পাতানো ম্যাচের কলঙ্কমুক্ত লিগ

শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র মৌসুমে তিনটি শিরোপাই জিতল। কাকতালীয়ভাবে এই তিনটিতেই রানার্সআপ শেখ জামাল ধানমন্ডি!

ফেডারেশন ও স্বাধীনতা কাপের পর পেশাদার লিগ। কাল তুমুল বৃষ্টির মধ্যে লিগের শেষ ম্যাচে ব্রাদার্সের বিপক্ষে ২-১ গোলে জয় তুলে লিগ রানার্সআপ শেখ জামাল। জামালের গোলদাতা অরিওচুকু ও আলফ্রেড। ব্রাদার্সের অ্যান্ডারসন করেন ২-১। শেখ জামালের এই জয়ে আবাহনী শেষ পর্যন্ত তৃতীয়।

গত লিগে চ্যাম্পিয়ন থেকে ষষ্ঠ, এবার দ্বিতীয়। শেখ জামালের কোচ যোসেফ আপুসি রসিকতা করলেন, ‘ভালোই তো। মৌসুমে তিনটি টুর্নামেন্টেই দ্বিতীয়। তিনটি যোগ করলে একটা শিরোপা তো হয়েই যায় আমাদের!’

গত ১১ নভেম্বর যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ হলো প্রায় ছয় মাস পর। ক্লাবগুলো যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। লিগে ম্যাচ মোট ৭২টি, গড়ে মাসে ম্যাচ হয়েছে ১২টি করে। ছয় মাসে ১৬টি ম্যাচ খেলেছে ক্লাবগুলো। কচ্ছপগতির এক লিগ!

তার পরও এই লিগে তৃপ্তির জায়গা অনেক। খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তা সবার চোখেই লিগটা বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল। একসময় আবাহনী-মোহামেডানের বলয়ে বন্দী ফুটবলে এবার শিরোপা লড়াইয়ে ছিল অন্তত পাঁচটি দল। এবার চ্যাম্পিয়ন দল পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় শেষ পর্যন্ত। রানার্সআপ নির্ধারিত হয়েছে লিগের শেষ ম্যাচে।

সবচেয়ে বড় পরিতৃপ্তি অবশ্য অন্যখানে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিবছরই ওঠা পাতানো খেলার শোরগোল এবার শোনা যায়নি। পয়েন্ট আসলে কে কাকে ছাড়বে! অর্ধেকের বেশি দল শিরোপা লড়াইয়ে, বাকিরা অবনমন বাঁচানোর সংগ্রামে। আরামবাগকে পয়েন্ট ছাড়বে বিজেএমসি, এমন গুঞ্জনও শেষ পর্যন্ত অসত্য প্রমাণিত। ঘরোয়া ফুটবলে এটা অভাবনীয় এক মৌসুমই।

ধন্যবাদ দাবি করছে ক্লাবগুলো। বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে যেখানে পয়েন্ট দেওয়া বাংলাদেশের ফুটবলে এত দিন মামুলি ব্যাপার ছিল, এবার নিজের চরকায় তেল দিতেই ব্যস্ত দেখা গেছে ক্লাবগুলোকে। বাংলাদেশের ফুটবলের জন্যও এটা বিরাট এক ইতিবাচক পরিবর্তন বটে।

গোপালগঞ্জে ভেন্যু হওয়া এই লিগের আরেকটি ভালো দিক। দলগুলোও ভালো মানের বিদেশি খেলোয়াড় আনার দিকে ঝুঁকছে। শেখ রাসেলের হাইতিয়ান প্লে-মেকার সনি নর্দে আলো ছড়িয়েছেন লিগে। সনির আগমন এই লিগকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। চাইলে এটাকেও দিনবদলের ইঙ্গিত বলা যায়। গত কয়েক বছরের মতো এবারও ছিল বিদেশিদের দাপট। শীর্ষ গোলদাতাদের তালিকায় চোখ বোলালেই তা পরিষ্কার। তবে এমিলি-জাহিদদের মতো প্রথম সারির খেলোয়াড়েরা তুলনামূলক ভালো খেলেছেন এই লিগে। নজর কেড়েছেন কিছু নবীনও।

দীর্ঘদিন ধরে চলেছে বলেই কিনা, কোনো দলই ধারাবাহিকভাবে টানা ভালো ফুটবল খেলতে পারেনি। এমনিতে মাঠে মারামারি কমেছে। তবে রেফারি নিগ্রহ বন্ধ হয়নি। এ জাতীয় নিন্দনীয় ঘটনা এই লিগের গায়েও কালি ছিটিয়েছে। সবচেয়ে বড় অতৃপ্তির জায়গা অবশ্য রয়েই গেছে। ঢাকার বাইরে তাও যা দর্শক হয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে গ্যালারির সামান্যই ভরেছে।

একটা ব্যাপার আলাদা করে বলতেই হচ্ছে। এবার হ্যাটট্রিক কমে গেছে অনেক। গতবার লিগে হ্যাটট্রিক হয়েছিল ১১টি। এই লিগে মাত্র একটি (মোহামেডানের মরিসন)। এর একটা অর্থ হতে পারে, খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের ঘাটতিটা যেন আরও তীব্র।

ফুটবল দলীয় খেলা, কিন্তু ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের আবেদন তো ফুরিয়ে যায়নি। আপাতদৃষ্টিতে পাতানো ম্যাচমুক্ত লিগে সেই হাহাকার থাকলই!

সর্বোচ্চ গোলদাতা

১২ ওসেই মরিসন (মোহামেডান)।

৯ ইসমাইল বাঙ্গুরা (বিজেএমসি)।

৭ সানডে সিজোবা  (শেখ জামাল), শাখাওয়াত রনি (আবাহনী)।

৬ কিংসলে চিগোজি (ব্রাদার্স), সনি নর্দে (শেখ রাসেল), এমিলি (শেখ রাসেল), জাহিদ (শেখ রাসেল)।

৪ তকলিচ (বিজেএমসি), এলিটা কিংসলে (বিজেএমসি) মাইক ওতোজারেরি (শেখ জামাল), অ্যান্থনি (ফেনী সকার)।