বাংলাদেশের সবচেয়ে লজ্জার টেস্ট হার? পাঠকদের কী মত?

কাল দুপুর পর্যন্ত কেউ ভাবতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে শেষ পর্যন্ত হেরে যাবে বাংলাদেশ। কাইল মেয়ার্স প্রতিরোধ গড়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন এনক্রুমা বোনার আর জশুয়া দা সিলভা। স্পিনবান্ধব উইকেটে সাকিববিহীন বাংলাদেশের স্পিন-আক্রমণকে নখদন্তহীন দেখাচ্ছিল, খুব সহজেই খেলে যাচ্ছিলেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা—সবই ঠিক আছে। কিন্তু হারের চিন্তা দূরতম কল্পনাতেও আসেনি বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। উপমহাদেশের মাটিতে চতুর্থ ইনিংসের দলগুলোর রেকর্ড বারবারই ভরসা জুগিয়ে যাচ্ছিল সবাইকে। উইকেট না ফেলতে পারলে শেষ পর্যন্ত টেস্টটা ড্র হবে—সবার ভাবনা ছিল এমনই।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা বাংলাদেশ জেতেনি, হয়নি ড্রও। হেরেই গেছে বাংলাদেশ। কাইল মেয়ার্স ইতিহাস গড়েই ম্যাচটা কেড়ে নিয়েছেন বাংলাদেশের কাছ থেকে। টেস্টে কেবল ষষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকেই ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। চতুর্থ ইনিংসে অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরি করা প্রথম ক্রিকেটার তিনি। বোনারও খেলেছেন ৮৬ রানের ইনিংস। সবচেয়ে বড় কথা, তৃতীয় সেশনে মেয়ার্স আর জশুয়া দা সিলভা রীতিমতো টি-টোয়েন্টি ধাঁচে খেলেই ম্যাচটা বের করে নিয়েছেন।

দিন শেষে হতভম্ব ক্রিকেটপ্রেমীদের বেশ কিছুটা সময়ই লেগেছে হারের তেতো স্বাদটা হজম করতে। খেলায় হারজিত থাকেই। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির দলের বিরুদ্ধে ৩৯৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েও হারটা মেনে নিতে পারছেন না কেউই। হ্যাঁ, ম্যাচের মধ্যে দুর্ভাগ্যের শিকার হতে হয়েছে বাংলাদেশকে। কুঁচকির চোটের কারণে হারাতে হয়েছে সাকিব আল হাসানকে। এক পেসার আর চার স্পিনারের পরিকল্পনায় দল সাজিয়ে সবচেয়ে সেরা স্পিনারকেই হারিয়ে ফেলতে হয়েছে। তারপরও স্পিনের সামনে চিরদিন দুর্বল ক্যারিবীয় দলের বিপক্ষে বাকি তিন স্পিনারই যথেষ্ট হবেন না—এটা কেউই ভাবতে পারেননি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নয়, ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষেই সবচেয়ে ‘লজ্জা’র হার দেখেছিল বাংলাদেশ।
ছবি: প্রথম আলো

ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের শক্তিমত্তাও একটা বড় ব্যাপার। বাংলাদেশে আসেননি দলের সেরা ক্রিকেটাররা। অধিনায়ক জেসন হোল্ডার নেই। আসেননি আরেক অলরাউন্ডার রোস্টন চেজও। মূল ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শাই হোপ, ব্রুকস ছিলেন না। উইকেটরক্ষক শেন ডাউরিচও বাংলাদেশ সফরে আসেননি। এমন ক্ষীণ শক্তির দলের বিপক্ষে জয়ের দ্বারপ্রান্তে থেকেও হারটা নিশ্চিত করেই অনেক দিন পীড়া দেবে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের।

অনেকের চোখেই হারটা লজ্জার। কিন্তু বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে ‘লজ্জা’ তো আছে অনেকগুলোই। বড় দলগুলোর বিপক্ষে দাঁড়াতে না পারার ব্যাপারটা লজ্জার। কিন্তু কাছাকাছি মানের বা শক্তিতে বাংলাদেশের চেয়েও দুর্বল দলের বিপক্ষে টেস্ট হারের অভিজ্ঞতা যেন অনেক বেশি দুঃসহ। গত এক দশকে এমন দুঃসহ অভিজ্ঞতা আছে বেশ কয়েকটিই। এই সময় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুবার (একবার ঘরের মাঠে) আর টেস্টের নতুন সদস্য আফগানিস্তানের বিপক্ষেও ঘরের মাঠে হারের অভিজ্ঞতা হয়েছে।

কাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য হারের পর সেই হারগুলোও নতুন করে আলোচনায় এসেছে। প্রথম আলোর অনলাইনে ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির এই দলের বিপক্ষে হারটাই এখন পর্যন্ত টেস্টে জয়ের প্রত্যাশা জাগিয়ে সবচেয়ে লজ্জার হার কি না! পাঠকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ অবশ্য মত দিয়েছেন—২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারটিই এখন পর্যন্ত জয়ের প্রত্যাশার বিপরীতে সবচেয়ে লজ্জাজনক হার।

পাঠকদের কাছে প্রশ্নটিতে গতকালের হার ছাড়াও তাদের কাছে বিকল্প ছিল আরও তিনটি হার—ক) ২০১১ সালে হারারেতে ছয় বছরের নির্বাসন কাটিয়ে টেস্টে ফেরা জিম্বাবুয়ের কাছে হার। খ) প্রতিপক্ষের মাঠে প্রথম টেস্ট খেলা আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২০১৯ সালের হার। গ) স্পিনবান্ধব উইকেটে ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হার। এই চারটি উত্তরের মধ্যে ৭৬ শতাংশ পাঠক বলছেন, ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে লজ্জার টেস্ট হার। ২২ শতাংশ পাঠকের রায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ হারটিতে। তবে পাঠকদের বড় অংশই ২০১৮ সালে সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারটি এড়িয়ে গেছেন। মাত্র ১ শতাংশ মত পড়েছে এই টেস্টে। ২০১১ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই হারটিও লজ্জার মনে করেছেন মাত্র ১ শতাংশ পাঠক।
এতে অংশ নিয়েছেন ১ হাজার ৬৩৩ জন পাঠক। এর মধ্যে ১ হাজার ২৪১ জনই ভোট দিয়েছেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারটির পক্ষে, গতকালের হারের পক্ষে ভোট পড়েছে ৩৫৯ জন পাঠকের। ১৬ জন করে ভোট দিয়েছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১১ সালের হারারের হারটি আর ২০১৮ সালের সিলেটের হারটির পক্ষে।

চোটের দুর্ভাগ্য পড়ে একাদশে থেকেও বাইরে বসে দলের হার দেখতে হলো সাকিবকে।
ছবি: প্রথম আলো

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২২৪ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে আফগানদের ৩৪২ রানের জবাবে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ইনিংসে তুলতে পেরেছিল ২০৫ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে আফগানিস্তান ২৬০ রান করার পর বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ৩৯৭ রানের। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ করতে পেরেছিল মাত্র ১৭৩ রান। রশিদ খান দুই ইনিংস মিলে ১১ উইকেট নিয়ে একাই ধসিয়ে দেন বাংলাদেশকে।