তিনি ক্রিকেটও খেলেন, সিনেমাও করেন

এবার কেকেআরের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন বরুণ।ছবি : বিসিসিআই

ক্রিকেট ও সিনেমা— ভারতীয়দের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণের জায়গা। এই দুই ক্ষেত্রের মেলবন্ধনের ইতিহাস আছে যথেষ্টই। কত শত বলিউড তারকা যে ক্রিকেট তারকার সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনে জুটি বেঁধেছেন, বলে শেষ করা যাবে না। প্রেমের গুঞ্জনও কম শোনা যায় না।

এই দুই জগতের যোগসূত্র শুধুই কী রোমান্স? অবশ্যই নয়। আইপিএলের কথাই ধরুন, শাহরুখ খান, প্রীতি জিনতা কিংবা শিল্পা শেঠিদের মতো বলিউড অভিনেতা–অভিনেত্রীরা ক্রিকেটে বিনিয়োগ করেছেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি কিনে তাঁরা নিজেদের ভাগ্য জড়িয়েছেন ক্রিকেটের সঙ্গে। কিন্তু তাঁরা আগে সিনেতারকা, পরে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক। ক্রিকেটারদের সিনেমায় অভিনয় করা কিংবা অভিনেতাদের ক্রিকেটার হয়ে যাওয়ার উদাহরণও কম নয়। এমনই এক উদাহরণ গড়েছিলেন বরুণ চক্রবর্তীও।

হ্যাঁ, কলকাতা নাইট রাইডার্সের সেই রহস্য স্পিনার, যিনি এককালে স্থপতি ছিলেন, পরে আরও ভালোভাবে জীবন যাপন করার আশায় চলে এসেছেন ক্রিকেটে। শাহরুখ খানের ফ্র্যাঞ্চাইজির কল্যাণে আজ আবারও নতুন করে জানা গেল তথ্যটা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে বরুণের এই অভিনেতা-সত্তার কথাটা আবারও নতুনভাবে সবার সামনে তুলে ধরেছে কেকেআর।

জীভা সিনেমার একটি দৃশ্যে বরুণ।
ছবি : কলকাতা নাইট রাইডার্স টুইটার

২০১৪ সালে তামিল মুভি 'জীভা' তে দেখা গিয়েছিল বরুণকে। ঢেঁকি যেমন স্বর্গে গেলেও ধান ভানে, বরুণের ভূমিকাও সে সিনেমায় ক্রিকেটারেরই ছিল। ক্লাব ক্রিকেটার হিসেবে ছোট্ট একটি চরিত্রে দেখা গিয়েছিল বরুণকে, যে কি না নায়কের একজন বন্ধু। সিনেমাটি দক্ষিণ ভারতে বেশ আলোড়ন তুলেছিল।

২০১৯ আইপিএলে অন্যতম দামি খেলোয়াড় ছিলেন এই বরুণ চক্রবর্তী। মাদুরাই প্যান্থার্সকে তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জেতানো বরুণ প্রথমবারের মতো আইপিএল খেলতে এসেই ঝড় তুলেছিলেন ২০১৯ সালে। সেটি মাঠের বাইরে, নিলামে। আইপিএল নিলামে সেবার ৮ কোটি ৪০ লাখ রুপিতে 'রহস্য স্পিনার'খ্যাত বরুণ চক্রবর্তীকে কিনেছিল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা প্রায় ১০ কোটি (৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা)। মাইক হাসি বরুণকে উপাধি দিয়েছিলেন 'নতুন রহস্য স্পিনার'। সেবার পাঞ্জাবের হয়ে তেমন কিছু করতে না পারা এই স্পিনারকে এক মৌসুম খেলিয়েই ছেড়ে দিয়েছিল পাঞ্জাব, এরপর বরুণের ঠাঁই হয়েছিল কলকাতায়।

সিনেমাতেও বরুণের ভূমিকা ছিল ক্রিকেটারের।
ছবি : কলকাতা নাইট রাইডার্স টুইটার

বরুণের ক্রিকেট খেলা শুরু হয়েছিল বল ধরতে ধরতে। শৈশবে বল করার চাইতে উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে বল ধরাতেই বেশি আগ্রহ ছিল তাঁর। ১৩ বছর বয়স থেকে ক্রিকেট মাঠে আসা-যাওয়া বরুণের। তখন উইকেটকিপারই হতে চাইতেন এবং ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত খেলেছেন কিপিং গ্লাভস হাতে। কিন্তু দলে খুব একটা সুযোগ পেতেন না। বয়সভিত্তিক দলগুলো থেকে বেশ কয়েকবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় বরুণ রাগে ক্রিকেটই ছেড়ে দিয়েছিলেন!

মা-বাবার বাধ্য সন্তানের মতোই বরুণ ক্রিকেট ছেড়ে মনোযোগ দিয়েছিলেন পড়াশোনায়। লেখাপড়ায় তাঁর মাথাও ছিল খুব ভালো। চেন্নাইয়ে এসআরএম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যকলায় ডিগ্রিও নিয়েছেন। খেলাধুলার সঙ্গে তত দিনে সম্পর্ক শেষ বললেই চলে। কিন্তু মনে মনে ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা দাবিয়ে রাখতে পারেননি। স্থাপত্যকলায় পড়াশোনার পাশাপাশি পাড়ার টেপ টেনিসে সুনাম কুড়িয়েছিলেন ভালোই।

পাঁচ বছরের পড়াশোনা শেষে স্থাপত্যবিদ হিসেবে স্বাধীনভাবে কাজ করছিলেন বরুণ। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে বরুণ বুঝতে পেরেছিলেন, এই জায়গা আসলে তাঁর জন্য নয়। এই স্থাপত্যকলায় বন্দী থাকা তাঁর পক্ষে সম্ভব না। তাঁর ধ্যানজ্ঞান আসলে ক্রিকেট মাঠ। বরুণ বুঝে ফেলেছিলেন ২২ গজেই তাঁর প্রতিভার বিকাশ ঘটবে, স্থাপত্যকলায় নয়। তাই স্থাপত্যকলার কাজ পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে যোগ দিলেন ক্রমবেস্ট ক্রিকেট ক্লাবে। তবে বরুণ এবার আর আগের পথে হাঁটেননি, উইকেটরক্ষক থেকে হয়ে যান সিমার অলরাউন্ডার।

চোটে পড়ে পেসার থেকে স্পিনার হয়ে যান। চোট থেকে ফেরার পর নিজেকে পুরোপুরি পাল্টে ফেললেন। চেন্নাই লিগের চতুর্থ ডিভিশনে জুবিলি ক্রিকেট ক্লাবে যোগ দেন স্পিনার হিসেবে। এবার সাফল্য ধরা দেয়। ২০১৭-১৮ মৌসুমে ৮.২৬ গড়ে, ৩.০৬ রান রেটে তুলে নেন ৩১ উইকেট। রান পান ব্যাটিংয়েও। সেই মৌসুমে জুবিলি ক্রিকেট ক্লাবের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও ছিলেন বরুণ।

এবার অস্ট্রেলিয়া সফরে ডাক পেয়েছেন বরুণ।
ছবি : আইপিএল

তবে ক্রিকেট বা স্থাপত্যবিদ্যা নয়, বরুণের অভিজ্ঞতা আছে সিনেমাতেও। অবশ্য যে ক্রিকেটার পরপর প্রীতি জিনতা আর শাহরুখ খান কে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক হিসেবে পায়, তাঁর একটু আধটু সিনেমায় হাতেখড়ি না থাকলে কী আর হয়!