বর্ণবাদ ইংলিশ ক্রিকেটের গভীরেই, অভিযোগ রফিকের

কথা বলতে গিয়ে এক সময় কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন আজিম রফিকছবি: এএফপি

অশ্বেতাঙ্গ ক্রিকেটারদের ‘ভিন্ন’ নামে ডাকা, এশিয়ান ক্রিকেটারদের টয়লেটের পাশে বসতে বলা, মুখে দাড়ি আছে, এমন কাউকে দেখলে তাঁকে ‘তোমার বাবা কি না’ জিজ্ঞাসা করা— ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবে এসব বর্ণবৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ এনেছেন ইয়র্কশায়ার ও ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সাবেক অধিনায়ক আজিম রফিক। মঙ্গলবার ‘ডিজিটাল, কালচার, মিডিয়া ও স্পোর্ট সিলেক্ট’ নামক যুক্তরাজ্যের সাংসদদের এক কমিটির সামনে এসব অভিযোগ তুলেছেন রফিক। নিজের স্থানীয় এক ক্লাবে তাঁকে জোর করে মদ খাওয়ানোর অভিযোগও এনেছেন তিনি।

পাকিস্তান থেকে এসে বার্নসলিতে বেড়ে ওঠা রফিক স্বপ্ন দেখতেন ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার। তিনি বলেছেন, বর্ণবাদের কাছে নিজের ক্যারিয়ারটা বিসর্জন দিতে হয়েছে তাঁকে। ২০০৫ সালের অ্যাশেজ জেতা মাইকেল ভন, ম্যাথু হগার্ডদের সঙ্গে একই ড্রেসিংরুমে থাকাটা ছিল রফিকের জন্য স্বপ্নপূরণের মতো ব্যাপার। তবে সেটি দ্রুতই পরিণত হয়েছিল ‘অনাহুত হয়ে পড়ার’ অনুভূতিতে।

সংসদীয় কমিটির সামনে আজিম রফিক
ছবি: এএফপি

‘টয়লেটের পাশে গিয়ে বসো তোমরা’, এমন মন্তব্যের শিকার হতেন বলে জানিয়েছেন রফিক। ‘তোমাদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, কিছু করা দরকার’, সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক ভন এশিয়ান ক্রিকেটারদের উদ্দেশে এমন বলেছিলেন বলে অভিযোগ আগেই করেছিলেন রফিক। তবে সে অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন ভন। তবে সাংসদদের রফিক বলেছেন, ‘সবকিছু শুধু মাইকেলকে (ভন) ঘিরে, সেটি যেন মনে না করা হয়। এটা অনেক দিন আগের ঘটনা। হয়তো মাইকেল এটা ভুলে গেছে। কারণ, এটার কোনো মানে নেই তার কাছে।’

তবে ভন এমনটা বলেছেন, এ ব্যাপারে রফিকের সঙ্গে একমত হয়েছেন সাবেক পাকিস্তান পেসার রানা নাভিদ-উল-হাসান ও এখনকার ইংল্যান্ড জাতীয় দলের লেগ স্পিনার আদিল রশিদ। তাঁরা সবাই সে সময় একসঙ্গে ইয়র্কশায়ারে খেলতেন। অবশ্য ভন এসব অস্বীকার করলেও সাবেক ইংল্যান্ড পেসার হগার্ড তাঁকে ফোন করে ক্ষমা চেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন রফিক।

কমিটির সামনে হাজিরা দিতে যাচ্ছেন ইয়র্কশায়ারের সাবেক চেয়ারম্যান রজার হাটন
ছবি: এএফপি

রফিক এর আগে অভিযোগ করেছিলেন ইংল্যান্ডের হয়ে ২৩টি টেস্ট খেলা গ্যারি ব্যালান্সের বিরুদ্ধেও। ভারতীয় ক্রিকেটার চেতেশ্বর পূজারাকে ইয়র্কশায়ারে খেলার সময় ডাকা হতো ‘স্টিভ’ নামে। এ ব্যাপার তখন শুরু করেছিলেন সে সময় ইয়র্কশায়ারে খেলা জ্যাক ব্রুক। কারণ, পূজারার নামের প্রথম অংশটা উচ্চারণ করতে পারতেন না তিনি। একইভাবে অশ্বেতাঙ্গ সব ক্রিকেটারকেই ‘কেভিন’ নামে ডাকতেন ব্যালান্স, বলেছেন রফিক। একজন ইংলিশ ক্রিকেটারকে ‘কালো কুকুর’ নাম দেওয়া হয়েছিল বলে জানান রফিক। এমনকি ব্যালান্সের বন্ধু অ্যালেক্স হেলস তাঁর কুকুরের নাম রেখেছিলেন ‘কেভিন’। কারণ, কুকুরটির গায়ের রং ছিল কালো।

এসেছিলেন ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী টম হ্যারিসনও
ছবি: এএফপি

সম্প্রতি রফিকের অভিযোগের ব্যাপারে নিজের মত জানিয়েছেন ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক ও ইয়র্কশায়ার খেলা জো রুটও। তবে বর্ণবিদ্বেষমূলক কোনো কিছু ঘটেছে বলে মনে করেন না তিনি। রফিক এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘হয়তো জো’র এটা মনে নেই। এটিই প্রমাণ করে, কতটা স্বাভাবিক ছিল ঘটনাটা। তার মতো একজন ভালো মানুষও এটির মূল ব্যাপারটা ধরতে পারেনি। সমস্যাটা পরিবেশে, সমস্যাটা পুরোপুরি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রোথিত।’

একসময় ব্যালান্সের সঙ্গে একই বাড়িতে থেকেও রুট কিছুই জানেন না, এমন তথ্য তাঁকে আহত করেছে বলেও উল্লেখ করেছেন রফিক, ‘দেশজুড়েই সমস্যা ছড়িয়ে আছে। একাডেমি বলেন বা পেশাদার পর্যায়— সবখানেই সমস্যা আছে’, এমনটাই বলেছেন রফিক।