নেইমারের প্রশ্ন, ‘আর্জেন্টিনা কি বিশ্বকাপ জিতে গেছে?’

ফিনালিসিমার শিরোপা হাতে আর্জেন্টিনা দলের উদযাপনছবি: রয়টার্স

পরশু রাতে ‘লা ফিনালিসিমা’য় ইতালির মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা। এ ম্যাচ ঘিরে বাংলাদেশের সমর্থকেরা দৃশ্যত যেন বিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন।

ব্রাজিলের বেশির ভাগ সমর্থক এ ম্যাচে ইতালির পক্ষে ছিলেন—অন্তত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের ফুটবল সমর্থকদের উন্মাদনায় এমনটা মনে হতেই পারে।

ইতালিকে ৩–০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর আর্জেন্টাইন সমর্থকদের উদ্‌যাপন দেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশেষ করে ফেসবুকে খোঁচা মারেন ব্রাজিলের সমর্থকেরা—আর্জেন্টিনা কি বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে? মজার ব্যাপার, একই প্রশ্ন নেইমারেরও!

ইতালির বিপক্ষে আর্জেন্টিনা যেভাবে খেলেছে, তাতে উচ্ছ্বসিত ছিলেন সমর্থকেরা। গোল না পেলেও গোটা মাঠ চষে দুর্দান্ত খেলেছেন লিওনেল মেসি। ইতালির গোলকিপার জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা অন্তত সাতটি সেভ করেন।

এমন দাপুটে জয়ের পর শুধু সমর্থক কেন, খেলোয়াড়েরাও আনন্দ উদ্‌যাপনের ফল্গুধারা বইয়ে দেন। ওয়েম্বলির মাঠ থেকে ড্রেসিংরুম এমনকি দলীয় বাসেও নেচে–গেয়ে একাকার করে দেন রদ্রিগো দি পল–জিওভান্নি লো সেলসোরা। ড্রেসিংরুমে আনন্দ উদ্‌যাপনের সময় একটি গান ধরেছিলেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা। সেই গানের কথাগুলো ভালো লাগেনি নেইমারের।

ড্রেসিংরুমে আর্জেন্টিনা দলের এই ছবিটি টু্ইট করেন সের্হিও আগুয়েরো
ছবি: টুইটার

আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ‘টিওয়াইসি স্পোর্টস’ সেই গানের কয়েক পঙ্‌ক্তি প্রকাশ করেছে, যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায়, ‘ব্রাজিলিয়ানরা, কী হলো/ পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা এমন কুঁকড়ে গেল!/ মেসি রিও থেকে কাপ (কোপা আমেরিকা) জিতে এসেছে/ আমরা আর্জেন্টাইনরা সব সময়ই উল্লাস করব, মনে যে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন...ম্যারাডোনা থেকে মালভিনাস (ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ) তো ভুলে যাইনি। আমরা সবাই এমন এবং সব সময় আর্জেন্টিনাকেই অনুসরণ করি।’

গত বছর জুলাইয়ে রিও ডি জেনিরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে কোপা আমেরিকা ফাইনালে নেইমারদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। গানের লাইনে সেটাই বোঝানো হয়। ইংল্যান্ডের সঙ্গে ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে যুদ্ধের কথাও উল্লেখ আছে।

একই গানের আরও কিছু পঙ্‌ক্তিমালা প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘মিরর’—তার বাংলা অর্থ দাঁড়ায়, ‘কী হলো ব্রাজিল/ তোমরা এখনো অপেক্ষা/ হলোটা কী?/ বস্তিবাসীরা তো কাঁদছে/ বছরের পর বছর চলে যায়, তোমরা ’৫০ বিশ্বকাপ নিয়েই পড়ে আছ/ ওরা ভয় পাচ্ছে যে এমন কিছু আবারও ঘটবে।’

গানের আরেকটি পঙ্‌ক্তিমালাও প্রকাশ করা হয় একই সংবাদমাধ্যমে, ‘...কারণ মুকুটটা মেসির/ তার বাঁ পায়ের জাদুতে সবাই মুগ্ধ/ ম্যারাডোনাকে স্মরণ করিয়ে দিলে বোধ হয় আরেকটু খারাপ লাগবে?/ খারাপ যে লাগে তা আমরা বুঝি/ কিন্তু কাপটা আর্জেন্টিনারই।’

পিএসজিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেন নেইমার, মেসি, আনহেল ডি মারিয়া, লিয়ান্দ্রো পারেদেসরা। ক্লাব সতীর্থদের এই গান গেয়ে উদ্‌যাপন সহ্য হয়নি নেইমারের।

ড্রেসিংরুমে ডি মারিয়াদের মাতামাতি ও গান গেয়ে উদ্‌যাপনের ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

ইনস্টাগ্রামে ফুটবল নিয়ে বিনোদনমূলক পেজ ‘ফুতিওসেদিয়ে’তে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুমে উদ্‌যাপন ও গান গাওয়ার ছবি প্রকাশ করে ক্যাপশনে লিখেছে, ‘ফিনালিসিমা জিতে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা ড্রেসিংরুমে ব্রাজিলকে খোঁচা মেরে গান গেয়ে আনন্দ–উল্লাস করছে।’

ব্রাজিল তারকা নেইমার তাঁর ভেরিফায়েড ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে সে পোস্টে মন্তব্য করেন, ‘তারা কি বিশ্বকাপ জিতে গেছে?’

ফিনালিসিমা এবার মাঠে গড়াল ২৯ বছর পর। ইউরো ও কোপা আমেরিকাজয়ী দুই দলের এই ম্যাচ আয়োজন নিয়ে বহু আগেই চুক্তি হয়েছিল দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনমেবল ও ইউরোপের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক উয়েফার। ১৯৮৫ ও ১৯৯৩ সালের পর এই প্রথম মুখোমুখি হলো কোপা ও ইউরোজয়ী দুই দল।