ফ্রান্স আর স্পেনকেই এগিয়ে রাখছি

জমে উঠেছে ইউরো ২০২০-এর লড়াই। নকআউট পর্বের জমজমাট লড়াইয়ে বাংলাদেশ থেকেই চোখ রাখছেন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কোচ মারুফুল হক। সেই দেখা থেকেই প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য তাঁর বিশ্লেষণ—

মারুফুল হক, বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কোচ

ইউরোতে আজকের ম্যাচ দুটি দেখতে মুখিয়ে আছি। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে এগিয়ে রাখব বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে। ফ্রান্স ৭০, সুইজারল্যান্ড ৩০। ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে ফেবারিট সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেনই। তবে ম্যাচটি অতিরিক্ত সময়ে গড়াতে পারে। এমনকি টাইব্রেকারে গেলেও অবাক হব না।

ফ্রান্স ৪-৩-৩ ছকে খেলে আসছে। আজ পাভারকে দলে রাখতে পারেন ফরাসি কোচ। ফ্রান্সের খেলার ছক অনুযায়ী করিম বেনজামা ‘নাম্বার নাইন’। সে ক্ষেত্রে গ্রিজমান যখন ভেতরে চলে আসে এবং কান্তেদের সঙ্গে যোগ দেয়, তখন একটা খালি জায়গা তৈরি হয় অ্যাটাকিং থার্ডে। করিম বেনজামা ওই জায়গাটায় চলে গেলে আক্রমণের সুযোগ অনেক ক্ষেত্রে কমে যায় ফ্রান্সের। এ অবস্থায় পাভার দলে এলে রাইট উইং পজিশনে খেলাটা ভালো হবে তাদের।

ফ্রান্স কম বল পজেশন রেখেই খেলছে। কারণ, দলটির সব খেলোয়াড়ই দ্রুতগতির। রক্ষণ থেকে আক্রমণে দ্রুত যায়। বল পজেশন রাখার চেয়ে ডিরেক্ট ফুটবলই বেশি পছন্দ ফ্রান্সের। ওদিকে সুইজারল্যান্ড পজেশনাল ফুটবলই বেশি খেলেছে। ৩-৪-৩ ছকে আজ সুইস কোচ এমবাপ্পে এবং পাভারকে থামাতে দুই সাইডব্যাক ও সেন্টারব্যাককে একটু বেশিই কাজে লাগাতে চাইবেন।

সুইজারল্যান্ড ১৯৫৪ সালের পর বিশ্বকাপ বা ইউরোর শেষ আটে খেলতে পারেনি। সে ক্ষেত্রে তাদের অনভিজ্ঞতার কথা আসতে পারে। এটা অবশ্য কোনো ব্যাপারই নয়। সুইসদের সবচেয়ে বড় তারকা শাকিরি খেলাটা তৈরি করে। এমবাপ্পে বা গ্রিজমানদের পর্যায়ের খেলোয়াড় হয়তো নয় সে। তবু ম্যাচ ঘোরাতে পারে। তাই শাকিরিকে থামাতে সম্ভবত কান্তেকে আজ নিচের দিকে বেশি রাখতে পারেন দিদিয়ের দেশম।

এমবাপ্পে গতিময় খেলোয়াড়। ওর গতিটাই ফ্রান্সের সম্পদ। এখন পর্যন্ত গোল না পেলেও সে সুযোগ তৈরি করছে। চূড়ান্ত পাস দিচ্ছে। গত বিশ্বকাপে ফ্রান্স দলে ‘নাম্বার নাইন’ ছিল জিরু, সে–ও সুযোগ তৈরি করত। যা থেকে গোল করেছে এমবাপ্পে। তবে এই ফ্রান্স দলে প্রথাগত স্ট্রাইকার করিম বেনজামা পুরো অঞ্চলটা একাই কাভার করে। ফলে গ্রিজমান ও পগবা মাঝমাঠে চলে আসতে পারে। এটা ভালো দিক।

স্পেন-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ পরশু পর্যন্ত ভাবছিলাম ৫০-৫০ হবে। কিন্তু ক্রোয়েশিয়া একটু বিপাকেই পড়ে গেছে। দলটির অন্যতম খেলোয়াড় পেরিসিচ কোভিড পজিটিভ। সে রং ফুটের উইঙ্গার। বাঁ পায়ের হলেও রাইট উইং দিয়ে দারুণ খেলে সে। ফলে পেরিসিচ না থাকলে ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণে বৈচিত্র্য কমে যেতে পারে। ওর জায়গায় রেভিচ এলেও সে পেরিসিচের মতো নয়।

বলা হচ্ছে, স্পেনের মূল স্ট্রাইকার মোরাতার গোল মাত্র একটি। মোরাতা অনেক সময়ই নিচের দিকে চলে আসে। তবে এটা ঠিক হয়ে যাবে। সুযোগ তৈরি করতে পারলে স্পেনের যে কেউ গোল পাবে। লরেন্তোকে আজ রাইটব্যাকে দেখার সম্ভাবনা আছে। ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে স্পেন চাইবে রক্ষণটা আরও জমাট রাখতে।

দুই দলেরই মাঝমাঠ ভালো। স্পেনের একাদশে বুসকেতস শুরু করতে পারে এই ম্যাচ। তবে ক্রোয়েশিয়ার মাঝমাঠ বেশি অভিজ্ঞ। পাশাপাশি বলব, স্পেনের পাসিং ফুটবলে আরও বৈচিত্র্য দরকার। ক্রোয়েশিয়া ছোট ছোট পাসের মতো লম্বা পাসও ভালো খেলে। দলটির মূল খেলোয়াড় লুকা মদরিচ স্পেনে খেলে বলে স্প্যানিশদের মুখোমুখি হওয়া তার জন্য সুবিধাজনক ভাবতে পারেন অনেকে। তবে এই যুগে কে কোথায় খেলে, সেটা কোনো ব্যাপার নয়। সবার সম্পর্কেই সবার জানা আছে।