পাকিস্তানকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল আফগানরা

২৮ থেকে অপরাজিত ১০২। ব্যাট হাতে ওদিকে এই পথটা পাড়ি দিচ্ছেন উমর আকমল, আর তাঁর নামের পাশে একটা করে রান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হয়তো আত্মদংশনে নীল হচ্ছেন সামিউল্ল্লাহ শেনোয়ারি।

ক্রিকেটের প্রথম পাঠ থেকে শুরু করে অনেক কিছুই আফগানদের হাতে ধরে শিখিয়েছে পাকিস্তান।
ক্যাচ ফেলে কী খেসারত দিতে হয়, সেই শিক্ষাটাও হয়ে গেল কাল। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে সুপার সিক্সের শেষ ম্যাচে হার্শেল গিবস যখন স্টিভ ওয়াহর ক্যাচ ফেলে দিলেন, তখনকার অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক নাকি বলেছিলেন, ‘বাছা, তুমি বিশ্বকাপটাই হাত থেকে ফেলে দিলে।’ ওই ম্যাচের সঙ্গে পাকিস্তান-আফগানিস্তান ম্যাচের কোনো তুলনাই হয় না। কিন্তু গিবসের সেদিনের অনুভূতি এখন কিছুটা হলেও তো বুঝবেন শেনোয়ারি। ৩৭তম ওভারে উমর আকমলের তুলে দেওয়া ক্যাচটা শেনোয়ারি ধরতে পারলে হয়তো অন্যভাবে লিখতে হতো এ ম্যাচের গল্প। পারেননি আফগান অলরাউন্ডার। আর পারেননি বলেই আফগান ক্রিকেটের রূপকথায় নতুন কোনো অধ্যায় লেখা হলো না কাল ফতুল্ল্লায়। আকমলের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি ব্যর্থ হতে দিলেন না পাকিস্তানি বোলার আর ফিল্ডাররাও।
যে উইকেটে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে তিন শ ছুঁই ছুঁই রান করেও কেঁপে উঠেছিল শ্রীলঙ্কা, যেখানে পরের ম্যাচে ২৭৯ রান করেও হেরেছে বাংলাদেশ, সেখানেই ২৪৮ রানের পুঁজি নিয়ে ৭২ রানের বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল পাকিস্তান।
টসে হেরে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তানকে শুরুতেই চাপে ফেলে দেয় আফগানিস্তান। উইকেট না হারালেও প্রথম ১০ ওভারে পাকিস্তানের স্কোরবোর্ডে জমা হয় মাত্র ৩৯ রান। আম্পায়ারের বদান্যতায় একবার ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন ওপেনার শারজিল খান। তবে আফগানদের বেশিক্ষণ ভোগাতে পারেননি তিনি। উদ্বোধনী জুটিতে ৫৫ রানের পর হঠাৎ করেই পতনের শুরু। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পরের ৫৩ রান যোগ করতেই ৫ উইকেট হারায় পাকিস্তানিরা। একসময় ১১৭ রানের মধ্যে ৬ উইকেট চলে গিয়েছিল মিসবাহ-উল-হকের দলের। ভগ্নদশা থেকে উদ্ধারের দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নেন আকমল। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংয়ে শেষ তিন জুটিতে ১৩১ রান যোগ করে পাকিস্তান। এর মধ্যে আকমলই করেন ৯১। শেষ ওভার শুরু হওয়ার সময় আকমলের রান ৮৫। সেই ওভারে দুটি চার আর একটি ছক্কায় ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পেয়ে যান, তাঁর দল পায় লড়ার মতো সংগ্রহ।
ব্যাট হাতে আফগানিস্তান অবশ্য বোলিংয়ের মতো অতটা আলো ছড়াতে পারেনি। শুরুর দিকে উইকেট হাতে রেখে খেলার চেষ্টা করে বেশ সফল হয়েছে তারা। কিন্তু সেই চেষ্টাটা একটু বেশি দীর্ঘায়িত হয়ে যাওয়ায় ম্যাচে আর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকল না। একসময় স্কোর ছিল ২ উইকেটে ১৩৯, কিন্তু ততক্ষণে ৩৭ ওভার চলছে। আস্কিং রানরেটের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার চেষ্টায় এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে আফগানিস্তান। শেষ পর্যন্ত ১৬ বল বাকি থাকতেই ইনিংস শেষ। ম্যাচে অনুমিত ফলই হয়েছে। তবে শুরুতে পাকিস্তানকে কাঁপিয়ে দিয়ে আফগানিস্তান এটুকু অন্তত বুঝিয়ে দিয়েছে, টুর্নামেন্টে টেস্ট খেলুড়ে বাকি তিন দল তাদেরকে হালকাভাবে নিলে সেটি হবে মরণ ভুল!

পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ২৪৮/৮
আফগানিস্তান: ৪৭.২ ওভারে ১৭৬
ফল: পাকিস্তান ৭২ রানে জয়ী