নারাইন-জাদুর পর সাকিব-ঝলকে বেঙ্গালুরুকে বিদায় করে দিল কলকাতা

শেষ ওভারের প্রথম বলে গুরুত্বপূর্ণ চার মারেন সাকিবছবি: আইপিএল

যেন নিজের সব অভিজ্ঞতা ওই শটটায় বের করে আনলেন সাকিব আল হাসান। শেষ ওভারে কলকাতার প্রয়োজন ছিল ৭ রান। ড্যান ক্রিস্টিয়ানের বলটায় সাকিব করলেন স্কুপ। জানতেন, ফাইন লেগ ওপরে আছে। সে শটে হলো চার। শেষ দিকে বেশ চাপে পড়ে যাওয়া কলকাতাকে একরাশ স্বস্তি দিল সাকিবের ওই বাউন্ডারি। এউইন মরগানের সঙ্গে সাকিবের ১৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিটাই হয়ে গেল ম্যাচজয়ী, সাকিব বনে গেলেন কলকাতার ‘শেষের নায়ক’। আর তাতেই ভেঙে গেল অধিনায়ক হিসেবে বিরাট কোহলির বেঙ্গালুরুর হয়ে শিরোপা জেতার স্বপ্নটা। শারজায় এলিমিনেটরে বেঙ্গালুরুকে ৪ উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে চলে গেছে কলকাতা, সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ দিল্লি।

শেষে সাকিবের ওই ঝলকের আগে অবশ্য এদিন কলকাতার নায়ক সুনীল নারাইন। নারাইন ৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। সে ৪ উইকেটও বিরাট কোহলি, এবি ডি ভিলিয়ার্স, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও আগের ম্যাচে বেঙ্গালুরুর নায়ক শ্রীকর ভরতের। বেঙ্গালুরুর ব্যাটিং বলতে গেলে ধসিয়ে দিয়েছেন তিনি একাই। সেখানেই থামেননি, পরে পাঁচ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে খেলেছেন ১৫ বলে ২৬ রানের ইনিংস। রান তাড়ায় মাঝপথে কলকাতার যদি কোনো চাপ থেকে থাকে, ড্যান ক্রিস্টিয়ানের টানা তিনটি বৈধ ডেলিভারিতে তিন ছক্কায় সেটা উড়িয়ে দিয়েছেন নারাইনই।

এউইন মরগানের সঙ্গে সাকিবের জুটি জয় নিশ্চিত করে কলকাতার
ছবি: আইপিএল

টসে জিতে আগে ব্যাটিং করা বেঙ্গালুরুকে ১৩৮ রানে আটকে দেওয়ার কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন নারাইন। সঙ্গে ছিলেন সাকিব ও বরুণ চক্রবর্তী। এ তিনজন মিলে ১২ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৬৫ রান। মাঝের ওভারগুলোতে কলকাতার এ ত্রিমুখী স্পিন-আক্রমণেই খেই হারিয়েছে বেঙ্গালুরু। সে সময় বড় শট খেলতে পারেননি তাঁরা, ভালো শুরুর পরও তাই মেলেনি কাঙ্ক্ষিত স্কোরটা।

শুরুটা অবশ্য ভালোই হয়েছিল বেঙ্গালুরুর। আইপিএলের এ অংশে শারজার উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য সুবিধার নয় মোটেও। তবে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে বেঙ্গালুরু তোলে ৫৩ রান। ইনিংসের প্রথম ওভার বোলিং করতে এসে সাকিব আল হাসান দেন ৭ রান।

অবশ্য ষষ্ঠ ওভারে দেবদূত পাড়িকালের উইকেটের পর থেকেই কমতে শুরু করে বেঙ্গালুরুর রানের গতি। পঞ্চম ওভারের পর পরের বাউন্ডারির দেখা বেঙ্গালুরু পায় ১১তম ওভারে গিয়ে, সাকিবকে রিভার্স সুইপ করে চার মারেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। সেটা ছিল সাকিবের শেষ ওভার, সে ওভারে দেন ৯ রান। তবে মাঝের ২ ওভারে বেশ আঁটসাঁট বোলিং করেন তিনি, শেষ পর্যন্ত ৪ ওভারে দেন ২৪ রান।

নারাইন-ঝলক অবশ্য শুরু হয়েছে তারও আগেই। সাকিব-বরুণের তৈরি করা চাপের সুবিধা দারুণ সব ডেলিভারিতে আদায় করেছেন তিনি। প্রথমে শ্রীকর ভরত তাঁর শিকার, পরে এসে ফেরান শেষ পর্যন্ত বেঙ্গালুরুর হয়ে সর্বোচ্চ ৩৯ রান করা কোহলিকে। ম্যাক্সওয়েল বা ডি ভিলিয়ার্সকেও গিয়ার বদলাতে দেননি তিনি।

২১ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন নারাইন
ছবি: আইপিএল

রান তাড়ায় শুবমান গিল ও ভেঙ্কটেশ আইয়ারে ইতিবাচক শুরু পেয়েছিল কলকাতা। প্রথম ৬ ওভারে আসে ৪৮ রান, ১৮ বলে ২৯ রান করে এর আগেই ফেরেন গিল। সপ্তম ওভারে রাহুল ত্রিপাঠি যুজবেন্দ্র চাহালের বলে এলবিডব্লু হওয়ার পর ২৪ বলে ২৬ রানের জুটিতে কলকাতাকে টানেন আইয়ার ও নিতীশ রানা। জীবন পাওয়ার পরও ৩০ বলে ২৬ রান করে ফিরতে হয় আইয়ারকে। আইয়ারের উইকেট দিয়ে আইপিএলের এক মৌসুমে ডোয়াইন ব্রাভোর সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ৩২ উইকেট হয়ে যায় বেঙ্গালুরু পেসার হার্শাল প্যাটেলের।

সে সময় তৈরি হওয়া চাপ মিলিয়ে দেন নারাইন, ক্রিস্টিয়ানকে মারা ওই ৩ ছক্কায়। সে সময় কলকাতার জয়কে মনে হচ্ছিল সময়ের অপেক্ষা। মাঝে ২৫ বলে ২৩ রান করা রানাকে ফেরান চাহাল, এরপর ৩ বলের ব্যবধানে নারাইন ও দীনেশ কার্তিককে ফিরিয়ে বেঙ্গালুরুকে আবারও আশা জোগান মোহাম্মদ সিরাজ। সে ওভারে তিনি দেন ৩ রান, পরের ওভারে জর্জ গার্টন দেন ৫।

তবে শেষ ওভারের প্রথম বলে সাকিবের ওই শট নিশ্চিত করে, আজ বেঙ্গালুরুর দিন নয়। দিনটা নারাইনের। দিনটা সাকিবদের। দিনটা কলকাতারই।