয় নারী ফুটবল দলেরও অন্য কেউ টিকা নিতে পারেননি। তবে পরে জাতীয় দলের ১৯ জন খেলোয়াড় জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিলে ‘সুরক্ষা’ অ্যাপে তাঁদের নাম নিবন্ধন করা হয়। বাফুফের আশা, পরবর্তী ধাপেই এই ফুটবলাররা টিকা পেয়ে যাবেন।

জাতীয় দলের ফুটবলাররাই যেখানে এখনো টিকা পাননি, ঘরোয়া ফুটবলের অন্য খেলোয়াড়দের অবস্থা তো অনুমান করাই যায়। জাতীয় পরিচয়পত্রের অভাবে টিকা নিতে পারেননি তাঁদের বেশির ভাগই। মোহামেডানের সর্বশেষ করোনায় আক্রান্ত ফুটবলারদের কারওই যেমন টিকা নেওয়া ছিল না। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ক্লাবের ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব বলেছেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়দের করোনার টিকা নেওয়া হয়নি। কারণ, তাদের বেশির ভাগের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই।’ একই কথা বলেছেন সাইফ স্পোর্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিরউদ্দিন চৌধুরীও, ‘বেশির ভাগ খেলোয়াড়ের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় টিকার জন্য তাদের নাম নিবন্ধন করা যায়নি।’ বসুন্ধরা কিংসেরও অল্প কয়েকজন খেলোয়াড়ই টিকা নিয়েছেন বলে জানান ক্লাবটির টেকনিক্যাল ডিরেক্টর আবু জুবায়ের, ‘যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে, তাদের টিকা দেওয়া হয়েছে। তবে সংখ্যাটা খুবই কম। বেশির ভাগ খেলোয়াড়েরই জাতীয় পরিচয়পত্র নেই।’ আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিত দাস জানান, তাঁদেরও মাত্র পাঁচ-ছয়জন খেলোয়াড়ই করোনার টিকা নিয়েছেন।

এমন নয় যে টিকা নিলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকবে না। কিন্তু তাতে অন্তত গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকিটা কমে। প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের মতো প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের ক্লাবগুলো জৈব সুরক্ষাবলয়েও থাকছে না। করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ হওয়াটাই তাই এখানে যথেষ্ট নয়। তা ছাড়া করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভবিষ্যতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় খেলোয়াড়দের টিকা বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। বিভিন্ন দেশ বিদেশি নাগরিকদের প্রবেশের ক্ষেত্রেও টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করছে। ফুটবলারদের টিকা নেওয়াটা সে কারণেও জরুরি।