দারুণ বোলিং করেও ক্যাচ ছেড়ে আফসোস

ক্যারিয়ারসেরা বোলিং শরীফুলেরএএফপি

ক্যারিয়ারের সেরা বোলিংই করে ফেললেন শরীফুল ইসলাম। নামের পাশে ৩৪ রানে ৪ উইকেট। ৩ উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজও। ওদিকে নাসুম আহমেদ ও তাসকিন আহমেদের উইকেটের ঘর একেবারেই শূন্য।

এটুকু দেখে বাংলাদেশের বোলারদের মূল্যায়ন করতে গেলে ভুলই করবেন অবশ্য। উইকেট নিতে পারার বাড়তি কৃতিত্ব অবশ্যই দিতে হবে শরীফুল আর মিরাজকে। তবে প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামের প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস ১৪৯ রানে আটকে রাখতে ভূমিকা আছে সব বোলারেরই। বরং এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কেন আরো আগে অলআউট করা গেল না? ১১০ রানে ৯ উইকেট হারানো একটা দলের শেষ উইকেট জুটিতে কেন আসবে সর্বোচ্চ ৩৯ রান!

৩ উইকেট নেন মিরাজ
এএফপি

বোলিংয়ের সাফল্য উদ্‌যাপন না করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস শেষে বাংলাদেশকে মাঠ ছাড়তে হয়েছে একের পর এক ক্যাচ ছাড়ার আক্ষেপ নিয়ে। অ্যান্ডারসন ফিলিপ–জেইডেন সিলসের শেষ উইকেট জুটিতেই ক্যাচ পড়েছে তিনবার।

৩৫তম ওভারে ১১২ রানে অলআউট করে দেওয়ার সুযোগ এসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। কিন্তু ফিলিপের আকাশে তুলে দেওয়া বলটি দৌড়ে গিয়ে হাতে লাগিয়েও ধরতে পারেননি বোলার মোস্তাফিজুর রহমান।

আরও পড়ুন

এরপর ৩৮ ও ৩৯, পরপর দুই ওভারে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান সিলস। প্রথমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান যখন ১২১ তখন। শরীফুলকে প্রথম পঞ্চম উইকেট পাওয়া থেকে বঞ্চিত করে লং অফে এবার ক্যাচ ফেললেন মাহমুদউল্লাহ। ৩৯তম ওভারে দুর্ভাগা বোলার আবারো মোস্তাফিজ, মিডউইকেটে মোটামুটি সহজ ক্যাচটি ছাড়া ফিল্ডার আফিফ হোসেন।

ক্যাচ ছাড়ার শুরুটাই অবশ্য হয়েছে মোস্তাফিজের বলে। মন্থর উইকেটের কারণে উইকেট থেকে ভালোই সুবিধা পাচ্ছিলেন এই বাঁহাতি পেসার। কাটার হচ্ছিল, আর নিজেও মাঝে মাঝে স্লোয়ার ডেলিভারি দিচ্ছিলেন। ৩৩তম ওভারে সেরকমই এক স্লোয়ার বুঝতে না পেরে লং অনে উঁচু ক্যাচ দেন গুড়কেশ মতি। সহজ সেই ক্যাচটাও নিতে পারেননি শরীফুল, হাতে পড়েও বেরিয়ে যায় বল।

ফিল্ডিংয়ে সবার হাত এমন পিচ্ছিল না হয়ে উঠলে বাংলাদেশ ব্যাটিংটা করতে পারতো আরো নির্ভারভাবে। বোলাররা সবাই মিলে সেই পথটাই তৈরি করে দিয়েছিলেন। শরীফুল আর মিরাজ মিলে হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৭ উইকেট নিয়েছেন, কিন্তু উইকেট না পাওয়া নাসুম আর তাসকিন আহমেদের দারুণ বোলিংয়েরও পরোক্ষ ভূমিকা আছে তাতে। আর মোস্তাফিজের কথা তো বলাই হলো। বারবারই উইকেট বঞ্চিত হয়েছেন তিনি।

ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা ছিলেন নিস্প্রভ
এএফপি

সকালের বৃষ্টির পর তিন বার মাঠ পর্যবেক্ষণ শেষে বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে শুরু হয় ৪১ ওভারের প্রথম ওয়ানডে। বৃষ্টি পরবর্তী কন্ডিশনের কথা মাথায় রেখেই হয়তো অধিনায়ক তামিম ইকবাল টসে জিতেও ব্যাটিং নিলেন না। উল্টো ইনিংসের প্রথম ওভারটাই করতে দিলেন অভিষেক ওয়ানডে খেলতে নামা বাঁহাতি স্পিনার নাসুমকে।

প্রথম ওভারে মাত্র ১ রান দেওয়া নাসুমের বোলিং ফিগার শেষ পর্যন্ত ৮–৩–১৬–০। ৪৮ বলের মধ্যে ৪০টিতেই কোনো রান দেননি। এর মধ্যে ইনিংসের তৃতীয় ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে শামার ব্রুকসের বিপক্ষে কট বিহাইন্ডের আবেদন করে আউটও আদায় করে নিয়েছিলেন নাসুম। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান ব্রুকস।

আরও পড়ুন

৮ ওভারে ২৫ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকা তাসকিনের বলেও ছিল চেনা আগ্রাসন। অপরপ্রান্ত থেকে নাসুম–তাসকিনরা ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের কিছুটা চেপে ধরাতে পারাতেই সুযোগটা নিয়েছেন আরেক প্রান্তের বোলাররা। শরীফুল তো ৪ উইকেট পেলেন দুই বার জোড়া আঘাত করে, এর মধ্যে একবার সৃষ্টি করেছিলেন হ্যাটট্রিকের সুযোগও।

টেস্ট আর টি–টোয়েন্টিতে দারুণ ব্যাটিং করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা ওয়ানডেতে এসে যেন ব্যাটিংটা একটু ভুলেই গেলেন। একটু বেশি মেরে খেলতে গিয়েই ডেকে এনেছেন বিপদ। যে কারণে ইনিংসের সর্বোচ্চ জুটিটা এলো শেষ উইকেটে, তাও বাংলাদেশের ফিল্ডারদের একের পর এক ক্যাচ ছাড়ার সুযোগ নিয়ে।