তাঁকে কেউ কীভাবে জানাবে ম্যারাডোনা নেই!

দশ দিন হলো, নেই ম্যারাডোনা।ছবি : রয়টার্স

ছিয়াশির বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সাফল্য এসেছিল এই দুজনের হাত ধরেই।

মাঠের ভেতরে আর্জেন্টিনার সাফল্যের কারিগর যদি ডিয়েগো ম্যারাডোনা হন, মাঠের বাইরে থেকে প্রতিনিয়ত বিশ্ব জয়ের ফর্মুলা বাতলে দিয়েছিলেন কার্লোস বিলার্দো। দুজনের মধ্যে সম্পর্কটাও ছিল আদর্শ গুরু-শিষ্যের মতো। নিজের আত্মজীবনী ‘এল দিয়েগো’তে ম্যারাডোনা লিখেছিলেন, আটাত্তরের কোচ সেজার লুইস মেনোত্তির প্রিয়পাত্র যেমন মারিও কেম্পেস ছিলেন, বিলার্দোর প্রিয়পাত্র ছিলেন ম্যারাডোনা।

নিজের সেই প্রিয়পাত্রের মৃত্যুর খবর এখনো জানানো হয়নি কার্লোস বিলার্দোকে। পাছে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যান! ৮২ বছর বয়সী হৃৎপিণ্ডটা হৃদয়ের খুব কাছে থাকা একজনের মৃত্যুশোক নিতে পারবে?

এমনিতেই বিলার্দোর শরীর-স্বাস্থ্যের অবস্থা বেশি ভালো নয়। সাবেক এ কোচ কিছুদিন আগেই আক্রান্ত হয়েছিলেন করোনাভাইরাসে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে খবরটি নিশ্চিত করেছিল বিলার্দোর পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র। যদিও পরে সে তথ্য ভুল বলে জানিয়েছিলেন তাঁর ভাই হোর্হে বিলার্দো। বছরখানেক আগে জানা যায়, বিলার্দোর মস্তিষ্কে বাসা বেঁধেছে দুরারোগ্য হাকিম-অ্যাডামস সিনড্রোম। যে কারণে সেবার অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এই কিংবদন্তি।

ম্যারাডোনার সঙ্গে বিলার্দো।
ছবি : টুইটার

অবস্থার বিশেষ উন্নতি না হওয়া এই কোচকে এমনিতেই অনেক দেখেশুনে রাখতে হয়। নিজের প্রিয়পাত্রের মৃত্যুর খবরটা ভালোভাবে নিতে পারবেন কি না, সে আশঙ্কায় ম্যারাডোনার মৃত্যুর ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো সে খবরটা জানানোই হয়নি বিলার্দোকে।

টেলিভিশনে ভীষণ আসক্ত বিলার্দোকে আপাতত এ কারণেই টিভি দেখতে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তাঁর ভাই হোর্হে, ‘ম্যারাডোনার খবরটা হয়তো মিডিয়ায় আরও কয়েক দিন থাকবে। দুই দিন, চার দিন, বিশ দিন। যে কারণে ওকে (বিলার্দো) টিভি দেখতে দেওয়ার ব্যাপারটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ও টিভিতে অনেক খেলা দেখে, বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখে।’

খবরটা বিলার্দোকে আস্তেধীরে জানানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন হোর্হে। টিভি দেখে হুট করে জানার চেয়ে বিশেষ একটা উপায়ে ম্যারাডোনার মৃত্যুসংবাদটা বিলার্দোকে দেওয়া হবে। কী সেই উপায়?

শুধু গুরু-শিষ্য নয়, দুজন ছিলেন দুজনের পরম বন্ধুও।
ছবি : সংগৃহীত

আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম সিয়েলো স্পোর্তসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হোর্হে বলেছেন, ‘আমি এর মধ্যেই ছিয়াশির বিশ্বকাপজয়ী কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলেছি। এঁদের মধ্যে ডিফেন্ডার অস্কার রুগেরিও আছেন। বেশ কয়েকজন মিলে ওর (বিলার্দো) সঙ্গে দেখা করতে যাব। সেখানেই আস্তেধীরে ওকে ব্যাপারটা জানানো হবে।'

ম্যারাডোনা-বিলার্দো সম্পর্কটা যে কত গভীর ছিল, সেটা বোঝা যায় হোর্হের পরের কথাতেই, ‘ওর (বিলার্দো) জীবনে ম্যারাডোনার ভূমিকা অনেক। ক্লদিয়া ভিয়াফানের (ম্যারাডোনার সাবেক স্ত্রী) বাবা কোকো ভিয়াফানে বহুদিন ধরেই আমাদের পরিচিত। আমার স্ত্রী ক্লদিয়ার সঙ্গে শপিং মলে কেনাকাটা করতে যায়, মেয়েদের জন্য জামাকাপড় কেনে। এমনকি ক্লদিয়া বেশ কিছু দিন আগে বিলার্দোকে দেখতেও এসেছিল।’

শুধু ম্যারাডোনাই নন, এর আগে ছিয়াশির বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করা আর্জেন্টাইন লেফটব্যাক হোসে লুইস ব্রাউন যখন মারা যান, সে খবরটাও বিলার্দোকে দেওয়া হয়নি।

খেলোয়াড়ি জীবনে মিডফিল্ডার হিসেবে খেলা বিলার্দো খেলেছেন সান লরেঞ্জো, দেপোর্তিভো এসপানিওল ও এস্তুদিয়ান্তেসে। আর্জেন্টিনা ছাড়াও কোচ ছিলেন কলম্বিয়া, লিবিয়া ও গুয়াতেমালার। তা ছাড়া সেভিয়া, এস্তুদিয়ান্তেস, বোকা জুনিয়র্সেরও কোচ ছিলেন তিনি। ২০১৮ সাল থেকে বুয়েনস এইরসের এক নার্সিং হোমে বসবাস করছেন কার্লোস বিলার্দো। ২০১৯ সালে হাকিম-অ্যাডামস সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ায় নিবিড় পরিচর্যায়ও নিতে হয়েছিল তাঁকে।