তামিম জানত, ওর কাজ শেষ হয়নি

নাজমুল আবেদীনফাইল ছবি

খুব রোমাঞ্চকর একটা দিন গেল। চট্টগ্রাম টেস্টকেই রোমাঞ্চকর মনে হচ্ছে।

আমাদের ব্যাটিংয়ের শুরুটা গতকাল বেশ ভালো হয়েছিল কিন্তু আজ সকালে যে এত চমৎকার ওপেনিং জুটি করবে, সেটি হয়তো ভাবা যায়নি! সাম্প্রতিক অতীতে এমন ওপেনিং জুটি দেখিনি। এটির প্রয়োজনও ছিল। নিজেদের কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে এমন ব্যাটিংই করা উচিত।

বিশেষ করে তামিম ইকবালের কথা বলতে হয়। দুটি কারণে। প্রথমটি হলো, ও ওর মতো করে খেলেছে। স্বাভাবিকভাবেই তামিম একটু আক্রমণাত্মক খেলতে পছন্দ করে। কিন্তু প্রথম সেশনে আক্রমণ করলেও ওকে দেখে মনে হয়েছে, লাঞ্চ পর্যন্ত খেলার তাগিদ ছিল। মাহমুদুল যখন আউট হলো, সে বুঝেছে, তাকে আরও খেলতে হবে। আরও একটা ব্যাপার ছিল, শতকের উদ্‌যাপনে স্বাভাবিক উচ্ছ্বাসটা দেখিনি। ও জানত, ওর কাজটা শেষ হয়নি। এটি বাড়তি ভালো লাগার একটা ব্যাপার। সব মিলিয়ে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে।

'তামিমের শতকের উদ্‌যাপনে স্বাভাবিক উচ্ছ্বাসটা দেখিনি'
শামসুল হক

তামিমের ওপেনিং সঙ্গী মাহমুদুলকে নিয়েও একটু বলা দরকার। সাধারণত এমন জুনিয়র ক্রিকেটারদের আচার-আচরণ, সিদ্ধান্ত নেওয়া দেখে মনে হয়, সবাই একটু সিনিয়রদের ছায়ার মধ্যে থাকে। কিন্তু ওর খেলা দেখে অমন মনে হয় না। যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস আছে, নিজের সিদ্ধান্তটা নিজেই নেয়। খেলার ছন্দ, গতি অমনই। তামিম যখন আক্রমণাত্মক খেলছিল, তখনো মাহমুদুল নিজের মতো করে খেলেছে। ওর নিজস্ব একটা ধরন আছে খেলার। ও সেটা জানে, অনুসরণও করে। ওই পরিণতবোধটা আছে, যেটি দারুণ ব্যাপার। তামিমের সঙ্গে তার ওপেনিং জুটি আজ দারুণভাবে ম্যাচে এনেছে আমাদের।

অবশ্য দ্বিতীয় সেশনে শ্রীলঙ্কা যেভাবে ফিরে এসেছে, সে জন্য ওদের কৃতিত্ব প্রাপ্য। ব্রেকথ্রুর জন্য অপেক্ষা করেছে। মাহমুদুলকে ওর অস্বস্তির জায়গা বডিলাইনে আক্রমণ করে সফল হয়েছে। প্রথম সেশনের তুলনায় পরেরটিতে রানের গতি আরও কমে এসেছিল, ৩টি উইকেটও হারিয়েছি। টেস্ট ক্রিকেটের সৌন্দর্য এখানেই।

'মাহমুদুলের যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস আছে, নিজের সিদ্ধান্তটা নিজেই নেয়।'
শামসুল হক

শ্রীলঙ্কাকে আবার একটু পেছনে ঠেলে দেওয়ার কৃতিত্বটা মুশফিক-লিটনের জুটির। লিটন রানের মধ্যেই থাকলেও মুশফিক সেভাবে রান পাচ্ছিল না। আজ ওর খেলার মধ্যে বেশ আত্মবিশ্বাস দেখলাম। ওর ওয়াগন হুইলটাই বলে দেয়, চারদিকেই খেলেছে। প্রায় প্রতিটি বলই মিডল করছিল। এদের জুটি আমাদের এমন এক জায়গায় নিয়ে গেছে, যেখান থেকে শ্রীলঙ্কার স্কোরকে ধরার পর লিডের আশাও করতে পারি।

দুর্দান্ত ওপেনিং জুটির পর লিটন-মুশফিকের এ জুটি, এরপর সাকিব আছে, তামিম নিশ্চিতভাবেই ব্যাটিং করবে। কাল চা-বিরতি পর্যন্ত ব্যাটিং করতে পারলে মোটামুটি বড় একটা লিড থাকবে। এরপর হয়তো জয়ের জন্য খেলতে পারব। এখনো জয়ের অবস্থায় আছি, সেটি বলা যাবে না। তবে সুযোগটা আছে। আবার শ্রীলঙ্কারও জয়ের সুযোগটা আছে। কাল দ্রুত উইকেট নিয়ে আমাদের ৪১০-৪২০ রানের মধ্যে আটকে রাখতে পারলে ওদেরও ভালো সুযোগ থাকবে। সে ক্ষেত্রে কঠিন কন্ডিশনে আমাদের পঞ্চম দিনেই ব্যাটিং করতে হবে। তবে ম্যাচটা ওপেন এখনো, সব রকমের ফলই সম্ভব। রোমাঞ্চের আভাসই আছে। এর চেয়ে ভালো আর কী আশা করতে পারি একটা টেস্ট ম্যাচে!

'আমাদের দুজন অপরাজিত ব্যাটসম্যানই স্পিনে ভালো খেলে, খেলছেও।'
শামসুল হক

আমাদের দুজন অপরাজিত ব্যাটসম্যানই স্পিনে ভালো খেলে, খেলছেও। আশা করি কাল দুজন বড় স্কোর গড়বে, দেখে মনে হয়েছে, ওদের সেই ক্ষুধা আছে। সেটি করতে পারলে পরে রানের গতিটা বাড়াতেও পারব। কাল আরও একটি দারুণ দিন অপেক্ষা করছে, যেখানে বাংলাদেশের সুযোগ আছে এগিয়ে যাওয়ার।

আমরা এখন পর্যন্ত স্পিনে উইকেট হারাইনি। ওদের স্পিন সামলানো যাচ্ছে। আমার মনে হয়, এখন পর্যন্ত ওদের স্পিনারদের পারফরম্যান্স আমাদের মতো হয়নি। ১০টি উইকেটই আমাদের স্পিনাররা নিয়েছে, ওদের তুলনায় আমাদের স্পিনাররা বেশ ভালো করেছিল। পরের ইনিংসে আমাদের স্পিনাররা আরও কার্যকরী হবে। সেদিক থেকে আরেকটু আশাবাদী হওয়াই যায়।

'মুমিনুলের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের একটু ঘাটতি আছে।'
শামসুল হক

শেষে মুমিনুল হকের কথা একটু বলতে হয়। ওর ব্যাটিং দেখে ‘আনডিসাইসিভ’ মনে হয়েছে, মানে স্বচ্ছ পরিকল্পনার অভাব। আজ যেভাবে আউট হয়েছে, রেসপন্স ধীরগতির ছিল। ফুটওয়ার্ক, ঠিকঠাক পা নিয়ে গিয়ে খেলার ব্যাপারটা—‘ডিসাইসিভ’ মনে হয়নি, যেটা মুশফিককে দেখে মনে হয়েছে। পায়ের কাজ দিয়ে ব্যাটে মিডল করার ব্যাপারে মুমিনুলকে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী মনে হয়নি। এ রকম পর্যায় আসে, যখন ফুটওয়ার্কটা ঠিক মনের মতো হয় না, সিদ্ধান্ত নিতে একটু এদিক-ওদিক হয়ে যায়। ওর সঙ্গে সেটিই হচ্ছে। আমি জানি না ও এর আগে কী বলেছে, তবে ওর মধ্যে আস্থার অভাব দেখেছি।

অবশ্য এটি হতেই পারে, এমনটি হয়। অনেকের লম্বা সময় ধরেই হয়। একবার ধরে ফেলতে পারলে আবার কাটিয়ে ওঠা খুব কঠিন নয়। মুশফিকের ক্ষেত্রেও যেটি দেখেছি। খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে গেলেও আজ শুরু থেকেই একেবারে সেট ব্যাটসম্যানের মতো খেলেছে মুশফিক। তবে মুমিনুলের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের একটু ঘাটতি আছে।

আরও পড়ুন