নেইমারের হিসাব মেলানোর পালা

বাংলাদেশ সময় আজ রাত ৩টায় ব্রাজিল-ভেনেজুয়েলা ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে লাতিন আমেরিকায় ফুটবল-শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই।

মেসির মতো নেইমারেরও যে দেশের হয়ে সাফল্য পেতে চানছবি: রয়টার্স

প্রশ্নটা সাধারণত মেসিকে নিয়েই করা হয়। এবার কি পারবেন?

আরেকটি কোপা আমেরিকা শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ সময় আজ রাতে। ক্লাব ক্যারিয়ারে সম্ভাব্য সবকিছু জেতা আর্জেন্টাইন তারকার জন্য জাতীয় দলের হয়ে কিছু জেতার শেষ সুযোগ বলা যায় যাকে। কিন্তু দেশের হয়ে কিছু জেতার প্রশ্নই যখন তোলা হয়, তখন নেইমার বাদ যাবেন কেন?

এক যুগ ধরে ব্রাজিল দলে খেলছেন নেইমার। কিন্তু কেমন কিছুই করে দেখাতে পারেননি
ছবি: রয়টার্স

তাঁর পায়ে যখন ফুটবল থাকে, আর মনটাকে যখন মাঠেই আটকে রাখেন তখন চোখ সরানো কঠিন হয়ে যায়। প্রকৃতি অকৃপণ হাতে দিয়েছেন তাঁকে, তবে মাঠে দেখা যায় তার ছিটেফোঁটাই। অবশ্য তাতেই বিবশ হয়ে পড়েন ফুটবলপ্রেমীরা। খামখেয়ালি কোনো শিল্পীর তুলির আঁচড় ফুটবল মাঠে অনূদিত হয় নেইমারের পায়ে। ব্রাজিলের বহুদিনের দুঃখ লাঘব হয়েছে তাঁর ছোঁয়াতেই। অলিম্পিক ফুটবলে সোনা এনে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা নেইমার পূরণ করেছেন ২০১৬ সালেই। কিন্তু সে তো অলিম্পিক দলের হয়ে অর্জন।

ব্রাজিল দলে নেইমারের হাত মেসির মতোই রিক্ত, শূন্য। প্রজন্মের সেরাদের একজন। ইউরোপযাত্রার চার বছর আগে থেকেই সবাই চেনেন তাঁকে। মেসি-রোনালদোকে টপকে ফুটবলের রাজত্ব বুঝে নেওয়ার কথা ছিল তাঁর। ব্রাজিলকে আরেকটি বিশ্বকাপ এনে দেওয়ার স্বপ্ন দেখার শুরুও আবির্ভাবের পর থেকেই। কিন্তু ব্রাজিলিয়ানদের অপেক্ষায় রাখতে রাখতেই তাঁর বয়স ২৯ হয়ে গেছে, প্রায় কিছুই করা হয়ে ওঠেনি নেইমারের। কদিন পরই জাতীয় দলে অভিষেকের এক যুগ পূর্তি হবে, কিন্তু প্রাপ্তির খাতায় সবেধন নীলমণি এক ফিফা কনফেডারেশন কাপ।

অথচ এমন হওয়ার কথা ছিল না। ২০১৪ সালে নেইমারে ভর করেই বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল ব্রাজিল। কিন্তু সেই বিশ্বকাপে নেইমারের মেরুদণ্ড ভেঙেছে, ব্রাজিলের ভেঙেছে স্বপ্ন। এরপর আরেকটি বিশ্বকাপ খেলেছে ব্রাজিল, কোপা খেলেছে আরও গোটা কয়েক, কিন্তু প্রাপ্তির খাতা নেইমারের শূন্য। ব্রাজিল অবশ্য একেবারে শূন্য থাকেনি। ২০১৯ কোপা আমেরিকা জিতে বড় কোনো শিরোপা জয়ের খরা ১২ বছরেই আটকে দিয়েছে ব্রাজিল। কিন্তু সে আনন্দে নেইমারকে মাতার সুযোগ দেয়নি চোট।

ব্রাজিলের সেই শিরোপা জয়ই আবার প্রশ্ন তুলে দিয়েছে নেইমারকে নিয়ে। তাঁকে কেন্দ্র করে খেলাটাই কি বড় সমস্যা হয়ে উঠেছিল ব্রাজিলের? ২০১৮ বিশ্বকাপে চোট কাটিয়ে ফেরা নেইমার প্রাণভোমরা হতে গিয়ে উল্টো অতি নাটুকেপনায় সবাইকে বীতশ্রদ্ধ করে তুলেছেন, দলের ভারসাম্যও নষ্ট হয়েছে তাঁর কারণে। ২০১৯ সালে তাঁর অনুপস্থিতিতে ব্রাজিল একটা দল হয়ে খেলেছে। শুধু একজন মহাতারকার ওপর ভর না করে দলে থাকা অন্য প্রতিভাদের কাজে লাগিয়ে কোচ তিতে এনে দিয়েছিলেন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য।

মাঠে তাঁর খেলা যেন শিল্পীর তুলির আঁচড়। কিন্তু ব্রাজিলের হয়ে যে তেমন কিছু জেতা হয়নি তাঁর।
ছবি: রয়টার্স

তাই আকারে-ইঙ্গিতে প্রশ্ন উঠেছিল নেইমারকে ছাড়াই কি তাহলে নামতে পারে না ব্রাজিল? সে প্রশ্নের জবাবটা দিতে হবে নেইমারকেই। দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সর্বশেষ তিন ম্যাচে করেছেন ৫ গোল। সত্যিকারের এক প্লে–মেকারের মতো সতীর্থদের দিয়েও গোল করাচ্ছেন। কিন্তু সে কথা টুর্নামেন্ট শুরু হলেই সবাই ভুলে যাবেন। ঘরের মাঠে কখনো কোপায় ব্যর্থ না হওয়া দলটি এবার অন্য কোনো ফল পেলেই দায়টা নেইমারের ওপরই যাবে।

ভুল কারণে বারবার সংবাদ শিরোনাম হওয়া ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের জন্য এবারের কোপা আমেরিকা হয়ে উঠেছে মহামূল্যবান এক রাজনৈতিক অস্ত্র। ফুটবলপাগল এক দেশকে সব সমস্যার কথা ভুলিয়ে দিতে এই ট্রফিকেই অস্ত্র মানছেন জইর বলসোনারো। জাতীয় দলের হয়ে কিছু না জেতার আক্ষেপ ভুলতে চাওয়া নেইমারও হয়তো মনেপ্রাণে এই কোপার জন্য প্রার্থনা করেছেন।

ব্রাজিলের আদালত সে প্রার্থনা পূরণ করেছে। টুর্নামেন্ট শুরু হতে না হতেই বিজয়ীর চওড়া হাসিটা মুখে সেঁটে নিয়েছেন বলসোনারো। কিন্তু নেইমারের সে উপায় নেই। ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আজ তাঁর যে অগ্নিপরীক্ষা শুরু হচ্ছে, ১০ জুলাই মারাকানায় ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে না পারলে সেখানে তিনি ব্যর্থ বলেই বিবেচিত হবেন।